SIR in West Bengal

হেনস্থার কারণে পিতার মৃত্যু! জ্ঞানেশ ও মনোজের বিরুদ্ধে পুরুলিয়ার থানায় অভিযোগ, জবাব দিল কমিশনও

সোমবার পুরুলিয়ার পাড়া থানা এলাকায় দুর্জন মাঝি নামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধ এসআইআর-এর শুনানির জন্য বা়ড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। পরে বাড়ির কিছু দূরে রেললাইন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, দুশ্চিন্তার কারণেই আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:১২
Police complaint against CEC Gyanesh Kumar and West Bengal CEO Manoj Agarwal for alleged harrasment which lead to death of a old aged man in Purulia

দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এসআইআর-এর শুনানিতে হেনস্থার কারণে আত্মহত্যা করেছেন বৃদ্ধ পিতা। এমন অভিযোগ তুলে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন পুত্র। সোমবার পুরুলিয়ার পাড়া থানা এলাকায় দুর্জন মাঝি নামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধ এসআইআর-এর শুনানির জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। পরে বাড়ির কিছু দূরে রেললাইন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, দুশ্চিন্তার কারণেই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। সন্ধ্যায় সেই অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলল কমিশন।

Advertisement

বৃদ্ধের পুত্র কানাই মাঝি পুরুলিয়ার পাড়া থানায় জ্ঞানেশ এবং মনোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ দায়ের হয়েছে কমিশনের অন্য আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও। কানাইয়ের দাবি, ২০০২-এর ভোটার তালিকায় তাঁর পিতা দুর্যনের নাম ছিল। কিন্তু কমিশনের ওয়েবসাইটে ‘কিছু যান্ত্রিক গোলযোগের’ কারণে অনলাইনে প্রকাশিত তালিকায় দুর্জনের নাম ছিল। বিএলও-কে এনুমারেশন ফর্ম জমা দেওয়ার সময় দুর্জন কমিশন নির্ধারিত পরিচয়পত্রের নথিও জমা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কানাই। তাঁর অভিযোগ, তার পরেও কমিশনের পাঠানো নোটিসে বলা হয়, উনি কোনও নথি জমা দেননি। কমিশনের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছেন কানাই।

দুর্যনের হঠাৎ মৃত্যুর জন্য কমিশনের অসহযোগিতা, ইচ্ছাকৃত অবহেলাকে দায়ী করেছেন তাঁর পুত্র। সোমবার ৮২ বছরের বৃদ্ধ দুর্যনের দেহ উদ্ধার হয় স্থানীয় রেললাইন থেকে। তাঁর পুত্র এবং স্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, সোমবার শুনানির জন্যই এসআইআর কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। টোটো ভাড়া করে যাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু মোড়ে গিয়ে অনেক খুঁজেও টোটো পাননি। কখন শুনানিতে যাবেন, সেই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। পরে বাড়ির কিছু দূরে রেললাইন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে। বৃদ্ধ ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করছে পরিবার।

জ্ঞানেশ এবং মনোজের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএস-এর ১০৮ এবং ৬১(২) ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কানাই। পুলিশের কাছে অভিযোগটি এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে পুুলিশের কাছে বৃদ্ধ পিতার মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন কানাই।

সিইও দফতরের দাবি, কেউ অভিযোগ জানাতেই পারেন। সেটা সকলের ব্যক্তির গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সংসদীয় আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা যায় না। ধারা ১৬ অনুযায়ী তা বলা হয়েছে। তার পরেও পুলিশ এফআইআর দায়ের করলে তা আইনের বিরুদ্ধে হবে। রাজ্যের বিরুদ্ধে পাল্টা নির্দেশ না-মানার অভিযোগ তুলেছে কমিশন। তাদের বক্তব্য, এর আগে ভুয়ো ভোটার নিয়ে রাজ্যকে এফআইআর দায়ের করতে নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তখন সেই নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি।

কমিশনের প্রশ্ন, কেন সিইও এবং কমিশনকে দায়ী করা হচ্ছে? ইআরও এবং বিএলও শুনানির জন্য ডেকেছেন। তাঁদের কাছে গিয়ে অসুবিধার কথা জানাতে পারতেন। এখানে কমিশন কী করবে? শুনানির কাজ করার দায়িত্ব ইআরও-র। সিইও দফতর আরও জানিয়েছে, আইন ভেঙে এফআইআর দায়ের হলে পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। লোকপাল আইন অনুযায়ী কোনও সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ এবং প্রমাণ থাকলে এফআইআর দায়ের করা যায়। এ ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কী বলছে? কী কারণে মৃত্যু খতিয়ে দেখা উচিত। মৃত্যুর জন্য কমিশনকে দায়ী করা ঠিক নয়। এই ধরনের অভিযোগে কেন আইনের অপব্যবহার হিসাবে দেখা হবে না? আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এফআইআর খারিজের আবেদন করা হবে। সিইও দফতর জানিয়েছে, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হবে। কাউকে বদনাম করার জন্য যে কোনও অভিযোগ করা যায় না। নির্বাচন কমিশনারদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন।

Advertisement
আরও পড়ুন