Offbeat Destinations in West Bengal

বড়দিন মানেই কেক খাওয়া আর ঘোরা, হইহই করতে যাবেন কোথায়? রইল কাছেপিঠে বেড়ানোর ৫ ঠিকানা

বড়দিনে ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানায় বড্ড ভিড়। তার চেয়ে বরং ঘুরে নিতে পারেন এমন জায়গায়, যার নাম শোনা হলেও ঘুরে দেখা হয়নি। কাছেপিঠে এমনই ৫ ঠিকানা জেনে নিন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:০৩
বড়দিন মানে ঘোরা, হুল্লোড়, চড়ুইভাতি।  ২৫শে ডিসেম্বর ভিড় এড়িয়ে যাবেন কোথায়?

বড়দিন মানে ঘোরা, হুল্লোড়, চড়ুইভাতি। ২৫শে ডিসেম্বর ভিড় এড়িয়ে যাবেন কোথায়? ছবি: সংগৃহীত।

বড়দিনকে সেই কবেই আপন করে নিয়েছেন বঙ্গবাসী। বড়দিন মানেই ছুটির দিন। শীতের হিমেল পরশ আর রোদের ওমটুকু গায়ে মেখে বেড়িয়ে পড়া। নিয়ম করে কেক খাওয়া। সঙ্গে শীতের কমলালেবু, মোয়া থাকতেই হবে।

Advertisement

যদিও বড়দিন উদ্‌যাপনের স্বাদে-চরিত্রে কিঞ্চিৎ বদল এসেছে। বিশ্বায়নের ছোঁয়া খাবার থেকে পোশাকে। ছুটির দিনে বঙ্গবাসী এখন ঘরে পার্টি করেন। ক্যাফে-রেস্তরাঁয় ঢুঁ মারেন। তবে এর পরেও যা পাল্টায়নি, তা হল সকলে মিলে বেরিয়ে পড়া। পিকনিক, ঘোরা।

সেই কারণে এখনও বড়দিনের ছুটিতে আলিপুর চিড়িয়াখানা, প্রিন্সেপ ঘাট, ইকোপার্ক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, সায়েন্স সিটিতে ভিড় উপচে পড়ে। তবে কি শহর ছাড়িয়ে দূরে কোথাও পাড়ি দেবেন, যেখানে মিলবে প্রকৃতির সান্নিধ্য, খানিক ঘোরাও হবে, গ্রামীণ পরিবেশ উপভোগ করা হবে? এমনই ৫ জায়গার সন্ধান রইল। তারই কোনও একটি বেছে নিন।

পিয়ালি

পিয়ালিতে পাখিদের ওড়াউড়ি। ভিড় করে পরিযায়ীর দলও।

পিয়ালিতে পাখিদের ওড়াউড়ি। ভিড় করে পরিযায়ীর দলও। ছবি:সংগৃহীত।

শহুরে বড়দিনের মেজাজ নয়, বরং প্রকৃতির সান্নিধ্যই যদি শীতের ছুটি উদ্‌যাপনের মূল কারণ হয়, তা হলে চলুন পিয়ালি। ভোর ভোর বেরোলে, রাতেই ফিরতে পারবেন। মাতলার বুকে পিয়ালির মিশে যাওয়া, ম্যানগ্রোভ, প্রজাপতির ওড়াউড়ি একরাশ ভাললাগা এনে দেবে। অনেকে একে ‘সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার’ও বলেন। শহর ছাড়িয়ে গ্রামের পথ ধরে গাড়ি ছুটলেই বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। পিয়ালি দ্বীপে যাওয়ার পথে, বাঁকে বাঁকে উঁকি দেয় নদী। শীতকালে পিয়ালির আকর্ষণ অন্য রকম। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি এসে ভিড় করে নদীতে। মাতলা ও পিয়ালির মোহনা, নদীর চরে পাখির ঘোরাঘুরি, ম্যানগ্রোভের রূপ নিমেষেই দূর করে দেয় ক্লান্তি। তবে এই জায়গা তাঁদেরই ভাল লাগবে, যাঁরা পক্ষীপ্রেমী। যাঁরা প্রকৃতির নির্জনতায় শান্তি খুঁজে পান। গ্রামের মানুষের আতিথেয়তা ভুলিয়ে দেবে শহুরে জটিলতা। চাইলে পিয়ালির বুকে নৌকায় ভেসে পড়তে পারেন। শব্দ, হল্লা না করে, নীরবে প্রকৃতিকে অনুভবের জন্যই এই স্থান।

কী ভাবে যাবেন

শিয়ালদহ থেকে সকালবেলা জয়নগরের দিকের লোকাল ট্রেন ধরে নেমে পড়ুন দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে। সেখান থেকে অটোতে কেল্লা। কেল্লা থেকে হাঁটাপথে প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে করতেই পৌঁছোনো যাবে পিয়ালির অলিন্দে।

