Home Remedies for Sleep Apnea

দেবী দুর্গার হাতের শঙ্খেই রোগমুক্তি, কী জানাচ্ছেন গবেষকেরা?

দিনে দিনে বাড়ছে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ আক্রান্তের সংখ্যা। ওষুধ ছাড়াই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় খুঁজে পেলেন জয়পুরের গবেষকেরা। হিন্দু সংস্কৃতি ও রীতিনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শঙ্খই দেখাচ্ছে রোগনিরাময়ের পথ

Advertisement
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ০১:১৭
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

দেবী দুর্গাকে শঙ্খ দিয়েছিলেন বরুণদেব। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, শঙ্খ বাজিয়েই মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন দেবী দশপ্রহরণধারিণী। হিন্দু ধর্মের নানান আচারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে শঙ্খ। নিত্যদিনের পুজো থেকে তুলসিতলায় সন্ধ্যাবাতি, বধূবরণ থেকে সন্ধ্যারতি এমন কোনও শুভ অনুষ্ঠান নেই যেখানে শঙ্খের প্রয়োজন পড়ে না। মনে করা হয়, সকাল-সন্ধ্যে শাঁখে ফুঁ দিলে বাড়িতে অমঙ্গল প্রবেশ করতে পারে না। সেই শাঁখে ফুঁ দিয়েই ঘটছে রোগমুক্তি। সদ্য এমনই দাবি করছেন জয়পুরের ইটারনাল হার্ট কেয়ার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক। তাঁদের মতে, নিয়মিত শাঁখ বাজালে ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র (ওএসএ) একাধিক উপসর্গ থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

Advertisement

ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে না পারার সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বলা হয়। এই রোগের ক্ষেত্রে ঘুমোনোর সময়ে শ্বাসনালির উপর চাপ পড়ে, যার জেরে শ্বাসপ্রক্রিয়া বাধা পায়। রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ কমে। নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়। ঘুম ব্যাহত হওয়ায় দিনের বেলায় তন্দ্রাচ্ছন্নভাব থাকে। এই রোগে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এমনকী ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র কারণে ঘুমের মধ্যে আচমকা শ্বাসপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত যোগব্যায়াম, শরীরচর্চার মাধ্যমে দেহের ওজন ও স্থূলত্ব কমানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

জয়পুরের ইটারনাল হার্ট কেয়ার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত শঙ্খ বাজানোর ফলে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ থেকে রেহাই মিলতে পারে। রাতে ভাল ঘুম হয়। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না। এতে কোনওরকম ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম ছাড়াই ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

২০২২ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জয়পুরের গবেষকেরা ৩০ জন ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ রোগীর মধ্যে শাঁখ বাজানো নিয়ে সমীক্ষা চালান। রোগীদের বয়স ছিল ১৯ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। ত্রিশ জনের মধ্যে ১৬ জনকে শাঁখ বাজাতে বলা হয়, প্রশিক্ষণও দিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন শাঁখ বাজাতে বলা হয় তাঁদের। বাকিদের প্রাণায়ম করতে বলা হয়। ছ’মাস পর দেখা যায়, ওই ষোলো জনের ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ সংক্রান্ত একাধিক উপসর্গ কমে গিয়েছে। তাঁদের ঘুমের সমস্যা কমেছে, অক্সিজেনের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে রক্তে। দিনের বেলা তাঁদের আর ঘুম ঘুম ভাব থাকছে না। তবে শঙ্খে ফুঁ দিলে যে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ সেরে যাবে, এখনই সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নারাজ গবেষকেরা। আরও বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে এই সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ (ট্রায়াল) চালাতে চান তাঁরা। তাতে সাফল্য এলে ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র রোগীরা স্থায়ী রোগমুক্তির পথ পাবেন বলেই মত গবেষকদের।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement
আরও পড়ুন