কলকাতার বুকেই এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে অল্প ব্যয়েই আপনি অন্দরসজ্জার টুকিটাকি কেনাকাটা করতে পারবেন
অনেকেই একটা কথা মেনে চলেন— ‘ঘর হল মানুষের মনের আয়না’। অর্থাৎ আপনার ঘরের অবস্থা দেখলে মানুষ আপনার মনের অবস্থাও অনুভব করতে পারবে। ফলে আপনার অন্দরমহল যদি হয় সুদৃশ্য, তবে শরীর মনও থাকবে ভাল। এখনকার প্রজন্ম তাই ঘর সাজানোর দিকে ঝুঁকেছে অনেকটাই। আর বাঙালি সব সময়ই খরচের চিন্তায় ভোগে, এমন দুর্নাম রয়েছে আমাদের। বাস্তবিক, ঘর সাজানোর কথা মনে করলেই মধ্যবিত্ত কলকাতাবাসীর কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। অথচ কলকাতার বুকেই এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে অল্প ব্যয়েই আপনি অন্দরসজ্জার টুকিটাকি কেনাকাটা করতে পারবেন নিশ্চিন্তে।
নিউ মার্কেট হোক গন্তব্য
ঘর সাজানোর জন্য কলকাতার মানুষ শরণাপন্ন হতে পারেন নিউ মার্কেটের বিভিন্ন পুরনো দোকানেরও। বাইরে থরে থরে সফট টয় বিক্রি হতে দেখে অনেকেই মানতে চান না যে নিউ মার্কেটের ভিতরে ঘর সাজানোর জিনিসপত্রের একাধিক দোকান রয়েছে। যেখানকার জিনিস চোখ জুড়িয়ে দেবে অথচ পকেটেও টান ফেলবে না। ব্যতিক্রমী দুয়েকটি জিনিসেই ঘরের ভোল বদলে দিতে পারে এমন অনেক দিনের পুরনো কয়েকটি দোকান রয়েছে নিউ মার্কেটের আনাচেকানাচে।
ব্যতিক্রমী দুয়েকটি জিনিসই ঘরের ভোল বদলে দিতে পারে
রাস্তার ধারেই আছে মুশকিল-আসান
বাসে, ট্যাক্সিতে বা গাড়িতে যাতায়াত করতে করতে কলকাতার বড় বড় রাস্তার এক-এক ধারে আমাদের অনেকেরই চোখে পড়ে চিনে মাটির তৈরি ঘর সাজানোর জিনিসের বিপুল সম্ভার। একটু সময় নিয়ে দাঁড়ালে দেখা যাবে, এখানে রয়েছে বাসনপত্র থেকে শুরু করে ফুলের টব, ঝোলানো ঘণ্টা, ওয়ালহ্যাংগিং প্লেট, কারুকাজ করা মূর্তি ইত্যাদি আরো কত কি! বাইপাস, লেকটাউন, যশোর রোডের ধারে এমন বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে কারিগররা রাস্তার ধারেই তাঁবু খাটিয়ে বাস করেন সপরিবারে। এবং সবাই মিলে প্রতিদিন পরিশ্রম করে শৌখিন ক্রেতাদের অন্দরসজ্জার জন্য তৈরি করেন এসব জিনিস।
ছোট থেকে বড়, নতুন থেকে সাবেকি, অন্দরসজ্জার বিবিধ উপকরণ
গড়িয়াহাটকে ভুলে গেলে চলবে না
চিনেমাটির জিনিস, বিছানার চাদর, বালিশের ওয়াড়, ফ্যাশনেবল পর্দা, দেওয়ালে টাঙানোর ছবি, হরেক রকমের আলো— এই সব জিনিস আপনি পেয়ে যেতে পারেন গড়িয়াহাটের বিশাল বাজার চত্বরে। আপনার পছন্দের বহু তারকাই কিন্তু অনেক বছর ধরে এই গড়িয়াহাটে খুঁজে নেন নিজের নিজের পছন্দের ঘর সাজানোর জিনিস। এখানে আপনি পাবেন ছোট থেকে বড়, নতুন থেকে সাবেকি, অন্দরসজ্জার বিবিধ উপকরণ। সারা পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এখন সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন কারিগরেরা তাঁদের নিজস্ব কাজ বিক্রির জন্য এখানে পাঠিয়ে দেন। জহুরির চোখ থাকলে এসব জিনিসের মধ্যে থেকে আপনি খুঁজে পেয়ে যাবেন অল্প ব্যয়েই ঘর সাজানোর এমন অনেক কিছু যা বাসস্থানের চেহারা করে ফেলবে আগাগোড়া অন্য রকম।
বৈচিত্র্য পেতে যেতেই হবে দক্ষিণাপণ
অন্দরসজ্জায় শৈল্পিক স্পর্শ আনতে চাইলে আপনার গন্তব্য হতে পারে গড়িয়াহাট থেকে অল্প একটু দূরের দক্ষিণাপণ শপিং কমপ্লেক্স। এখানে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত দোকান রয়েছে যেখানে সারা ভারতবর্ষের নিজস্বতার ছোঁয়া আপনি পাবেন সহজে। গুজরাটি কারুকাজের পর্দা, ওয়ালহ্যাংগিং, ওড়িশার বেশ কিছু অন্দরসজ্জার জিনিস, কাশ্মীরি কাজের বাক্স, চাদর, বাঙালি ছৌ নাচের মুখোশ, রাজস্থানি কাজের বিছানার চাদর, কুশন, ছোট আলমারি, পূর্ব ভারতের মাদুরের তৈরি ছোটখাটো জিনিস, দক্ষিণ ভারতীয় আয়না প্রভৃতি আপনি পেয়ে যাবেন এই চত্বরে। পকেটে বিশেষ টান না ফেলে নিজের ঘরে ব্যতিক্রমী আবেদন আনতে চাইলে কলকাতার মানুষকে দক্ষিণাপণে একবার অন্তত পদার্পণ করতেই হবে।