Humayun Kabir & AIMIM

সদা ‘বিদ্রোহী’ তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুনকে ফোন ওয়েইসির দলের তরফ থেকে, মিমে যোগদানের প্রস্তাব

হুমায়ুনের দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা রাজনীতিতে প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে রেজিনগর বিধানসভা থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। ২০১৩ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০১

—ফাইল চিত্র।

সদা ‘বিদ্রোহী’ ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনি (মিম)-এ যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত মার্চ মাস থেকে দফায় দফায় তাঁকে ফোন করে হায়দরাবাদের এই দলে যোগদানের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত মার্চ মাসে বিধানসভার বাইরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন হুমায়ুন। দলের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের জাতিসত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তোলেন হুমায়ুন। তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি শো কজ়ের চিঠি ধরায় তাঁকে। সেই ঘটনার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে হুমায়ুনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে ওয়েইসির দল। মিম সূত্রে খবর, হুমায়ুনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তিনি যদি পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে রাজনীতি করতে চান, তা হলে মিম তাঁকে স্বাগত জানাবে।

Advertisement

সঙ্গে তাঁকে আরও প্রস্তাব দেওয়া হয়, মিমের রাজ্য স্তরের নেতৃত্ব দেওয়া হবে তাঁকে। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে মিমের রাজনীতি করতে পারবেন হুমায়ুন। যেহেতু তৃণমূলে তাঁকে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের জন্য কাজ করার বড় সুযোগ দিচ্ছে না, তাই তিনি চাইলে মিমে যোগদান করে সেই কাজ করুন।

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সংগঠনের গতি আনতে চাইছেন ওয়েইসি। তাই গত মাসেই সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে মিমের তরফে। আর তার পরেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে হুমায়ূনকে। তবে মিমের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন ভারতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। হুমায়ুন বলেন, ‘‘আমি মিমের নেতাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমার পক্ষে তৃণমূল ছাড়া সম্ভব নয়। হতে পারে দলের সঙ্গে আমার কিছু বিষয় মতপার্থক্য রয়েছে, তবে সেই মতপার্থক্য এমন জায়গায় পৌঁছোয়নি যে, তৃণমূল ছেড়ে অন্য কোনও দলে যোগ দিতে হবে।’’

তবে মিমে যোগদানে তাঁর অনীহা প্রসঙ্গে হুমায়ুন আরও বলেন, ‘‘মিমে যোগদান করলে হয়তো মুর্শিদাবাদে আমি নিজের আসন ছাড়াও আরও কয়েকটি আসন জেতাতে পারব। কিন্তু এর ফলে রাজ্যের অন্য প্রান্তে বা মুর্শিদাবাদের আরও কিছু আসনে সংখ্যালঘু ভোট কেটে বিজেপিকে ক্ষমতায় আসার রাস্তা করে দেওয়া হবে। তাই সেটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কারণ, বিজেপি আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ, সবার আগে তাদের রুখতে হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে মিম কেন, অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগদান সম্ভব নয়।’’ ‌তবে তাদের তরফে যে হুমায়ুনকে মিমে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সে কথা মেনে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ মিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইমরান সোলাঙ্কি। তাঁর কথায়, ‘‘হুমায়ুন কবীর বলেছিলেন তাঁর কাছে আগে জাতিসত্তা, তার পর রাজনৈতিক দল। তাঁর সেই অবস্থানকে তৃণমূল সমর্থন করেনি। তাই আমরা তাঁকে আমাদের দলে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলাম।’’

তবে এ যাত্রায় দলবদল না করলেও হুমায়ুনের দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা রাজনীতিতে প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে রেজিনগর বিধানসভা থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। ২০১৩ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। পান রাজ্য সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদ। কিন্তু উপনির্বাচনে পরাজিত হন, পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করার জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। শেষে ফিরে যান কংগ্রেসে। কিন্তু সেখানেও বেশি দিন স্থায়ী থাকেননি। ২০১৮ সালে দিল্লিতে গিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়াই করে তৃতীয় হন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে ফিরে ভরতপুরে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। বিধায়ক হয়েও প্রায়শই দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিতর্ক তৈরি করেন এই নেতা। এ বার বিতর্ক তাঁর দলবদলের খবর নিয়ে। যদিও এ যাত্রায় তিনি দলবদল করবেন না বলেই জানিয়েছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন