Jadavpur University

‘পুলিশ ভাল কাজই করেছে’, জামিনে মুক্তির পর প্রথম মন্তব্য যাদবপুরের প্রাক্তনীর! আদালত কী কী শর্ত দিল হিন্দোলকে

তিন দিনের পুলিশি হেফাজত শেষে সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিন্দোল মজুমদারকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁর হয়ে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে সেই আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ২০:৫৭
Released from custody, Jadavpur University alumnus Hindol Majumdar says, Police did a good job

হিন্দোল মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

দুপুরে আদালত জামিনে মুক্তি দিয়েছিল। সন্ধ্যার কিছু পরে থানা থেকে বার হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিন্দোল মজুমদার। তাঁকে আনতে থানার সামনে ভিড় করেছিলেন যাদবপুরের পড়ুয়াদের একাংশ। হিন্দোলকে ছেঁকে ধরেছিলেন সাংবাদিকেরাও। সকলের একটাই প্রশ্ন, পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে কী বলবেন? অনেকেই আশা করেছিলেন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেবেন স্পেনফেরত ওই গবেষক। কিন্তু সেই সব দিকে হাঁটলেনই না হিন্দোল। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘পুলিশ ভাল কাজ করেছে। পুলিশকে নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই!’’

Advertisement

সোমবার শর্তসাপেক্ষে হিন্দোলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আলিপুর আদালতের বিচারক। হিন্দোলের আইনজীবীর তরফে আর্জি জানানো হয়, এমন কোনও কঠিন শর্ত যেন আরোপ না-করা হয়, যাতে ওই গবেষকের পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শুনানিতে বিচারক সেই ব্যাপারে আশ্বাস দেন। পরে শর্তের বিষয় জানা যায়। জামিনের শর্ত হিসাবে হিন্দোলকে জানানো হয়, আগামী দু’সপ্তাহে দু’বার করে থানায় হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। শুধু তা-ই নয়, যত দিন তদন্ত চলবে, তত দিন আদালতে এই মামলার শুনানির সময় হাজিরা দিতে হবে হিন্দোলকে। এ ছাড়াও, জামিনের শর্ত হিসাবে বিচারক জানান, সাক্ষীদের প্রভাবিত করা যাবে না।

ঘটনাচক্রে, সোমবার হিন্দোলের জামিন মামলায় আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে পুলিশকে। সেখানে পুলিশকে নিয়ে হিন্দোল কেন এত ‘নিষ্প্রভ’? অনেকের মতে, সরাসরি আক্রমণের পথে না-হাঁটলেও যাদবপুরের প্রাক্তনীর কণ্ঠে ছিল কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক সুর!

গত ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে হেনস্থা এবং তাঁর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। তাতে নাম জড়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিন্দোলের। গত বুধবার স্পেন থেকে দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কলকাতা থেকে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে স্পেনে বসে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের দাবি, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর উপর হামলার ছক তৈরি করেন হিন্দোলই। যাদবপুরের পড়ুয়াদের সঙ্গে হোয়াট্‌সঅ্যাপ মারফত হামলার ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি করে দেন তিনি। এমন কি, কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে হামলায় আফতাব আনসারির সঙ্গে হিন্দোলের তুলনা করা হয়।

হিন্দোলের গ্রেফতারি নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তিন দিনের পুলিশি হেফাজত শেষে সোমবার তাঁকে আবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁর আইনজীবী গোপাল হালদার আদালতে জামিনের পক্ষে সওয়াল করে জানান, মামলায় নতুন কোনও অগ্রগতি নেই। তিনি জানান, তাঁর মক্কেল স্পেনে থাকেন। কলকাতায় থাকেন না। বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেশে ফেরার পরেই গ্রেফতার করা হয়। হিন্দোলের আইনজীবী আদালতে বলেন, “ছেলেটার শিক্ষাগত যোগ‍্যতা দেখুন, ভদ্রলোকের ছেলে। ঘটনার সময় সশরীরে উপস্থিতও ছিল না।”

তবে সোমবার হিন্দোলের জামিনের বিরোধিতা করেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। পুলিশের তরফে আদালতে দাবি করা হয়েছিল, হোয়াট্‌সঅ্যাপে যাদবপুরের প্রাক্তন পড়ুয়াদের মেসেজ করে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলেছিলেন হিন্দোল। বিষয়টি সবিস্তার কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর ১০০০ টাকার বন্ডে হিন্দোলকে জামিন দেন বিচারক। হিন্দোলকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষক, ছাত্র ও প্রাক্তনীরা মিছিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে যোধপুর পার্ক মোড়, এইটবি বাসস্ট্যান্ড ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে এসে মিছিল শেষ হয়। সেই মিছিল শেষ হওয়ার পর পরই হিন্দোলের জামিনের খবর এসে পৌঁছোয় যাদবপুর ক্যাম্পাসে। সেই খবরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন প্রতিবাদীরা। অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে থানায় চলে যান। পরে হিন্দোল বার হতে একে একে শুভেচ্ছাও জানান অনেকে।

Advertisement
আরও পড়ুন