—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
পড়ুয়াদের প্রোটিন জোগাতে মিড-ডে মিলে সবার পাতে সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়ার কথা বলেছে শিক্ষা দফতর। সম্প্রতি ডিমের দাম বেড়ে আট থেকে সাড়ে আট টাকা হওয়ায় বেশির ভাগ স্কুলে সপ্তাহে এক দিনও ডিমের উপস্থিতি অনিশ্চিত। শিক্ষকেরা বলছেন, একটা ডিমের দাম আট থেকে সাড়ে আট টাকা। অন্য দিকে, পড়ুয়া পিছু মিড-ডে মিলের বরাদ্দ প্রাথমিকে ৬ টাকা ৭৮ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ১০ টাকা ১৭ পয়সা। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে একটা ডিমের দাম পড়ুয়া পিছু বরাদ্দের থেকে বেশি। কী ভাবে তাঁরা পড়ুয়াদের পাতে ডিম তুলে দেবেন?
স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মতে, শীতে ডিমের দাম বেড়েই থাকে। সমস্যাটা মিড-ডে মিলের বরাদ্দ নিয়ে। গত অগস্টে প্রাথমিকে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৬ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বেড়ে হল ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। আর উচ্চ প্রাথমিকে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৯ টাকা ২৯ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ১৭ পয়সা। কোলাঘাটের এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের কথায়, “তখনই বলেছিলাম, এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে এমন হাতের কর গুনে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ালে পড়ুয়াদের পুষ্টিতে টান পড়বেই।”
নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “এখন স্কুল চলবে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা আছে। পরীক্ষার সময় স্কুলে প্রায় সব পড়ুয়াই আসে। তাদের মিড-ডে মিলে সপ্তাহে এক দিনও ডিম দিতে পারব কি না সন্দেহ!”
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডার কথায়, “উচ্চ প্রাথমিকের থেকে প্রাথমিক স্কুলগুলোর সমস্যা বেশি। কারণ প্রাথমিকের বরাদ্দ মাত্র ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। প্রাথমিকের পড়ুয়ারা হয়তো ভাত একটু কম খায়। তবু কোন যুক্তিতে প্রাথমিকের থেকে উচ্চ প্রাথমিকের বরাদ্দের এতটা ফারাক হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। বরং উচ্চ প্রাথমিকের পড়ুয়ারা একটু বড় বলে ওদের সমস্যাটা বোঝানো যায়। প্রাথমিকের পড়ুয়ারা পাতে ডিম না পেলে অবুঝের মতো করে। ওদের কি আর বলা যায়, ডাল-আলুসেদ্ধ দিয়ে খেয়ে নাও!”
মিড-ডে মিলের সাপ্তাহিক মেনুতে দু’দিন ডিম, এক দিন সোয়াবিন, দু’দিন মরসুমি আনাজের তরকারি, এক দিন আলুর তরকারি, আনাজ দিয়ে ডাল থাকার কথা। ছ’দিনই ডাল রাখার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, শীতে আনাজের দামও ঊর্ধ্বমুখী। কেজি প্রতি টোম্যাটো ৮০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা। এক-একটি ফুলকপি ২০-২৫ টাকা। তাঁদের কথায়, “এই সামান্য বরাদ্দে ডিমের বদলে আনাজ দিয়ে তরকারির খরচই বা কী ভাবে সামলাব? একমাত্র আলুর দাম কম। কেজিতে ২০-২২ টাকা। কিন্তু রোজ আলুর চোখা আর ডাল কি পড়ুয়াদের মুখে রুচবে?
মিড-ডে মিলের বরাদ্দে কেন্দ্র ৬০%, রাজ্য ৪০% দেয়। রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক কর্তার প্রশ্ন, “কেন্দ্র কেন বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না?” এই প্রশ্ন আগেও তুলেছেন তাঁরা। যদিও শিক্ষকদের একাংশের মতে, “কয়েকটি রাজ্যের সরকার কেন্দ্রের বরাদ্দের উপরে নির্ভর না করে নিজেরাই নিজেদের অংশের বরাদ্দ বাড়িয়েছে বলে জানি। আমাদের রাজ্যে তা হবে না কেন?”
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ বলছেন, “পুজোয় ক্লাবগুলোর অনুদান লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা করতে পারলে মিড-ডে মিলের টাকা বাড়াতে কার্পণ্য কেন?”