(বাঁ দিকে) জামাত প্রধান শফিকুর রহমান এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
অশান্ত বাংলাদেশে নিরাপত্তাগত ঝুঁকি থাকায় রাজনীতিক, সংবাদপত্রের সম্পাদক-সহ মোট ২০ জনকে নিরাপত্তা দিতে চলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এই তালিকায় রয়েছেন জামায়াতে ইসলামী (যা জামাত নামেই পরিচিত)-র প্রধান শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং অন্য বেশ কয়েকটি দলের রাজনীতিকেরা।
‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এর খবর অনুযায়ী, সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আইনশঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে মোট ২০ জনকে সরকারি নিরাপত্তার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর দাবি করেছেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি শান্ত। তবে ওই ২০ জনের নিরাপত্তাগত ঝুঁকির বিষয়টি বিশ্লেষণ করেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই ২০ জনের জন্য সরকার এ বার থেকে নিরাপত্তারক্ষীর বন্দোবস্ত করবে। ২০ জনের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর সম্পাদক। রয়েছেন এনসিপি-র শীর্ষস্তরের বেশ কয়েক জন নেতাও। নাহিদ ছাড়াও সরকারি নিরাপত্তা পাবেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তর) সার্জিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণ) হাসনত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, তাসনিম জারা এবং আখতার হোসেন। তা ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন অন্য বেশ কিছু দলের নেতা। তালিকায় না-থাকলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক, সদ্য প্রয়াত ওসমান হাদির পরিবারকেও বিশেষ নিরাপত্তা দিচ্ছে ইউনূস সরকার।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র মারফত আগেই জানা গিয়েছিল যে, দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের ১৫ জন রাজনীতিক আগ্নেয়াস্ত্র রাখার লাইসেন্স বা নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। নাম প্রকাশ না-করার শর্তে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা ‘প্রথম আলো’-কে জানান, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার পর নিরাপত্তা চেয়ে রাজনীতিবিদদের আবেদন ও খোঁজখবর নেওয়া বেড়েছে। তবে তার আগেও কয়েক জন নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, অপব্যবহারের আশঙ্কায় আগ্নেয়াস্ত্রের ঢালাও লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা নেই সরকারের। তাই প্রয়োজনীয়তা বুঝেই লাইসেন্স দিতে চাইছে তারা।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হাদি। তাঁকে সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। ছ’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে। হাদির হত্যাকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলায় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় ঝলসে মৃত্যু হয়েছে বেলালের সাত বছরের শিশুকন্যার। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেলাল এবং তাঁর আরও দুই নাবালিকা কন্যা। সোমবার বাংলাদেশের খুলনায় নাহিদ ইসলামের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র নেতা মহম্মদ মোতালেব শিকদারকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক নেতার উপর হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল।