Russia-Ukraine War

ডনবাস নিয়ে দড়ি টানাটানি! পুতিন চান দখল, বেঁকে বসেছেন জ়েলেনস্কি, শান্তি আলোচনায় কী গুরুত্ব ইউক্রেনের এই অংশের?

ইউক্রেনকে নেটোর সদস্য হতে দিতে রাজি নন পুতিন। ২০২২ সালে ইউক্রেনের উপর হামলার সময় এটাই ছিল তাঁর মূল দাবি। কিন্তু অনেকের মতে, সেই দাবি আড়ালে লুকিয়ে ছিল ডনবাস দখলের আশা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ১৪:২৪
Peace talks beetween Russia and Ukraine lead to the Donbas

(বাঁ দিকে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আদৌ বন্ধ হবে? ফিরবে শান্তি? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি রাশিয়া এবং ইউক্রেন— দুই দেশের প্রেসিডেন্টকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারবেন? এমন নানা সমস্যার সমাধানের কেন্দ্রে রয়েছে ডনবাস! ইউক্রেনের ভূখণ্ডের এই অংশ নিয়েই যত গন্ডগোল। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চান, ডনবাসের পূর্ণ দখল। কিন্তু ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি সেই প্রস্তাবে রাজি নন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ডনবাস নিয়ে দুই পক্ষের টানাপড়েন ভেস্তে দিতে পারে দুই দেশের শান্তি আলোচনা।

Advertisement

ডনবাস জ়েলেনস্কির কাছে শুধু দেশের অংশ নয়, আবেগেরও বিষয়। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ডনবাসের শহরগুলিকে নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধার করার সময় লড়াই করেছিলেন জ়েলেনস্কির দাদা। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় সেই আবেগের কথা বলেছেন জ়েলেনস্কি। ইউক্রেনে ফিরেও বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেই লড়াইয়ে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এটি আমাদের ইতিহাসের একটি বেদনাদায়ক মুহূর্ত। কারও কারও কাছে যতটা সহজ মনে হয়, বিষয়টা ততটা সহজ নয়।’’

পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস রাশিয়ার কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ? এটি একটি খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল। ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল একত্রে ডনবাস নামে পরিচিত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের একটি বড় অংশ ডনবাসেই হয়েছে। হাজার হাজার সেনার মৃত্যু দেখেছে ডনবাস। ধীরে ধীরে ডনবাস দখলের লক্ষ্যে এগোচ্ছে রাশিয়া। তবে এখনও এই অংশের আড়াই হাজার বর্গমাইল এলাকা রুশ মুক্ত। মস্কোর দাবি, ইউক্রেন যেন ওই অংশ ছেড়ে দেয়।

অনেকের মতে, ইউক্রেন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডনবাসের দখল চাইছেন পুতিন। ইউক্রেনকে নেটোর সদস্য হতে দিতে রাজি নন তিনি। ২০২২ সালে ইউক্রেনের উপর হামলার সময় এটাই ছিল পুতিনের মূল দাবি। কিন্তু অনেকের মতে, সেই দাবি আড়ালে লুকিয়ে ছিল ডনবাস দখলের আশা। তবে জ়েলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছে ‘জমি ছাড়ার’ বিষয়টি সংবিধান বিরোধী। তা কখনওই মানতে পারবেন না তিনি। তবে জ়েলেনস্কি মুখে যাই বলুন না কেন, তিনি জানেন দু’নৌকায় পা দিয়ে চলতে পারবেন না। হয় তাঁকে ইউক্রেনীয়দের ইচ্ছার বিরোধিতা করে ডনবাস ছেড়ে দিতে হবে, নয়তো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্রোধের সামনে পড়তে হবে। ইউক্রেনের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ভাদিম প্রিস্টাইকোর মতে, ‘‘ডনবাস একটি বিষের বড়ি। তবে ইউক্রেনকে এটা গিলতে হবে। তার পর দেখতে হবে কী ভাবে তা হজম করা যায়।’’

ডনবাস যদি ছাড়তে হয় তবে তা কী ভাবে ইউক্রেনীয়দের রাজি করাবেন জ়েলেনস্কি? তা নিয়ে জল্পনা চলছে। প্রাক্তন ইউক্রেনীয় কর্তা এবং বিশ্লেষকদের মতে, ডনবাস ছাড়ার জন্য আমেরিকা-সমর্থিত নিরাপত্তার তাস খেলতে হবে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টকে। শান্তি চুক্তিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টির উপর জোর দেবেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বাস করে, ‘জমি বিনিময়’-এর প্রস্তাব মেনে নেওয়া উচিত ইউক্রেনের। কারণ শীঘ্রই ডনবাসের পতন ঘটবে। তখন আর আলোচনার জন্য ইউক্রেনের কাছে কোনও কার্ডই থাকবে না।

ডনবাস ছেড়ে দিলেই কি রাশিয়ার আক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে? অনেকের মতে, ডনবাস ছেড়ে দেওয়ার অর্থ, এমন শহর রাশিয়াকে হস্তান্তর করা, যা থেকে ভবিষ্যতে আক্রমণ শুরু করতে পারে রুশ বাহিনী। ডনবাসকে এক সময় ‘রুশপন্থী’ হিসাবে ধরা হত। সেই সময় প্রায় ৬৭ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় সকলে রুশ ভাষায় কথা বলতেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। তবে ২০১৪ সালে ইউরোপপন্থী বিক্ষোভের আঁচে গদি ছাড়া হতে হয় ইয়ানুকোভিচকে। তার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায় ডনবাস।

Advertisement
আরও পড়ুন