চুঁচুড়া-চন্দননগর

ফরাসিদের এক সময়ের উপনিবেশ চন্দননগর ভাল লাগার অন্যতম কারণ অবশ্যই এখানকার সৌন্দর্য, পরিচ্ছন্নতা। জগদ্ধাত্রী পুজো ফরাসডাঙার মূল আকর্ষণ হলেও, শীতের শহরও কম উপভোগ্য নয়। আধুনিকতার মোড়ক এখনও পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারেনি প্রাচীন স্থাপত্যের ঐতিহ্যকে। এই শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গাটি হল স্ট্র্যান্ড।

ভাগীরথী নদী যেখানে বাঁক নিয়েছে, সেখানেই রয়েছে স্ট্র্যান্ড। নদীর পারে বাঁধানো চত্বর। কোর্ট, ইনস্টিটিউট, কলেজ, স্কুল, মিউজ়িয়াম নিয়ে তার বিস্তৃতি। এক সময় এই শহরেই আনাগোনা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-সহ অনেকের। স্ট্র্যান্ড ধরে পায়ে পায়ে হাঁটলে ডান পাশে চোখে পড়বে গির্জা, সেক্রেড হার্ট চার্চ। প্রতি বছর ক্রিসমাসে চন্দননগরের গির্জাকে কেন্দ্র করেই স্ট্র্যান্ড সেজে ওঠে আলোর মালায়।

ফুটপাথ ধরে হাঁটলে পৌঁছোতে পারেন এক পুরনো স্থাপত্যের কাছে। নাম তার পাতালবাড়ি। সেই সময়ের নির্মাণশৈলী কতটা আশ্চর্যের হতে পারে, এই বাড়ি তার প্রমাণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির সর্বনিম্ন তলাটি ভাগীরথীতে নিমজ্জিত। এই বাড়িতে এসেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও।

স্ট্র্যান্ডের গা ঘেঁষেই রয়েছে ফরাসি প্রশাসক দুপ্লের নামাঙ্কিত মিউজ়িয়াম। দুপ্লে প্যালেস বলে সেটি পরিচিত। দুপ্লের ব্যবহৃত আসবাবের পাশাপাশি বহু অ্যান্টিকেরই দেখা মিলবে এখানে।

চন্দনগর ঘুরে চলে যেতে পারেন চুঁচুড়া। ট্রেনে একটি স্টেশন। যাওয়া যাবে টোটো বা অটো বুক করেও। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে হুগলির চুঁচুড়ায় গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড সংলগ্ন খাদিনা মোড় ও তালডাঙার মাঝে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে এক ওলন্দাজ সুন্দরী সুসানা আন্না মারিয়ার স্মৃতিসৌধ! শোনা যায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক রাস্কিন বন্ড এই কাহিনিকেই সাহিত্যরূপ দিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, ‘সুসানাজ় সেভেন হাজ়ব্যান্ডস’ । পরবর্তী কালে সেই কাহিনি অবলম্বন করেই ‘সাত খুন মাফ’ নামে বলিউডে সিনেমা তৈরি হয়েছিল। এই সবের কতটা সত্যি-মিথ্যে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, ডাচ গোরস্থান, স্থাপত্য, স্মৃতিসৌধ নজর কাড়বে।

চঁচুড়ায় ডাচদের গোরস্থান, স্মৃতিসৌধ ঘুরে নিতে পারেন।

চঁচুড়ায় ডাচদের গোরস্থান, স্মৃতিসৌধ ঘুরে নিতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখার লোকাল ট্রেন ধরে চলুন চন্দননগর স্টেশন। সেখান থেকে টোটো করে ঘুরে নিন আশপাশ। অটো বুক করেও ঘোরা যায়। কলকাতা হোক বা যে কোনও স্থান, দিল্লি রোড এবং জিটি রোড ধরেও চন্দননগর আসতে পারেন।

আন্দুলপোতা

ঘুরে নিতে পারেন আন্দুলপোতা।

ঘুরে নিতে পারেন আন্দুলপোতা। ছবি: সংগৃহীত।

নিখাদ প্রকৃতির সঙ্গ চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আন্দুলপোতা। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা মহকুমার ছোট্ট গ্রামটিতে রয়েছে দিগন্তবিস্তৃত মেছো ভেড়ি। জলাশয়ের পাড়ে মাথা উঁচু করে থাকা নারকেল গাছ বাড়তি সৌন্দর্য জুড়েছে। কলকাতা থেকে এক দিনেই ঘুরে আসতে পারেন। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের তালিকায় না পড়লেও পড়ন্ত বিকেলে এখানকার সৌন্দর্য মনভোলানো। ভেড়ির মধ্যে দিয়েই চলে গিয়েছে পিচের আঁকাবাঁকা পথ। বাইক, টোটো দিব্যি চলে সেখানে। আকাশে রঙের খেলা চললে সৌন্দর্য হয়ে যায় দ্বিগুণ। ভেড়িতে যখন মাছকে খাওয়ানো হয়, সে-ও দেখার মতো। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ খাবার খাওয়ার জন্য জলে ভেসে উঠেছে। খাবার পড়তেই তা নিমেষে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

