Bratya Basu

ব্রাত্য কেন ‘ব্রাত্য’ দলেরই সমাজমাধ্যমে, ২৪ ঘণ্টা কেন সাদা রইল পাতা, প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের অন্দরেই

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্রাত্যের ওই ঘটনার অব্যবহিত পরেই রাস্তায় নেমেছিল তৃণমূল। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ সায়নী ঘোষ-সহ যাদবপুর, টালিগঞ্জের প্রথম সারির তৃণমূল নেতারা মিছিল করেছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৮:৩০
Why is the AITC official Facebook page not active on the incident happened in Jadavpur University, question is raised within the party

—ফাইল ছবি।

শনিবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। সেই ঘটনাকে শাসকদল অভিহিত করেছে ‘বাম ছাত্রদের হামলা’ বলে। আবার এসএফআই-সহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলির বক্তব্য, মন্ত্রী ব্রাত্যের গাড়িই পিষে দেওয়ার চেষ্টা করেছে এক পড়ুয়াকে। যিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

এই নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতির পারদ তুঙ্গে, তখন কিন্তু সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ফেসবুকের পাতা এবং এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল ওই বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব ছিল। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে রবিবার বিকালে ব্রাত্যের ঘটনা নিয়ে প্রথম পোস্ট হয় তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল’ ফেসবুক পেজ এবং এক্স হ্যান্ডলে। সেই পোস্টও খুব ‘নিরীহ’ বলে মনে করছেন দলেরই অনেকে। কেউ কেউ আবার ওই পোস্টকে ‘চাঁদ সওদাগরের বাঁ হাতে মনসাপুজো’ বলেও কটাক্ষ করছেন একান্ত আলোচনায়। কেন ব্রাত্যকে দলেরই সমাজমাধ্যমের পাতায় প্রথম ২৪ ঘণ্টা একেবারে ‘ব্রাত্য’ করে রাখা হল, তার পর কেনই বা ‘করতে হয় বলে করা’ গোছের পোস্ট হল, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে শাসকদলের অন্দরে।

ব্রাত্যকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল’ পেজ বা এক্স হ্যান্ডল কেন ‘নীরব’, রবিবার মধ্যাহ্নের আগে সেই প্রশ্ন প্রথম তুলেছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। কাকতালীয় বিষয় হল, সুজনের ওই প্রশ্ন তোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রবিবার বিকাল ৫টার পরে তৃণমূলের পেজ এবং হ্যান্ডল থেকে প্রথম পোস্টটি করা হয় শনিবারের ঘটনা নিয়ে। যে তৃণমূল সমাজমাধ্যমে এত ‘সক্রিয়’, যে তৃণমূল সমাজমাধ্যমে ‘পাল্টা ভাষ্য’ তৈরি করে সন্দেশখালির মতো ঘটনা সামলে দিয়েছিল মাত্রই এক বছর আগে, ডিজিটাল ময়দানে সেই দলের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন না দলের অনেক প্রথম সারির নেতা।

উল্লেখ্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্রাত্যের ওই ঘটনার অব্যবহিত পরেই রাস্তায় নেমেছিল তৃণমূল। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ সায়নী ঘোষ-সহ যাদবপুর, টালিগঞ্জের প্রথম সারির তৃণমূল নেতারা মিছিল করেছিলেন। অরূপ যখন মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন তার নেপথ্যে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল বলেই ধরে নিচ্ছেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। তৃণমূলের অনেকে আশ্চর্য হয়েছেন দেখে যে, সেই কর্মসূচিরও কোনও ছবি শনিবার তো বটেই, সোমবার পর্যন্ত দলের সমাজমাধ্যমের পাতায় নেই!

তৃণমূলের আইটি সেলের মুখ্য দায়িত্বে রয়েছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। তিনি শনিবার থেকেই ময়দানে নেমেছেন। বিভিন্ন ‘ক্লিপিং’ এবং ‘স্থিরচিত্র’ দিয়ে দাবি করেছেন, যে ছাত্রকে ব্রাত্যের গাড়ি পিষে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ, তিনি আসলে অন্য ভাবে আহত হয়েছেন। বাম এবং অতি বামেরা কুৎসা করতেই এ সব রটাচ্ছে বলে দাবি দেবাংশুর। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল যে, দেবাংশুর তাঁর ভাষ্য পোস্ট করেছেন ‘ব্যক্তিগত পেজ’ থেকে। দলের পেজ বা হ্যান্ডল থেকে নয়। সোমবার অবশ্য দেবাংশু বলেছেন, ‘‘ঘটনা ধরে ধরে ‘কাউন্টার’ করা পার্টির পেজের কাজ নয়। সেগুলো আমরা করছি। পার্টির মূল পেজ থেকে পোস্ট করে কয়েকটা সিপিএম আর মাওবাদীদের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে কেন? দলের পেজ থেকে আরও অন্যান্য কর্মসূচি, অন্য রাজ্যের কর্মসূচি পোস্ট করা হয়েছে।’’

কিন্তু প্রথম পোস্টটি হতে ২৪ ঘণ্টা লেগে গেল কেন? দেবাংশুর জবাব, ‘‘কেন সময় লাগল, তা বলার জায়গায় আমি নেই। তবে হ্যাঁ, প্রথমে যে ভিডিয়োগুলি ছড়িয়ে পড়েছিল, তা স্থানীয় ভাবে তোলা। সেখানে কোনও বড় সংবাদমাধ্যম ছিল না। তাই ধোঁয়াশা ছিল। সেটা দেখে নিয়েই পোস্ট করা হয়েছে।’’

দেবাংশু আনুষ্ঠানিক ভাবে এ কথা বললেও তৃণমূলের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে একমত নন। প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই বলছেন, ঘটনার অব্যবহিত পরে যখন মন্ত্রী-সাংসদেরা মিছিলে নামছেন, তখন আবার কিসের ধোঁয়াশা? এই ধরনের ঘটনায় তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল পেজ’ শেষ কবে এমন নীরব ছিল, তা-ও অনেকেই মনে করতে পারছেন না।

এখানেই তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরের সমীকরণ নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে মহাসমাবেশের পরে অনেকেই মনে করছিলেন, সর্বোচ্চ স্তরে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা মিটে গিয়েছে। ব্রাত্যের ঘটনা নিয়ে সেই তাঁরাই মনে করছেন, ‘দূরত্ব’ একটা রয়েছেই। ব্রাত্যের ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমের পাতা ২৪ ঘণ্টা সাদা রেখে দেওয়ায় সেই দূরত্বই প্রতিফলিত হচ্ছে। কারণ, দলের সমাজমাধ্যম দেখাশোনার ক্ষেত্রে তৃণমূলের যে অংশ কাজ করে, তার সঙ্গে ব্রাত্যের বর্তমান সমীকরণ এবং গত কয়েক মাসের কিছু বিবৃতিকে জুড়ে দিচ্ছেন অনেকে।

Advertisement
আরও পড়ুন