East Bengal

বাংলা-বাঙালির সম্মানের পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ব্যানার লাল-হলুদ গ্যালারিতে, ভারসাম্য রক্ষা? ধাঁধায় সমর্থকদের একাংশ

পহেলগাঁও হামলার পরে পাকিস্তানকে জব্দ করতে ভারতের সিঁদুর অভিযানে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল বায়ুসেনা। রবিবার তাদের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে ঝুলল ব্যানার। মাঠে ৬-১ গোলে বায়ুসেনাকে হারালেও শেষ বাঁশি বাজার পর সেনার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে চলল ‘চ্যান্ট’।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ১৬:২১
Tifo exhibit at East Bengal Gallery honoring Indian Air Force\\\\\\\\\\\\\\\'s role in Operation Sindoor

রবিবার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে ভারতীয় বায়ুসেনার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের হাতে দেখা গেল ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কুর্নিশ জানিয়ে ব্যানার। ছবি: সংগৃহীত।

ডুরান্ড কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভিন্‌রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ এবং বাংলা ভাষার প্রতি অসম্মানের প্রতিবাদে ব্যানার ঝুলেছিল যুবভারতীর ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে। রবিবার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে ভারতীয় বায়ুসেনার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে লাল-হলুদ গ্যালারিতে ঝুলল ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কুর্নিশ জানিয়ে ব্যানার। যাকে অনেকেই ‘ভারসাম্য রক্ষার কৌশল’ হিসাবে দেখতে চাইছেন।

Advertisement

উদ্যোক্তাদের অবশ্য বক্তব্য, তাঁরা আগে থেকেই ব্যাপারটা ভেবে রেখেছিলেন। হতে পারে। তবে বাংলা ও বাঙালি নিয়ে ব্যানার প্রর্শনের পরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একাংশ সমাজমাধ্যমে যে ভাবে ‘রাজনৈতিক ক্ষোভ’ (আমরা কি তৃণমূল হয়ে গেলাম নাকি) উগরে দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে রবিবারের ঘটনায় গোলকধাঁধায় পড়ে গিয়েছেন।

ভিন্‌রাজ্যে (পড়ুন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে) বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ এবং বাংলা ভাষার প্রতি অপমান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সরগরম। পদ্মশিবিরের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক তোপ দাগছে তৃণমূল। একই বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামছে বামেরাও। ডুরান্ডের গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির ওই ব্যানারকে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ‘শাবাশ’ দিয়েছেন তৃণমূল এবং সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা। তবে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা বিজেপির সমর্থক, তাঁরা চটেছিলেন। কেউ কেউ এমনও পোস্ট করেন (যা ভাইরাল হয়েছে) যে, তিনি বা তাঁরা আর ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন করবেন না। এত চড়াদাগে না গেলেও অনেকেই বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ নিয়ে খেলার মাঠে ব্যানারকে মানতে পারেননি।

পহেলগাঁও হামলার পরে পাকিস্তানকে জব্দ করতে ভারতের সিঁদুর অভিযানে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল বায়ুসেনা। রবিবার তাদের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে ঝোলানো হয়েছিল ব্যানার। মাঠে ৬-১ গোলে বায়ুসেনাকে হারালেও শেষ বাঁশি বাজার পরে সেনার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে শুরু হয়েছিল ‘চ্যান্ট’। মাঠ থেকে গ্যালারিকে পাল্টা অভিবাদন জানিয়েছিলেন বায়ুসেনা দলের খেলোয়াড়েরাও।

যে সমর্থকেরা ‘বাংলা ভাষার সম্মান’-এর ব্যানারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, তাঁরা রবিবারের পর মুখে কার্যত কুলুপ এঁটেছেন। কারণ, যে গ্যালারি বাংলা ভাষা এবং বাঙালির অসম্মানের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে সরব হয়েছিল, সেখান থেকেই কুর্নিশ জানানো হয়েছে বায়ুসেনাকেও। কালোর উপর সাদা দিয়ে ওই ব্যানারে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘৬টি পাক বিমানঘাঁটি এবং ৯টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ওরা চিরকাল ভারতীয় বায়ুসেনার ভয়ে থাকবে।’

উদ্যোক্তারা কি ‘ভারসাম্য রক্ষা’ করতেই ওই ব্যানার ঝুলিয়েছিলেন? আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্যোক্তাদের তা স্বীকার করার কথা নয়। করেনওনি। ‘ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাজ়’-এর অন্যতম সংগঠক কৃষ্ণেন্দু দত্ত সোমবার বলেন, ‘‘গ্রুপে বায়ুসেনার বিরুদ্ধে ম্যাচ আগে থেকেই ঠিক ছিল। এই পরিকল্পনা আমাদের আগে থেকেই ছিল। কে ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন করবেন বা করবেন না, সেটা তাঁদের বিষয়। তাঁদের জন্য আমরা কেন ভারসাম্য রক্ষা করতে যাব?’’ কৃষ্ণেন্দুর বরং অভিযোগ, ‘‘ওই ব্যানার নিয়ে মাঠে প্রথমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে সেটি ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ সাধারণত এই ধরনের ব্যানার ঝুলতে দেখা যায় ম্যাচের বিরতিতে। রবিবার খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে কিশোরভারতীর ২ নম্বর গ্যালারি থেকে ওই ব্যানার ঝোলানো হয়েছিল।

উল্লেখ্য, বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের বিষয়ে ইস্টবেঙ্গল ব্যানার ঝোলানোর পরে একই ছবি দেখা গিয়েছিল মোহনবাগান গ্যালারিতেও। মোহনবাগান বনাম ডায়মন্ড হারবার ম্যাচে সবুজ-মেরুন সমর্থকেরাও সেই পথে হেঁটেছিলেন। অনেকের মতে, বিতর্কের মুখে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা যদি ভারসাম্য রক্ষা করতেও অপারেশন সিঁদুরকে কুর্নিশ জানিয়ে ব্যানার ঝোলান, তা-ও করা হয়েছে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই। কারণ, খেলা ছিল বায়ুসেনার বিরুদ্ধে। সেটা তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি বাঙালি অস্মিতার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদকেও উপস্থাপন করল ব্যানারের মাধ্যমে। রাজনৈতিক ভাবে সমর্থকদের যে অংশ নামধারী ম্যাচের পরে সরব হয়েছিল, রবিবারের পর তারা খানিকটা ধাঁধায়। হচ্ছেটা কী!

Advertisement
আরও পড়ুন