বাংলাদেশে ফিরছেন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। — ফাইল চিত্র।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার নিজমুখে এ কথা ঘোষণা করেছেন তারেক। সূত্রের খবর, আগামী ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। সঙ্গে একই বিমানে স্বদেশে ফিরবেন বিএনপি-র অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মীও।
গত শুক্রবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরও ঘোষণা করেছিলেন, আগামী ২৫ তারিখ বাংলাদেশে ফিরবেন তারেক। তবে এ বার তারেক নিজে দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করলেন। মঙ্গলবার লন্ডনের দ্য সিটি প্যাভিলিয়ন হলে বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্রিটেনের বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা জানান তারেক। সেখানে খালেদা-পুত্র বলেন, ‘‘আজ ১৬ ডিসেম্বর, আমাদের বিজয় দিবস। আমি বহু দিন আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু আগামী ২৫ তারিখে আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি।’’
সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন সূত্রে খবর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠেন। এর পর তারেক সমর্থকদের অনুরোধ করেন, তাঁর বিদায়ের দিন যেন কেউ বিমানবন্দরে উপস্থিত না হন। কারণ এমনটা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। এতে উল্টে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারেক আরও মন্তব্য করেন, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের পতন কোনও রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর একক কৃতিত্ব নয়। বরং, তা বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত অর্জন। এর কৃতিত্ব দেশের ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, নারী, শিশু-সহ সর্বস্তরের মানুষের।
সূত্রের খবর, আগামী ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট নাগাদ হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি২০২ বিমানে বাংলাদেশে রওনা দেবেন তিনি। একই বিমানে বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মী তারেকের সঙ্গে বাংলাদেশে যাবেন। ২৫ ডিসেম্বর বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে তাঁদের বিমান। জানা গিয়েছে, তারেকের দেশে যাওয়ার খবর শুনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী একই উড়ানের টিকিট জোগাড় করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু উড়ানের সব টিকিট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হন তারেক। ২০০৮ সালে জেল মুক্তির পর চিকিৎসার জন্য সপরিবার ব্রিটেনে চলে যান তিনি। সেই থেকে তারেক সে দেশেই রয়েছেন। লন্ডনে চিকিৎসা-পর্বের শেষে গত মে মাসে তাঁর মা খালেদা ঢাকায় ফেরেন। সে সময় তারেকের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জমানায় গ্রেনেড হামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তারেককে। গত ৩ নভেম্বর বিএনপির তরফে জানানো হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী–০১, বগুড়া–০৭ এবং দিনাজপুর–০৩ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক লড়ছেন বগুড়া-৬ আসনে। এর পরেই তারেকের দেশে ফেরা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের নির্বাচন এবং জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট রয়েছে। খালেদার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তারেককেই দলের ‘প্রধানমন্ত্রী মুখ’ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাদের একাংশ।