Bangladesh Situation

বহু বার্তা দিতে শাসক-নিশানায় মুক্তিযোদ্ধা ইনু

হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করা জামাত এখন তার বদলা নিতে চাইছে। অন্য দিকে ইউনূস প্রশাসন আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে চাইছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৬
মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। — ফাইল চিত্র।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের ‘হুঁশিয়ারি’ দিতে এ বার এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করতে কোমর বাঁধছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। যে মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার সক্রিয় হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি তথা প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, হাসানুলকে দ্রুত দোষী সাব্যস্ত করে সাজা কার্যকর করতে ইউনূস সরকারের এই তৎপরতার পিছনে জামাতের চাপ রয়েছে। কারণ, হাসিনার আমলে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী এবং পাকিস্তান বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগী একাধিক জামাত নেতাকে যুদ্ধাপরাধের কারণে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করা জামাত এখন তার বদলা নিতে চাইছে। অন্য দিকে ইউনূস প্রশাসন আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে চাইছে।

গত বছর পালাবদলের পরে ২৬ অগস্ট ৭৯ বছরের মুক্তিযোদ্ধা ইনুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আশি ছুঁইছুঁই এই নেতার বিরুদ্ধে ইউনূস সরকারের অভিযোগ, জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে কুষ্টিয়ায় ছ’জনকে হত্যার ঘটনায় তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে। গত ১ ডিসেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ২০ জন সাক্ষীর তালিকা পেশ করেছে সরকারপক্ষ। এ ছাড়া নথিহিসেবে তিনটি অডিয়ো ও ছ’টি ভিডিয়ো ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণও হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার ওই নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা কার্যকর করতে পারলে ‘এক ঢিলে অনেক পাখি’ মারতে পারবে সে দেশের বর্তমান প্রশাসন। হাসিনার আমলে মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর সহযোগী একের পর এক জামাত নেতার ফাঁসি হয়েছিল। ইনুকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে সাজা দিয়ে তার বদলা নিতে চায় জামাত এবং তার সহযোগীরা। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ইনু মুজিব-বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এই রকম এক জন মুক্তিযোদ্ধাকে চরম সাজা দিতে পারলে জামাত-সহ পাকিস্তানপন্থীরা যেমন উজ্জীবিত হবে, তেমনই আওয়ামী লীগকেও কড়া বার্তা দেওয়া যাবে।

বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের বক্তব্য, ‘‘এখনও পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও আসাদ্দুজামান কামালকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সরকার। কিন্তু তাঁদের সাজা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি। তাই ইনুর সাজা কার্যকর হলে আওয়ামী লীগের নিচু তলা পর্যন্ত বার্তা দেওয়া যাবে, হাতে পেলে তাঁদের দলের নেতৃত্বেরও এই পরিণাম হবে।’’

ওই বিশ্লেষকের মতে, ইনুকে সাজা দিলে ইউনূস সরকার এক দিকে যেমন বিরোধীদের মধ্যে ভীতি তৈরিকরতে পারবে, তেমনই আওয়ামী লীগের তৎপরতাও অনেকটা দমন করতে পারবে বলে তারা আশাবাদী। বর্তমানে হাসিনার দল বাংলাদেশে যে ভাবে সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে, তা কিছুটা হলেও থমকে যাবে। আওয়ামী লীগকে এই বার্তা দেওয়া যাবে, ‘দেখো সাজা দিয়ে দিলাম, ভারত তোমাদেরবাঁচাবে না’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ওই অংশের মতে, এ ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক দিকও রয়েছে। ওই জাসদ নেতার সাজা কার্যকর হলে প্রকারান্তরে বার্তা দেওয়া যাবে ভারতকেও। সকলকে নিয়ে নির্বাচনের জন্য নয়াদিল্লি যে চাপ বাড়াচ্ছে, তা-ও কিছুটা প্রশমিত করা যাবে। বাংলাদেশে থাকা ভারত-বন্ধুদের বাঁচাতে নয়াদিল্লি কোনও কঠোর পদক্ষেপও করতে পারবে না। দিল্লিকেও পা ফেলতে হবে অনেক বুঝেশুনে।

আরও পড়ুন