Russia Ukraine Conflict

১১৭টি ড্রোন দিয়ে মুহুর্মুহু হামলা, ঠিক যেন ‘মাকড়সার জাল’! ৪০টি রুশ বিমান ধ্বংসের নেপথ্যে কোন কৌশল? ফাঁস করলেন জ়েলেনস্কি

গোপন ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মাকড়সার জাল’। মোট ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করে ওলেনিয়া, বেলায়া এবং মস্কোর পূর্বে অবস্থিত ইভানোভো ও দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটির ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বিমানগুলিতে আঘাত হেনেছিল ইউক্রেন। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৪০টিরও বেশি রুশ সামরিক বিমান।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ১০:০৬
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার দৃশ্য।

রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার দৃশ্য। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।

‘অপারেশন মাকড়সার জাল’! সাঙ্কেতিক নাম এটাই। অভিযানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল আজ থেকে ঠিক এক বছর ছ’মাস আগে। তার পর থেকে দেড় বছর ধরে চলেছিল প্রস্তুতি। কিন্তু কোন কৌশলে রবিবার দুপুরের ড্রোন হামলায় ৪০টিরও বেশি রুশ সামরিক বিমান ধ্বংস করল ইউক্রেন? এ বার সেই রণকৌশল ফাঁস করলেন খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি।

Advertisement

রবিবার রাশিয়ার ইরকুটস্ক অঞ্চলের স্রেডনি জনবসতির কাছে অবস্থিত ওলেনিয়া বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে বড়সড় ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। নিশানায় ছিল আরও তিনটি বিমানঘাঁটি। বেছে বেছে সামরিক বিমানগুলি লক্ষ্য করে নিখুঁত হামলা চালানো হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ৪০টিরও বেশি রুশ সামরিক বিমান। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ)-এর দাবি, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমানগুলির মধ্যে ছিল টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২। দু’টিই যুদ্ধে ব্যবহৃত বোমারু বিমান, যা সাধারণত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। হামলার পর পরই ইউক্রেনের সেনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট। এই অভিযানকে ‘অসাধারণ’ বলেও অভিহিত করেছেন জেলেনস্কি। তাঁর দাবি, এই হামলায় রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে— যা সম্পূর্ণ ‘ন্যায্য’ এবং ‘রাশিয়ার প্রাপ্য’।

জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, গোপন ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মাকড়সার জাল’। মোট ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করে ওলেনিয়া, বেলায়া এবং মস্কোর পূর্বে অবস্থিত ইভানোভো ও দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটির ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বিমানগুলিতে আঘাত হেনেছিল ইউক্রেন। জ়েলেনস্কির কথায়, ‘‘নিশানায় ছিল রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। রাশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে তিনটি ভিন্ন ‘টাইম জ়োনে’ কাজ করছিল আমাদের সেনা। অভিযানের প্রস্তুতির জন্য প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছিল। পরিকল্পনা করা, এবং সংগঠিত ভাবে সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টা— প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি নিখুঁত ভাবে সম্পাদিত হয়েছিল। ফলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা যেতে পারে যে এই অভিযান সব দিক থেকেই ছিল অনন্য।’’

জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর ছ’মাস আগে এই অভিযানে অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে চলেছে লাগাতার প্রস্তুতি। সেই পরিকল্পনাই এত দিনে বাস্তবায়িত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ৪০টিরও বেশি রুশ সামরিক বিমান সফল ভাবে ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। তবে কেবলমাত্র সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। সে কারণে অভিযানের আগে ওই এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ অঞ্চলে সরিয়েও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে হামলা চালানোর কিছু ক্ষণ আগে গোয়েন্দা সূত্রে খবর মেলে, পৃথক একটি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়াও। সে জন্যই তড়িঘড়ি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ইউক্রেন। জ়েলেনস্কির কথায়, ‘‘গত রাত্রে প্রায় ৫০০টি রুশ ড্রোন আকাশে উড়ছিল। প্রতি সপ্তাহেই তারা হামলায় ব্যবহৃত ড্রোনের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছে। এখন তারা নৌবহর থেকে নিক্ষেপে সক্ষম ক্যালিবার ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করছে। আমরাও যে কোনও উপায়ে দেশ এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করব।’’

ইস্তাম্বুলে মস্কো এবং কিভের শান্তি আলোচনার এক দিন আগে ইউক্রেনের এই হামলায় বদলে গিয়েছে সমস্ত সমীকরণ। অন্য দিকে, একই দিনে ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে রাশিয়াও। ওই ঘটনায় ইউক্রেনের ১২ জন সেনার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন