শফিকুর রহমান। — ফাইল চিত্র।
তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপির সঙ্গে ভোট পরবর্তী জোটের সম্ভাবনা খোলা রাখল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)। ‘মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী কট্টরপন্থী রাজনৈতিক শক্তি’ হিসাবে পরিচিত একদা নিষিদ্ধ জামাতের আমির (প্রধান নেতা) শফিকুর রহমান বুধবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। রয়টার্সের প্রতিনিধিকে শফিকুর বলেন, ‘‘আমরা ন্যূনতম পাঁচ বছর একটি স্থিতিশীল জাতি দেখতে চাই। সেই লক্ষ্যে যদি রাজনৈতিক দলগুলি একত্রিত হয়, তা হলে আমরা এক সঙ্গে সরকার পরিচালনা করব।’’
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনেই এক দফায় নির্বাচন হবে । ওই দিন একই সঙ্গে হবে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটও। জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র-যুব নেতাদের একাংশের গড়া রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)-সহ আটটি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে জামাত। কয়েকটি প্রাক নির্বাচনী জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত, নির্বাচনে বিএনপি প্রথম এবং জামাতের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ পরিস্থিতি এরকম থাকলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর জামাতই হতে চলেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল।
২০০১-০৬ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিএনপির সহযোগী হিসাবে ক্ষমতায় ছিল জামাত। পরবর্তী সময়ে দু’দলের গাঁটছড়া ছিন্ন হয়। কিন্তু শফিকুরের দাবি, ‘বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে’ আবার বিএনপির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে তাঁরা প্রস্তুত। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন তিনি। গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জামাত প্রধান। কিন্তু সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, চলতি বছরের গোড়ায় বাইপাস সার্জারির পরে এর শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। জামাতের আমির বলেন, ‘‘নয়াদিল্লি এখন পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারে এমন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে চাইছে।’’
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাত নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে পাকিস্তান সেনার পক্ষে কাজ করেছিলেন। রাজাকার ঘাতকবাহিনীর নেতা হিসাবে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে দলের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। হাসিনা জমানায় কয়েক জনের সাজাও হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ২০১৩ সালে জামাতের ভোটে লড়ার উপর বিধিনিষেধ জারি করেছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামাতের নির্বাচনী প্রতীক বাতিল করেছিল। ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সরকার ‘মৌলবাদ ও স্বাধীনতা বিরোধী’ জামাত এবং তাদের শাখা সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
কিন্তু ৫ অগস্ট পালাবদলের পরে বদলে যায় পরিস্থিতি। এখন তারা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অন্যতম চালিকাশক্তি’ হিসাবে পরিচিত। সম্প্রতি ঢাকা, জাহাঙ্গিরনগর, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবির। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’ পর্যুদস্ত হয়েছে জামাতের ছাত্র সংগঠনের কাছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ হিসাবে পরিচিত। খালেদার স্বামী তথা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাক সেনার প্রথম বাঙালি অফিসার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই জিয়াও স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষক বলে পরিচিত।