US-China Trade War

২০১৮ সালেও চিনের বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ ঘোষণা করেন ট্রাম্প! কেমন প্রভাব পড়েছিল

২০২০ সালে দুই দেশই নিজেদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত করে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। কেউ আর নতুন করে অতিরিক্ত শুল্ক চাপাবে না, এমন কথা হয়। কিন্তু বহাল থাকে দু’দেশের আরোপ করা শুল্ক।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩১
America and China tariff war continue from 2018, what was the import and export between two nations in seven years

—প্রতীকী ছবি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি আবার নতুন করে আমেরিকা এবং চিনকে সম্মুখ বাণিজ্য সমরের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমেরিকায় চিনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ‘ট্রাম্প কার্ড’ বিশ্ব বাণিজ্য মহলে নাড়া দিয়েছে। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও যে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন পাল্টা শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করে। প্রশ্ন উঠছে, এই যুদ্ধে আখেরে লাভ হবে কার? ক্ষতিই বা কার?

Advertisement

আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন নয়। ২০১৮ সালে এই যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা করেছিল আমেরিকাই। সেই সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্পই। তিনি প্রথমে চিন থেকে আমদানি করা সৌর প্যানেল এবং ওয়াশিং মেশিনের উপর ২০-৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেন। তার পর ধাপে ধাপে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপরেও অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পথে হাঁটে জিনপিং সরকারও।

২০২০ সালে দুই দেশই নিজেদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত করে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। কেউ আর নতুন করে অতিরিক্ত শুল্ক চাপাবে না, এমন কথা হয়। কিন্তু বহাল থাকে দু’দেশের আরোপ করা শুল্ক। প্রভাব পড়ে দু’দেশেরই আমদানি-রফতানির উপর।

শেষ সাত বছরে আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে কী পরিমাণে ব্যবসা হয়েছে?

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২০১৮ সালে আমেরিকায় প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকার চিনা পণ্য আমদানি হয়েছে। আমেরিকা থেকে চিনে রফতানি হয়েছে মাত্র ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ২০১৯ সালে দু’দেশের মধ্যেই আমদানি এবং রফতানির পরিমাণ কমে। সে বছর চিনে আমেরিকার পণ্য রফতানি হয় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার চিনা পণ্য আমদানি হয় আমেরিকায়। ২০২২ সালেও দু’দেশের মধ্যে আমদানি এবং রফতানির পরিমাণ প্রায় একই ছিল। ২০২৩ সালে চিনে আমেরিকার পণ্য রফতানি অনেকটাই কমে যায়। সে বছর চিনে ৪২ হাজার কোটি টাকার আমেরিকার পণ্য পাঠানো হয়। আর চিন থেকে আমেরিকায় আমদানি করা হয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ২০২৪ সালে এই পরিসংখ্যান ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪০ হাজার কোটি এবং প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।

অতীতে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর ফলে যেমন আমদানি, রফতানিতে প্রভাব পড়েছে, তেমন দু’দেশের মুদ্রাস্ফীতিও প্রভাবিত হয়। তাই নতুন করে দু’দেশের পরস্পরের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন অনেকে।

২০২০ সালে চিনে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমেরিকা থেকে রফতানি হয়। আমেরিকা আমদানি করে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকার চিনা পণ্য। ২০২১ সালে সেই পরিমাণ ছিল যথাক্রমে প্রায় ১৫ হাজার কোটি এবং সাড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা।

গত বছরের নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পরেই কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, অবৈধ অভিবাসন সমস্যা এবং সীমান্ত দিয়ে ফেন্টানাইল মাদক পাচার বন্ধ করতেই তিন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক চাপানোর এই সিদ্ধান্ত। সেই সঙ্গে বেজিংকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চিনে তৈরি বহু অবৈধ ওষুধ মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় ঢুকলেও বেজিং কোনও পদক্ষেপ করেনি। চিন যত দিন না এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে, তত দিন পর্যন্ত চিনা পণ্যে শুল্ক চাপানো হবে। প্রয়োজনে চিনা পণ্যে আরোপিত শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। গত শনিবার তা বাস্তবায়িত করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। কানাডা, মেক্সিকোর উপর ২৫ শতাংশ এবং চিনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা নতুন শুল্কনীতির। যদিও তার আগেই ট্রাম্প মেক্সিকো এবং কানাডার উপর আপাতত অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর বিষয় থেকে সরে এসেছেন। ৩০ দিনের জন্য সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। তবে চিনা পণ্যের উপর ধার্য শুল্ক নিয়ে আগের অবস্থানেই অটল থেকেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তার পর চিনও ঘোষণা করে, তারাও আমেরিকার পণ্যের উপরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চলেছে। আমেরিকা থেকে আসা কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি সরঞ্জাম ও বড় গাড়ির উপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানায় বেজিং।

Advertisement
আরও পড়ুন