Mamata Banerjee on SIR

‘সহ্যের সীমা থাকে’! কমিশনকে হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর, রাজ্যবাসীর ‘হেনস্থা’ নিয়ে দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর-মঞ্চেও সরব মমতা

এসআইআর-এর শুনানির জন্য রাজ্যবাসীকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে জেলা থেকে জেলায়। আরও এক বিএলও-র আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ফের কমিশনকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:০৯
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

রাজ্যবাসীকে হেনস্থার অভিযোগ তুলে ফের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান থেকে কার্যত হুঁশিয়ারিই দিয়ে রাখলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “অনেক সহ্য করেছি। সহ্য করছি। ধৈর্য ধরছি। মনে রাখবেন সহ্যেরও একটা সীমা থাকে।”

Advertisement

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর প্রক্রিয়া নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্ন তুলে আসছেন মমতা। এত দ্রুততার সঙ্গে কেন এসআইআর হচ্ছে, তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গত শনিবার থেকে রাজ্যে এসআইআর-এর দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ শুনানি পর্ব শুরু করেছে কমিশন। শুনানি পর্বের প্রথম দফায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে ‘ম্যাপিং’-এর বাইরে থাকা ভোটারদের। নথিপত্র যাচাই চলছে। তাতেও উঠে এসেছে ‘অব্যবস্থা’র অভিযোগ। উঠেছে ভোটারদের ‘হেনস্থা’র অভিযোগও। বয়স্ক, অসুস্থ মানুষদেরও যে ভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে, তাতে কমিশনের ‘অমানবিক’ এবং ‘অপেশাদার’ মুখ দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সে করে শুনানিকেন্দ্রে যেতে হয়েছে, এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে রাজ্যে।

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী যখন কমিশনকে নিশানা করছেন, তখন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতরে গিয়ে দাবিপত্র দিয়ে এলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। এর পরের দফায় কোন ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ভোটারকে শুনানির জন্য তলব করা হতে পারে, তাঁদের তালিকা প্রকাশের দাবি তুলেছে তৃণমূল। একই সঙ্গে ৮৫ বছরের বেশি বয়সি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারদের বাড়ি গিয়ে শুনানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন পার্থ ভৌমিক, শশী পাঁজা, বিরবাহা হাঁসদা, বাপি হালদার এবং পুলক রায়।

শুনানিতে কী কী নথিপত্র নিয়ে যেতে হবে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে রাজ্যবাসীর একাংশের মনে। এরই মধ্যে সোমবার হাওড়ার আমতায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের। কমিশনের শুনানির জন্য ডাক পড়েছিল তাঁর। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, শুনানির তলব পেয়ে ‘এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে’ই মৃত্যু হয়েছে ৭০ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধের।

শুনানি পর্ব চলাকালীনও রাজ্যে বিএলও-র আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সুইসাইড নোটে মিলেছে ‘কাজের চাপে’র কথা। এ অবস্থায় কমিশনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সোমবার নিউটাউনে দুর্গা অঙ্গনের ভূমিপুজো এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে গিয়ে মমতা বলেন, “৫০ জন মানুষ মারা গেলেন, আত্মহত্যা করলেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। মায়ের কাছে প্রার্থনা করব, দানবিক শক্তির বিনাশ ঘটাও। মানবিক শক্তিকে জাগিয়ে তোলো।”

ঘটনাচক্রে, সোমবারই কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, শুনানিতে কোনও রাজনৈতিক দলের বুথস্তরের এজেন্ট (বিএলএ)-কে থাকতে দেওয়া হবে না। রবিবার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই শুনানিকেন্দ্রে এজেন্টদের উপস্থিতি সংক্রান্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। জানান, এটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ।

ওই বৈঠকের পরে সোমবারই দেখা যায় শুনানিতে বিএলএ-দের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন হুগলির চূঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। চুঁচুড়া-মগড়া ব্লক অফিসে গিয়ে শুনানি বন্ধ করে দেন তিনি। বিএলএ-দের কেন শুনানিতে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না, কমিশনের তরফে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাবি করেন। প্রায় দু’ঘণ্টা এর জন্য শুনানি প্রক্রিয়া আটকে ছিল। পরে কমিশন জানিয়ে দেয়, কোনও বিএলএ-কে শুনানিতে থাকতে দেওয়া হবে না। তার পরে বিকেলে দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মঞ্চ থেকে রাজ্যবাসীর হেনস্থার প্রতিবাদে কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement
আরও পড়ুন