More atta less rice

নতুন বছরে চাল কমিয়ে রেশনে বাড়ছে আটা

সব চেয়ে বেশি চালের পরিমাণ কমবে অন্ত্যোদয় অন্নযোজনার উপভোক্তাদের। তারপরেই রয়েছে এসপিএইচএইচ এবং পিএইচএইচ উপভোক্তাদের।

অমিতকুমার মাহাতো
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রেশনে বিনামূল্যের চাল কমিয়ে তার বদলে বেশি পরিমাণে আটা দেওয়া হবে। নতুন বছরের শুরুতেই এই পরিবর্তন আনছে খাদ্য দফতর। তবে চালের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে উপভোক্তাদের মধ্যে। এ নিয়ে সতর্ক খাদ্য দফতর। তাই খাদ্য দফতরের তরফে এ নিয়ে আগাম প্রচার চালানো হচ্ছে। পুরুলিয়া জেলা খাদ্য নিয়ামক মিঠুন দাস বলেন, ‘‘জানুয়ারি থেকে রেশনের খাদ্য সামগ্রীর পরিমাণে বদল আনা হচ্ছে। সবাই যাতে তা জানতে পারেন, সে জন্য বিভিন্ন এলাকায় আমরা পোস্টার দিচ্ছি।’’

খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, দেশে গম উৎপাদন বেশি হওয়ায় রেশনে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। রেশনে কেন্দ্রীয় সরকার রেশনে যে অংশ বরাদ্দ করে, সেখানেই চাল কমিয়ে আটা বাড়ানো হচ্ছে। রাজ্য সরকারের অংশে অবশ্য আটার থেকে চাল বেশি দেওয়া হচ্ছে।

এই পরিবর্তন মূলত রেশনের তিন ধরনের কার্ডের উপভোক্তাদের জন্য— অন্ত্যোদয় অন্নযোজনা (এএওয়াই), অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত (পিএইচএইচ) এবং বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারবর্গের (এসসিএইচএইচ) জনয। ওই তিন শ্রেণিকে রেশনে নিখরচায় খাদ্য সামগ্রী দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এর বাইরে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা আরকেএসওয়াই ১ ও ২ এই দুই শ্রেণির উপভোক্তাদের চাল ও আটা দেয় রাজ্য সরকার। সে সবের পরিমাণ অবশ্য অপরিবর্তিতই থাকছে। তবে আরকেএসওয়াই ২ বাদে বাকি চার শ্রেণির শুধু জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের আলাদা ভাবে নিখরচায় বাড়তি খাদ্য শস্য দেয় রাজ্য সরকার। তার পরিমাণেও বদল হচ্ছে না।

সূত্রের খবর, সব চেয়ে বেশি চালের পরিমাণ কমবে অন্ত্যোদয় অন্নযোজনার উপভোক্তাদের। তারপরেই রয়েছে এসপিএইচএইচ এবং পিএইচএইচ উপভোক্তাদের। খাদ্য দফতর জানাচ্ছে, ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত চালের থেকে গম বা আটা বেশি দেওয়া হত। আবার সেই মাপকাঠিই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। কারণ তখনও দেশে গম বেশি উৎপাদন হয়েছিল।

তবে জেলার বাসিন্দাদের বড় অংশ দু’বেলাই ভাত খান। অনেকে আবার সকালে জলখাবারেও ভাত খান। সে ক্ষেত্রে রেশনের চাল তাঁদের বড় ভরসা। এ বার রেশনে চালের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেনে তাই অনেকেই রুষ্ট। এ ছাড়া রেশনের আটায় অনেক সময় ধুলো-বালি থাকে বলেও উপভোক্তাদের একাংশের অভিযোগ। তাই আটার পরিবর্তে চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বান্দোয়ানের কড়ামি গ্রামের উপভোক্তা মৃন্ময় মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা পাঁচ জনে মাসে ৪৫ কেজি চাল পাই। তা কমে ৪০ কেজি হবে। রেশনের আটা আমরা খাই না। আটার পরিবর্তে চালই বেশি দেওয়া হোক।’’ বোরোর জামরিয়া বাসিন্দা উত্তম মাহালির দাবি, ‘‘রেশনের আটা খাওয়ার যোগ্য নয়। তাই চালের পরিমাণ কমিয়ে আটা বাড়ালে আমাদের লাভ হবে না।’’ রেশনের আটার মান নিয়ে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নেমেছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। তিনি দাবি করেন, ‘‘আটার মান এতটাই খারাপ যে তা গ্রাহকেরা খেতে পারেন না। সেই আটা এজেন্টরা গ্রাহকদের থেকে কম দামে কিনে ফের সরবরাহকারীদের দেন। পরে সেই আটা আবার রেশন দোকান হয়ে গ্রাহকদের কাছে ফেরত আসে।’’ পুরুলিয়া জেলা এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রভাশীষ লাল সিংহ দেও-ও বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার মানুষের প্রধান খাদ্যই হল ভাত। চালের পরিমাণ কমে গেলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে।’’

বিধানসভা ভোটের মুখে এই বিষয়টিকেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীকে বঞ্চনার অভিযোগ হিসেবে সামনে আনতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘আবাস প্রকল্প, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের পরে এ বার রেশনেও বাংলার মানুষকে বঞ্চনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলার মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। রেশনে চাল কমিয়ে আটা বাড়াচ্ছে কেন্দ্র। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিষয়টিও আমরা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরব।’’ পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোরও দাবি, ‘‘ভাত খাওয়ার প্রবণতা বাংলা ছাড়া অন্য রাজ্যে খুব একটা নেই। পশ্চিমবাংলার বাসিন্দাদের জন্য তাই বেশি চাল দেওয়ার বিষয়টি ভাবা উচিত।’’ তবে বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘এখন আটার ব্যবহার বেড়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার চালের পরিমাণ কমিয়ে গমের বরাদ্দ বাড়িয়ে ভারসাম্য আনতে চাইছে। বিরোধীদেরঅভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

আরও পড়ুন