ভারতকে ফের হুঁশিয়ারি পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের। —ফাইল চিত্র।
ভারতকে ‘লাল দাগ’ পেরোতে দেওয়া হবে না। এমনটাই দাবি করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তাজ়িকিস্তানে হিমবাহ সংরক্ষণ বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গ ওঠে। শাহবাজ় আরও এক বার দাবি করেন, সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত পাকিস্তান মেনে নেবে না। তার পরেই ‘রেড লাইন’ বা লাল দাগের কথা বলেন তিনি।
গত ২৯ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তাজ়িকিস্তানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ৮০টি সদস্যরাষ্ট্রের আড়াই হাজারের বেশি প্রতিনিধি ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। রয়েছে অন্তত ৭০টি আন্তর্জাতিক সংগঠন। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির পর পাক প্রধানমন্ত্রী চারটি ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রে সফর ঘোষণা করেন। ইরান, তুরস্ক, আজ়ারবাইজানের সঙ্গে সেই তালিকায় ছিল তাজ়িকিস্তানের নামও। যে সমস্ত দেশ ভারত-পাক সংঘাতের আবহে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানাতে শাহবাজ়ের এই চতুর্দেশীয় সফর। আপাতত তিনি তাজ়িকিস্তানে আছেন এবং সেখানকার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার ওই সম্মেলন থেকে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে, তা একতরফা এবং বেআইনি। এই চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল বণ্টিত হয়। এ ভাবে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য লক্ষ লক্ষ জীবন বাজি রাখা উচিত নয়। পাকিস্তান এটা মেনে নেবে না। আমরা ভারতকে লাল দাগ অতিক্রম করতে দেব না।’’ সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার মাধ্যমে ভারত জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে, দাবি শাহবাজ়ের।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। তার মধ্যে অন্যতম সিন্ধু চুক্তি স্থগিত রাখা। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরের দিনই ভারত সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, সিন্ধু চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে পাকিস্তানে সেনা অভিযান চালায় ভারত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। প্রত্যাঘাতের সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়েছিল এর পর। দুই দেশের মধ্যে টানা চার দিন সংঘাত চলেছে। পরে ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু সিন্ধু চুক্তি নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেনি নয়াদিল্লি। সংঘর্ষবিরতি ছাড়া আর কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়। বার বার জানানো হয়েছে, ওই চুক্তি স্থগিত থাকবে।
পাকিস্তান প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। এই ঘটনার নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা। পাক প্রধানমন্ত্রী এর আগেও দাবি করেছিলেন, সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না। কারণ, সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জলের উপর পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জীবন নির্ভর করে আছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ইসলামাবাদ। তবে সিন্ধু চুক্তির বিষয়ে ভারতের অবস্থান এখনও অনড়।