জায়গাটিও নির্জন। শীতের রোদ গায়ে মেখে জলাশয়ের পাড়ে বসে হাওয়া খেতে খেতে দিব্যি সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। যে কোনও মরসুমেই সূর্য ডোবার সময় এই জায়গার রূপ পাল্টে যায়। সূর্যের রক্তিম আভা পড়ে জলেও। নিজস্বী তোলার জন্যও এই জায়গা আদর্শ।

কী ভাবে যাবেন

শিয়ালদহ স্টেশন থেকে হাসনাবাদ লোকালে যেতে হবে চাঁপাপুকুর। সেখান থেকে টোটো করে আন্দুলপোতার মাছের ভেড়ি এলাকায় চলে যেতে পারবেন। বাইকে বা গাড়িতেও আসা যায়। বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে গেলে কলকাতা থেকে আন্দুলপোতার দূরত্ব পড়বে ৬৭ কিলোমিটার। টাকি রোড ধরে গেলে খোলাপোতা বাজার হয়ে চাঁপাপুকুর স্টেশনের লেভেল ক্রসিং পার করতে হবে। তার পর রাজাপুর বাজার হয়ে পৌঁছতে হবে আন্দুলপোতায়।

গড় মান্দারন

ঘুরে আসতে পারেন গড় মান্দারনও।

ঘুরে আসতে পারেন গড় মান্দারনও। ছবি: সংগৃহীত।

সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের পটভূমি ছিল যে স্থান, সেই গড় মান্দারনও ঘুরে আসতে পারেন এক বার। হুগলির আরামবাগে রয়েছে এই স্থান। গ্রামের নাম মান্দারন। সেখানেই রয়েছে গড়। এখন অবশ্য তার ধ্বংসাবেশষটুকুই উঁকি দেয়। পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল এখানকার গাছগাছালি ঘেরা পিকনিক স্পট। মূলত শীতের দিনেই সেই ভিড় থাকে। বর্ষায় এই জায়গা হয়ে ওঠে ঘন সবুজ। অনেকখানি অঞ্চল জুড়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। কোথাও যত্নে সাজানো বাগান, কোথাও নিজের মতো বেড়ে ওঠা জঙ্গল। সব মিলিয়ে গড় মান্দারন হতে পারে এক দিনের ছুটির গন্তব্য। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন রামকৃষ্ণ-সারদা মায়ের জন্মস্থান কামারপুকুর এবং জয়রামবাটি।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে আরামবাগ বা গোঘাট লোকাল ধরে আসতে পারেন। আরামবাগ ও গোঘাট, দুই স্টেশন থেকেই গড় মান্দারন যাওয়া যায়। গোঘাট থেকে দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতেও আসতে পারেন।

গোপালপুর

ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপালপুর থেকে।

ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপালপুর থেকে। ছবি:সংগৃহীত।

না, ওড়িশা যেতে হবে না। শাল, শিমুল, পিয়ালে ঘেরা গোপালপুর আছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। কলকাতা থেকে গোপালপুরের দূরত্ব সড়কপথে কমবেশি ১৩৫ কিলোমিটার। মেদিনীপুর শহরের গান্ধী মোড় হয়ে গেলে দেখা মিলবে গোপালপুর বায়োডাভার্সিটি পার্কের। সাজানো-গোছানো উদ্যান। রয়েছে জলাশয়। পার্ক ঘুরে গাড়ি বা টোটো ভাড়া করে বেরিয়ে পড়া যায় আশপাশের কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখতে। মুড়াকাটার কাছাকাছি রয়েছে কুন্দ্রামাতার থান। এ ছাড়াও এখান থেকে যেতে পারেন কংসাবতীর জোড়া ব্রিজ দেখতে। নদীর বুকে দু’টি ব্রিজ পাশাপাশি। দেখে নিতে পারেন জমিদার বাঁধ। গাছগাছালি ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে, জলাধারের স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে খানিকটা সময় দিব্যি কেটে যাবে সেখানে। আর আছে লালগড়ের জঙ্গল। হাতে সময় থাকলে চলে যেতে পারেন কর্ণগড়ে। মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে এমনই একটি গ্রাম কর্ণগড়, যা রানি শিরোমণির নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাস বহন করে চলেছে।

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে গেলে নামতে হবে মেদিনীপুর স্টেশনে। সেখান থেকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেলে দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মতো। ধেরুয়া, মুরাকাটা হয়েও যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে গাড়িতে এলে কোলাঘাট পার করে ডেবরা টোল প্লাজ়া হয়ে কংসাবতীর ব্রিজ পেরিয়ে আসতে পারেন। ট্রাফিক মোড় হয়ে গোপালপুর।

Advertisement
আরও পড়ুন