Food Crisis in Gaza

ক্ষুধার্তদের চিকিৎসা করছেন ক্ষুধার্তেরাই! তীব্র খাদ্যসঙ্কটের গ্রাসে গাজ়া, অনাহার-অপুষ্টিতে ভুগছে ৯ লক্ষের বেশি শিশু

গাজ়ায় খাদ্যসঙ্কট চরম সীমায় পৌঁছেছে। ২০ লক্ষের বেশি গাজ়াবাসী খাদ্য এবং জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে হাহাকার করছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ২২:১৬
More than nine lakhs children are going hungry in Gaza

খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে প্রায় গোটা গাজ়া। —ফাইল চিত্র।

দিনের পর দিন হাহাকার বাড়ছে গাজ়ায়! খাদ্যসঙ্কট যেন প্রতি দিনই তীব্রতর হচ্ছে। আর এই সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা। দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছেন গাজ়াবাসীর একটা বড় অংশ। হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে রোগীদের। তাঁদের চিকিৎসা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিকিৎসকেরাও! কারণ, তাঁদের পেটেও ‘দানাপানি’র অভাব! দিনের পর দিন এই অবস্থায় চিকিৎসা করতে গিয়ে গাজ়ায় অসুস্থের সংখ্যাও নেহাত কম নয়!

Advertisement

দক্ষিণ গাজ়ার অন্যতম নাসের হাসপাতালের চিকিৎসক মহম্মদ সাকের। সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে খবর, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করতে করতে আচমকাই জ্ঞান হারান তিনি। ছুটে আসেন অন্য চিকিৎসকেরা। স্যালাইন, ওষুধ দিয়ে কিছুটা সুস্থ করানো সম্ভব হয় তাঁকে। কিন্তু তার পরেও সাকের বাড়ি যাওয়ার ফুরসৎ পাননি। খানিক সুস্থ হয়ে আবার রোগী দেখতে শুরু করেন। সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই চিকিৎসক জানান, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ক্ষুধার্ত ছিলেন তিনি। খাদ্য বলতে শুধু জল জুটেছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও কোনও খাবার নেই। ন্যূনতম চিনিটুকুও নেই।’’

শুধু একা সাকের নন, চিকিৎসা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়া চিকিৎসকের সংখ্যা গাজ়ায় দিনে দিনে বাড়ছে। সাকের জানান, সাম্প্রতিক দিনগুলিতে কর্মক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে পড়া তাঁর সহকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষুধা এবং ক্লান্তিতে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক এবং নার্সেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

উত্তর গাজ়ার আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালের ডিরেক্টর চিকিৎসক ফাদেল নঈম সিএনএন-কে জানান, তাঁর হাসপাতালের অনেক সহকর্মী ক্ষুধা এবং অপুষ্টির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই সপ্তাহে অস্ত্রোপচার চলাকালীন দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ফাদেলের কথায়, ‘‘আমি যে হেতু হাসপাতালের ডিরেক্টর, তাই আমার অন্যতম কাজই হল সহকর্মীদের জন্য খাবার খুঁজে বার করা। কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছি কই! আমরা যদি এখন দিনে এক বেলা খাই, তবে নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করি। ওই অবস্থাতেই আমাদের ২৪ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন সম্ভব, তা বুঝতে পারছি না।’’

সাকের তাঁর হাসপাতালের ডিরেক্টর হওয়া সত্ত্বেও অন্য চিকিৎসকদের মতো তিনিও এক বেলা খেতে পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শারীরিক ভাবে ক্লান্ত। আমাদের এমন রোগীদের চিকিৎসা করতে হচ্ছে, যাঁদের শারীরিক অবস্থা আমাদের মতোই। ক্ষুধার্ত ক্ষুধার্তদের চিকিৎসা করছেন।’’ হাসপাতালের ক্যান্টিনে খাবার নেই। চিকিৎসক, নার্সেরা এক বেলা কোনও রকমে খেতে পাচ্ছেন। আবার অনেকে এমনও রয়েছেন, যাঁরা দু’বেলা খেতে পাচ্ছেন না! সাকেরের দাবি, তাঁর হাসপাতালে যে রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসছেন, তাঁরা আদৌ ‘মানুষ’ কি না, তা নিয়ে মাঝেমধ্যে ভ্রম হয়। কারণ প্রায় সকলের শরীরই কঙ্কালসার।

পরিস্থিতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্টাচ্ছে। উন্নতির লক্ষণ তো নেই-ই, বরং দিনে দিনে অবনতি ঘটছে। গাজ়ার চিকিৎসকদের মতে, তাঁদের ক্লিনিকগুলিতে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার গত দুই সপ্তাহে তিন গুণ বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গাজ়ায় ন’লক্ষেরও বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। প্রতি দিনই সেই সংখ্যা বাড়ছে।

তবে শুধু অনাহার নয়, গাজ়াবাসীকে লড়াই করতে হচ্ছে ইজ়রায়েলি হামলার সঙ্গেও। যদিও প্রতি দিনই হামলার তীব্রতা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে ইজ়রায়েলি সেনা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এখন গাজ়ায় খাদ্যসঙ্কট চরম সীমায় পৌঁছেছে। ২০ লক্ষের বেশি গাজ়াবাসী খাদ্য এবং জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে হাহাকার করছেন।

গাজ়ায় ঘরবন্দি বহু মানুষ। ঘর থেকে বার হলে গোলাগুলিতে মৃত্যুর আশঙ্কা! কিন্তু ঘরে খাবার নেই, সঙ্কট ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসেরও। তবে বাইরেও যে খাবার, ওষুধের খুব একটা সরবরাহ আছে, তা-ও নয়! চারপাশে শুধুই হাহাকার। খাবার নেই, ওষুধ নেই, প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব। গাজ়ার এই পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মঙ্গলবার এক ভাষণে তিনি গাজ়ার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু এবং ধ্বংসের এমন এক স্তরে রয়েছে, যার তুলনা নেই।’’

খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণের জন্য গাজ়াবাসীর ভরসা ত্রাণশিবির। গাজ়ায় পরিচালিত ইজ়রায়েল-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণকারী সংগঠন গাজ়া হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নিয়েও প্রশ্নের অন্ত নেই। তাদের ত্রাণশিবিরে খাবার আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে তার পরেও সামান্য খাবারের জন্য প্রাণ হাতে নিয়ে ত্রাণশিবিরে ভিড় করছেন প্যালেস্টাইনিরা। যদিও অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

Advertisement
আরও পড়ুন