Israel-Hamas Conflict

ক্ষুধার্তের দল ব্যারিকেড ভাঙল বিতর্কিত ত্রাণশিবিরের! গাজ়ায় বিশৃঙ্খলা, পদপিষ্ট অনেকেই, গুলি চালাল ইজ়রায়েলি সেনা

রাফায় ক্ষুধার্ত বাসিন্দাদের জন্য খাবার এবং ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিল এক অসরকারি সংস্থা। সেখানে ব্যাপক হুড়োহুড়ি প়ড়ে যায়। খাবার ও ত্রাণ লুট হয় বলে জানা গিয়েছে। গুলি চালায় ইজ়রায়েলি সেনাও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ১২:৪৯
Some Palestinians have been killed in Gaza after the Israeli military opened fire on crowd

খাবারের জন্য হাহাকার গাজ়ায়। —ফাইল চিত্র।

গাজ়ায় বিতর্কিত ত্রাণশিবিরে বিশৃঙ্খলা। হুড়োহুড়ি, লুট, গুলি— মুহূর্তে রণক্ষেত্রে পরিণত হল ত্রাণশিবির। ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা এলাকায় ত্রাণবোঝাই ট্রাক থেকে খাবার বিলির আয়োজন করা হয়েছিল। সেই খাবার নিতে অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার প্যালেস্টাইনি। তীব্র গরম উপেক্ষা করেও খাবারের আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর হঠাৎই তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। ব্যারিকেড ভেঙে ত্রাণবোঝাই ট্রাকের দিকে বইতে শুরু করে জনস্রোত। শুরু হয় লুটপাট। অভিযোগ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা। প্রাণ বাঁচাতে আরও হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ভিড়ের মধ্যে। ঘটনায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অনেকে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাফায় ক্ষুধার্ত বাসিন্দাদের জন্য খাবার এবং ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিল ‘গাজ়া হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামে এক অসরকারি সংস্থা। সেখানে ব্যাপক হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। খাবার ও ত্রাণ লুট হয় বলে জানা গিয়েছে। গুলি চালায় ইজ়রায়েলি সেনাও। ঘটে পদপিষ্টের ঘটনা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই ঘটনায় কমপক্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। নিন্দা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। যদিও এই অসরকারি সংস্থার ত্রাণশিবির নিয়ে বিতর্ক ছিল আগে থেকেই। অভিযোগ, গাজ়ায় রাষ্টপুঞ্জকে কিছুটা অন্ধকারে রেখেই আমেরিকা এবং ইজ়রায়েল ত্রাণ দেওয়ার নামে সশস্ত্রবাহিনী প্রবেশ করাচ্ছে। সামরিক এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে ত্রাণশিবিরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু রাষ্ট্রপুঞ্জ নয়, অন্য সহায়ক সংস্থাগুলিরও আপত্তি ছিল জিএইচএফ নিয়ে। শুধু তা-ই নয়, এ-ও অভিযোগ ছিল, এই সংস্থার ত্রাণ বিলির অভিজ্ঞতা বা ক্ষমতা নেই। তবে এই সংস্থার তরফে জানানো হয়, তারা সোমবার থেকেই অন্তত রাফায় ত্রাণশিবির শুরু করেছে। তবে দ্বিতীয় দিনেই সেই ত্রাণশিবিরেই ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা।

কী ঘটেছিল ওই এলাকায়? প্যালেস্টাইনি এক যুবকের কথায়, ‘‘আমরা কয়েক জন ভিড়ের পিছনের দিকে ছিলাম। আচমকাই গুলির শব্দ শুনতে পাই। তার পরে দেখি সকলে দৌড়চ্ছে। আমরাও তাঁদের অনুসরণ করি। তবে সেই ভয় ছিল ক্ষণিকের। তা কখনওই অনাহারের থেকে বেশি নয়।’’

গাজ়ার হামাস প্রভাবিত সরকারি সংবাদমাধ্যমের অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইজ়রায়েলি দখলদারবাহিনী সাধারণ ক্ষুধার্তদের উপর সরাসরি গুলি চালিয়েছে। ক্ষুধার্তদের মানবিক সাহায্য দেওয়ার নাম করে ওই এলাকায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাফায় যা ঘটেছে তা একটি ইচ্ছাকৃত গণহত্যা। শুধু তা-ই নয় যুদ্ধাপরাধও বটে। ঠান্ডা মাথায় এই হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে।’’ অন্য দিকে, ইজ়রায়েলি সেনার বোমাবর্ষণে উত্তর গাজ়ার এক সাংবাদিকের বাড়িতে আট জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও খবর।

যদিও ইজ়রায়েলি সেনার তরফে দাবি করা হয়, তারা কোনও ক্ষুধার্তকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে শূন্যে গুলি চালানো হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় প্রায় তিন মাস ধরে বাইরে থেকে কোনও ত্রাণ ঢুকতে পারছিল না। ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছিল ইজ়রায়েল। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দিনকয়েক আগেই ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পিছু হটেছেন। গাজ়ায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন তিনি। তার পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের একাধিক ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গাজ়ায় প্রবেশ করেছে। শুধু রাষ্ট্রপুঞ্জ নয়, কিছু অসরকারি সংস্থার (এনজিও) ট্রাকও ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে। সেই তালিকায় ছিল আমেরিকা সমর্থিত ‘গাজ়া হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ও।

Advertisement
আরও পড়ুন