পাশাপাশি খেলেন বিজেপি ও তৃণমূল বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র
সামনে বিধানসভা ভোট। চলছে এসআইআর পর্ব। এই আবহে তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। নেতাদের মধ্যে আকচা আকচি চরমে। কিন্তু রবিবার মানবাজারের মাঝিহিড়ায় ঋণি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের সার্ধশত বর্ষ জন্মদিবসের স্মরণ অনুষ্ঠান সবাইকে মিলিয়ে দিল। মৃত্যুর ন’দশক পরে শুধু নিবারণচন্দ্রের নামেই এক মঞ্চে উপস্থিত হলেন তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, আরএসপি-সহ সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। যেখানে তৈরি হল সৌহার্দের কিছু অমর মুহূর্ত।
রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর পাঁ ছুঁয়ে প্রণাম করলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রাজীবলোচন সরেন। পাশাপাশি খেতে বসে বিজেপির পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় রাজীবলোচনের পাতে মাছের টুকরো তুলে দিয়ে বললেন, ‘‘যে হারে খাটুনি হচ্ছে, তাতে শরীরটা ঠিক রাখতে হবে তো!’’ আবার বিজেপি নেতা আলিম আনসারির সঙ্গে তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ হংসেশ্বর মাহাতোকে গল্প করতে দেখে কে বলবে তাঁরা আলাদা দল করেন। উপস্থিত অতিথিদের মতে, এটাই পুরুলিয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির চেনা ছবি। যা এক দশকে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। যদিও রাজনৈতিক নেতাদের দাবি, কখনও সখনও রাজনৈতিক কারণে মতান্তর হয় ঠিকই, কিন্তু তাঁরা রাজনৈতিক সম্প্রীতির ছবিটাই বজায় রাখতে চান।
নব্বুই উর্ধ্ব প্রবীণ ভাষা সেনানী কাজল সেন মনে করেন, ‘‘নিবারণচন্দ্র সব স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতেন। পুরুলিয়ায় সেই ধারা এখনও বজায় রয়েছে। তাই তাঁর মৃত্যুর ন’দশক পরেও সব ধর্মের, সব মতাদর্শের মানুষজন এক সারিতে বসেন।’’ অনুষ্ঠানে পুরুলিয়ার প্রাক্তন জেলাশাসক দেবপ্রসাদ জানা ছিলেন। তিনিও পুরুলিয়ায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রাজনৈতিক সৌহার্দের কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের বিক্রমপুর থেকে কাজের সুবাদে পুরুলিয়ায় এসে নিবারণচন্দ্র কী ভাবে সাবেক মানভূম জেলার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান স্থপতি হয়ে উঠেছিলেন তা নিয়ে বক্তরা আলোচনা করেন। প্রবীণ বাম নেতা বিমান বসু এ দিন ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত, জীবন ও চিন্তা ধারা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের আবরণ উন্মোচন করেন।
মাঝিহিড়ার মতো গান্ধী ভাবধারায় পরিচালিত শিক্ষাঙ্গনে তাঁর মতো শীর্ষ স্তরের বাম নেতার উপস্থিতি অনেককে বিস্মিত করলেও বিমান তাঁর বক্তব্যেইএর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার গান্ধী বিচার পরিষদে আমি আসা-যাওয়া করতাম। মাঝিহিড়ায় এর আগে নানা কারণে আসা হয়ে ওঠেনি। এখানে গান্ধীর ভাল দিকগুলি নিয়ে কাজ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি শুভকামনা রইল।’’ ওই গ্রন্থের প্রণেতা ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘এর আগে নিবারণচন্দ্রের জীবনের অনেকখানি অনালোকিত ছিল। কয়েক বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করে তাঁর জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।’’