Joint Entrance Exam Result 2025

সম্পাদক সমীপেষু: মেধার অপচয়

কত মেধা যে রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেই সংবাদ কি রাজ্য সরকারের অজানা? প্রয়োজন ছিল কি ভোটের তাগিদে ওবিসি সংরক্ষণের নামে এই জটিলতা সৃষ্টি করে এত ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার?

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ০৪:০৫

পার্থ প্রতিম বিশ্বাসের ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি’ (১৮-৭) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন, শিক্ষাক্ষেত্রে যে সমস্ত বিষয় ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে, সেই ক্ষেত্রে জটিল মামলাগুলির দ্রুত শুনানি করে যত শীঘ্র সম্ভব নিষ্পত্তি কি করা যায় না? সদ্য প্রকাশিত হয়েছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক দেরি করে। ফলে এঞ্জিনিয়ারিং-এ ছাত্রছাত্রীরা সময়মতো ভর্তি হতে পারেনি। তাদের অনেককেই অন্য রাজ্যের কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হয়েছে। এই ভাবে কত মেধা যে রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেই সংবাদ কি রাজ্য সরকারের অজানা? প্রয়োজন ছিল কি ভোটের তাগিদে ওবিসি সংরক্ষণের নামে এই জটিলতা সৃষ্টি করে এত ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার? একে তো এ রাজ্যে কোনও শিল্প না থাকার দরুন কর্মসংস্থানের বাজারে বিগত কয়েক বছর ধরে খরার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। তার উপর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগটাও যদি নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে আর রইলটা কী? এঞ্জিনিয়ারিং-এর কাউন্সেলিং পর্যায়ে প্রায় প্রতি বছর যে ধূসর চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা রাজ্য সরকারের সুচতুর পরিকল্পনা নয় কি? কোনও সরকারই সম্ভবত কখনও চায় না নিজের রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা উপযুক্ত শিক্ষালাভ করে নিজেদের অধিকার অর্জন করুক। ভবিষ্যৎপ্রজন্ম উচ্চশিক্ষিত হলে তা সরকারের স্বার্থসিদ্ধির পরিপন্থী হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে রাখাই সরকারের প্রচেষ্টা এবং এই প্রক্রিয়া সর্বত্র বিদ্যমান।

এ ক্ষেত্রে একমাত্র আদালতই পারে অতিরিক্ত সময় নষ্ট না করে দ্রুত শুনানির মাধ্যমে মামলাগুলির নিষ্পত্তি করতে। শিক্ষার ক্ষেত্রে এক-একটি দিন নষ্ট হওয়া মানে ছাত্রছাত্রীদের প্রভূত ক্ষতির দিকে ঠেলে দেওয়া। বিচার পর্ব দ্রুত সমাধা হলে ছাত্রছাত্রীরা পছন্দসই ক্ষেত্রে সময়মতো ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে পঠনপাঠন শুরু করতে পারবে!

সুব্রত সেন গুপ্ত, কলকাতা-১০৪

বই থেকে দূরে

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভরসা থাক বই-খাতাতেই’ (১৯-৭) শীর্ষক প্রবন্ধটি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল অভিমুখী গতির বিরুদ্ধে সময়োচিত একটি সতর্কবার্তা। কোভিডকালে স্কুল-কলেজ যখন বন্ধ, তখন অনলাইন শিক্ষা চালুর জন্য সরকারের তৎপরতার আড়ালে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’-এর অন্ধকার গ্রাসে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা-ভবিষ্যৎটি যে তলিয়ে গেল, তা সরকার গ্রাহ্যের মধ্যে নিল না। যদিও বেশ কিছু চিন্তাশীল মানুষ এবং কিছু সংবাদমাধ্যম আলোচনায় আশঙ্কাটি তুলে ধরেছিলেন। একই রকম তৎপরতায় সরকার কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ চালু করে দিয়েছিল। সেখানে ১২.৫ অনুচ্ছেদে ‘মুক্ত ও দূরশিক্ষা’কে ক্লাসরুম-শিক্ষার সমমানের করার কথা বলে তাকে প্রসারিত করা হবে বলে নিদান দেওয়া হয়েছিল। এখন নানা অজুহাতে (প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নির্বাচন ইত্যাদি) স্কুল বন্ধের ঘোষণা করা হয়। এবং শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে বলা হয়। ছাত্রছাত্রীরা যত বেশি মোবাইলে ঢুকে থাকে, তত বই থেকে তারা দূরে সরে যায়। আজকাল গল্পের বই পড়ার অভ্যাস উঠে যেতে বসেছে। পড়াশোনা শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়টুকু বেছে নেওয়া নয়, আরও অনেক কিছু, যা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সমাজমনকে গড়ে তোলে। বিভিন্ন মনীষীর বই-পড়া বা স্কুলের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের সাহচর্যের এখানে একটা বড় ভূমিকা থাকে। এ জন্যই রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষা চিন্তায় গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছিলেন। যন্ত্রনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় আর যা-ই হোক, চরিত্র সাধনা বা মানুষ গড়ার লক্ষ্য থাকে না। তাই আজকের যুগোপযোগী মূল্যবোধ শিক্ষার এই ব্যবস্থায় ব্রাত্য হয়ে উঠেছে। জীবনে আর্থিক প্রতিষ্ঠাটাই মুখ্য হয়ে উঠছে।

নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণার অব্যবহিত পরেই ইউজিসি-র মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় ‘ব্লেন্ডেড মোড অব টিচিং অ্যান্ড লার্নিং’-এর যে পরিকল্পনা ঘোষিত হয়েছে, তাতে বর্তমান ক্লাসরুম পড়াশোনা কার্যত তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। গোটা উচ্চশিক্ষাই মোবাইল, ট্যাব, অনলাইন শিক্ষার অ্যাপ ব্যবসায়ী দেশি-বিদেশি কর্পোরেট সংস্থার মুনাফার পাহাড় সৃষ্টির পরিকল্পনা হয়ে দাঁড়াবে।

তপন চক্রবর্তী, কলকাতা-৩৪

হাঁড়ির হাল

এক দিকে যখন হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ফলে শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলিতে রীতিমতো পঠনপাঠনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, অন্য দিকে তেমনই রাজ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে বন্ধ। সর্বসাকুল্যে মাত্র হাজার দশেক বর্তমান শিক্ষকের মধ্যে আগামী পাঁচ বছরে আরও কয়েক হাজার শিক্ষক অবসর নেবেন। এমতাবস্থায় রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে বৃত্তিমূলক পঠনপাঠন কী ভাবে বজায় থাকবে, উঠছে প্রশ্ন।

২০০৫ সালে পূর্বতন বাম জমানায় বিধানসভায় বিল পাশ করিয়ে, আইন করে রাজ্যে শিক্ষা এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে কাজ শিখিয়ে দ্রুত রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষার অভিষেক ঘটেছিল। কিন্তু আজ প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেলেও শুধুমাত্র ঠিক পদক্ষেপের অভাবে রাজ্যের বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার করুণ দশা আরও এক বার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল। বিগত বারো-তেরো বছরে নেই কোনও নতুন শিক্ষক নিয়োগ। ফলে আগ্রহ হারাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। সাধারণ স্কুলশিক্ষকদের মতো কোনও সুযোগ-সুবিধা নেই, বেতন-কাঠামোও হাস্যকর। এক দিকে সরকারি ঔদাসীন্য, অন্য দিকে কাউন্সিল আধিকারিকদের চূড়ান্ত খামখেয়ালিপনার শিকার সমগ্র বৃত্তিমূলক বিভাগ। অন্তত এমনটাই মনে করছেন কিছু শিক্ষক। সম্প্রতি প্রকাশিত বৃত্তিমূলক বিভাগের মার্কশিট বিভ্রাট, ট্যাবের টাকা সঠিক সময়ে প্রদান না করা, বহু শিক্ষকের অবসরকালীন টাকা না পাওয়া, এমনকি বৃত্তিমূলক একাদশ-দ্বাদশের বাংলা ইংরেজি বইয়ের সঠিক সরবরাহ না করা প্রভৃতি অভিযোগ সামনে উঠে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নততর করার জন্য পৃথক একটি দফতর আছে, ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীও আছেন, অথচ বিভাগীয় শিক্ষক প্রশিক্ষক নৈশ কর্মচারী, নোডাল স্টাফদের ন্যূনতম কোনও সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়া গেল না।

রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, পাঁচলা, হাওড়া

অরাজকতা

‘কলেজে যাচ্ছে, ফিরবে তো?’ (পত্রিকা, ১২-৭) শীর্ষক স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রবন্ধটি এক নির্মম সত্য। নিঃসন্দেহে বর্তমানের তৃণমূল সরকারের আমলে লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী-র মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত। কিন্তু এটাও সত্যি আজকের রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক ভয়ঙ্কর অরাজকতা চলছে। এই অরাজকতার পশ্চাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্বও অস্বীকার করা যায় না। এখন দলের কোষাগারকে যাঁরা পূর্ণ করতে পারবেন, দলে তাঁদেরই আদর বেশি, তাঁদের সাত খুন মাপ। কামদুনি থেকে আর জি কর, কোথাও সকল অপরাধীর শাস্তি হয়েছে বলে মনে করেন না রাজ্যের মানুষ। রাজ্যবাসী এও মনে করেন যে, এ রাজ্যে পুলিশের কোনও স্বাধীনতা নেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নেতা-মন্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনে চলে। কংগ্রেস এবং বাম জমানা নিষ্কলুষ ছিল না, এ কথা সত্য। কিন্তু বর্তমান জমানা যেন আগের সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

বাবলু নন্দী, কলকাতা-৭৯

আরও পড়ুন