21 July

ধর্মতলায় কেষ্টকে আটকে দিল পুলিশ, দিদির দেখা পেলেন না! ত্রিস্তরীয় মঞ্চ বেঁধে ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে ২৬-বার্তা তৃণমূলের

মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের পেয়ে তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদেরা ভিড় জমিয়েছিলেন মঞ্চের কাছেই। সেই পর্যায়েই বীরভূম জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও এসেছিলেন ধর্মতলার মঞ্চের কাছে। মূল মঞ্চের কাছে পৌঁছোনোর অনেক আগেই আটকে দেওয়া হয় তাঁকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ২০:৩৭
A photograph of Mamata Banerjee and Anubrata Mondal

ধর্মতলায় সভামঞ্চের কাছে এসেও দিদির দেখা পেলেন না ভাই কেষ্ট। নিজস্ব চিত্র।

রাত পোহালেই ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশ। সেই উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এ বারও সেজে উঠছে ত্রিস্তরীয় মঞ্চ। সেই মঞ্চের কাছাকাছি এসেও দিদির দেখা পেলেন না ভাই কেষ্ট। রবিবার সমাবেশের চূড়ান্ত প্রস্তুতি দেখতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই খবর আগাম পেয়ে তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদেরা ভিড় জমিয়েছিলেন মঞ্চের কাছেই। সেই পর্যায়েই বীরভূম জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও এসেছিলেন ধর্মতলার মঞ্চের কাছে। মূল মঞ্চের কাছে পৌঁছোনোর অনেক আগেই আটকে দেওয়া হয় তাঁকে।

Advertisement

তবে অনুব্রতের আগেই আটকে দেওয়া হয়েছিল বজবজের প্রবীণ বিধায়ক অশোক দেবকেও। এর পর অনুব্রত, প্রাক্তন সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জমান, বিধায়ক ইমানী বিশ্বাসের মতো নেতাদেরও আটকে দেওয়া হয়। যদিও এই সময়েই কলকাতার পুরসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূলনেত্রীর ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে মূল মঞ্চের কাছে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয় কলকাতা পুলিশ। বিকেল ৪টে ৪০ মিনিট নাগাদ অনুব্রত আসেন মঞ্চের কাছের রাস্তায়। ভিতরে ঢুকতে গেলে পুলিশের অস্থায়ী ব্যারিকেডের সামনেই কলকাতা পুলিশের কর্মীরা তাঁকে আটকে দেন। পরে কয়েকটি চেয়ার এনে উপস্থিত নেতাদের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারের নীচে বসতে দেন। সেখানেই অশোক-শুভাশিস-আখরুজ্জমানদের সঙ্গে বসে পড়েন অনুব্রতও। সেখানেই সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানতে চান, ‘‘কটা বাজে?’’

তখন প্রায় ৫টা বেজে গিয়েছে। আর ১০ মিনিট অপেক্ষার পর পুলিশ কর্মীদের কাছে অনুরোধ করে অনুব্রত জানান, তাঁর শরীর খারাপ লাগছে। তাই তাঁকে যাওয়ার রাস্তা দেওয়া হোক। এতক্ষণ মূল মঞ্চের দিকে যাওয়ার যে রাস্তার তাঁর জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেই রাস্তা দিয়েই তাঁকে বেরিয়ে যেতে বলেন পুলিশ কর্মীরা। তাদের কথা মতো, সেই পথ দিয়েই আর কারও সঙ্গে কথা না বলে বেরিয়ে যান তিনি। অনুব্রত নিজে না ফোন ধরলেও, ঘনিষ্ঠেরা জানান, কেষ্টদা অসুস্থতার কারণে দিদির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেই ফিরে এসেছেন। সভাস্থল থেকে চলে যাওয়ার প্রায় ৫৫ মিনিট পর সেখানে আসেন মমতা। তিনি এলে আটকে থাকা নেতাদের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে দাঁড়ান কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। পরে বজবজ বিধায়ক অশোক এবং কোচবিহারের সাংসদ জগদীশ বর্মা বাসুনিয়েকে ঘুরপথে মমতার কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও, বাকিদের দিদির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেই ফিরে যেতে হয়।

তবে কেষ্টর সঙ্গে দিদির সাক্ষাৎ না হওয়া প্রসঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ফোনে বোলপুর থানার আধিকারিক লিটন হালদারকে গালিগালাজ করে তাঁর মা ও স্ত্রীর প্রসঙ্গে কটু কথা বলেছিলেন অনুব্রত। যে কারণে তাঁর উপরে রুষ্ট মমতা। যে কারণে এত দিন তিনি অনুব্রতের সঙ্গে কথা বলেননি, আর রবিবার তাঁর মুখোমুখিও হতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তাই রবিবার মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে যখন তাঁকে আটকে দেওয়া হয়, তথনই অস্বস্তিতে পড়ে যান তৃণমূলের এই দাপুটে নেতা। তাই আধঘণ্টা পরেই পরিস্থিতি বুঝে সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। আর তাঁর সভাস্থল ত্যাগ করার প্রায় এক ঘণ্টা পর সভাস্থলে এসে প্রস্তুস্তিপর্ব দেখে যান মমতা।

অন্য দিকে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই তৃণমূলের বড় সমাবেশ। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূলের মহাসমাবেশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। মূল সমাবেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে তিনটি বৃহৎ মঞ্চ। কেন্দ্রীয় ত্রিস্তরীয় মঞ্চটি আকারে অনেক বড়— উচ্চতা পর্যায়ক্রমে ১১, ১২ ও ১৩ ফুট, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ৮০ ও ৪২ ফুট। এই মঞ্চে প্রায় ৬০০ জন নেতানেত্রী, অভ্যাগত ও আমন্ত্রিত অতিথির বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঞ্চটি ঘেরা থাকবে তৃণমূলের পতাকায়। যদিও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও সমাবেশ হবে খোলা মঞ্চেই। তিনটি মঞ্চের মধ্যে প্রথমটিতে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বিতীয় মঞ্চে বসবেন শহিদ পরিবারের সদস্যেরা, আর তৃতীয় মঞ্চে থাকবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। এসপ্ল্যানেড ও পার্ক স্ট্রিট এলাকায় থাকছে প্রায় ১৫টি জায়ান্ট স্ক্রিন। শহরের বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকছে। সমাবেশ ঘিরে মাঠে নামছেন প্রায় ১,০০০ স্বেচ্ছাসেবক। অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখা যাবে তৃণমূলের সমাজমাধ্যমেও।

Advertisement
আরও পড়ুন