বাংলাদেশ নিয়ে ভাবিত ঋষভ বসু, মেহরান সনজানা। ছবি: ফেসবুক।
দুই বাংলার বিনোদনদুনিয়ার মনখারাপ। বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতি দেখে শঙ্কিত ভারত-বাংলাদেশের খ্যাতনামীরা। সাধারণ মানুষদের কথা ভেবে, ভয়ে-ভাবনায় অস্থির তাঁরা।
খবর, ছাত্রনেতা ওসমান হাদির হত্যার পর বাংলাদেশে দফায় দফায় ধ্বংস, তাণ্ডব। ‘ছায়ানট’, ‘প্রথম আলো’, ‘ডেইলি স্টার’, ‘উদীচী’ সাংস্কৃতিক কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক অফিস। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে ময়মনসিংহের যুবক দীপু দাসকে। একের পর এক ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনায় ভীত দুই দেশের দুই অভিনেতা ঋষভ বসু, মেহরান সনজানা। কলকাতার অভিনেতা ঋষভের বেশ কিছু আত্মীয় এখনও বাংলাদেশে থাকেন। তাঁদের নিয়ে চিন্তিত তিনি। বাংলাদেশের সনজানা একাধিক বার আক্রান্ত নিজের দেশে।
দুই অভিনেতাই কথা বলেছেন আনন্দবাজার ডট কম-এর সঙ্গে। ঋষভের কথায়, “আমাদের যৌথ পরিবার। পরিবারের সবাই কলকাতায় চলে আসেননি। খুড়তুতো কাকা, পিসিমা-সহ অনেকেই থাকেন বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে। পিসিমা যেমন গ্রামাঞ্চলে থাকেন। নিয়মিত ওঁর খবর নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। এখনও পর্যন্ত পড়শিদের ভরসাতেই ও পার বাংলায় রয়েছেন।” বাকিরা ঢাকা শহরে থাকছেন। অভিনেতা খবর পেয়েছেন, দেশের সব অঞ্চলের বাসিন্দারাই প্রতি মুহূর্তে সতর্ক। প্রয়োজনের বাইরে রাস্তায় বেরোচ্ছেন না। পরিবারের কোনও সদস্য বেরোলে যত ক্ষণ না তিনি ফিরছেন, তত ক্ষণ স্বস্তি পাচ্ছেন না কেউ। প্রায় একই কথা বলেছেন সনজানাও। তাঁর দাবি, “দীপু দাস একটা উদাহরণ। প্রায় প্রতি দিনই দেশ জুড়ে কোথাও না কোথাও, কিছু না কিছু ঘটছে। সে সব খবর চাপা থাকছে। আমাদের কাছে পর্যন্ত পৌঁছোচ্ছে না।” সনজানার তাই অনুরোধ, “আমাদের এখন কেউ জিজ্ঞেস করবেন না, আমরা কেমন আছি। বিশ্বাস করুন, এই প্রশ্ন এখন আমাদের কাছে অপমানসূচক।”
ঋষভ আরও একটি কারণে ভীত। ২০২৪-এর জুলাইয়ে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের সময় আনন্দবাজার ডট কম-কে বলেছিলেন, “আমার কাকা আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। ২০১২-য় তিনি প্রকাশ্যে খুন হন।” অভিনেতার শঙ্কা, প্রতিশোধস্পৃহা কমে না। কাকার উপরে থাকা সেই রাগ যদি তাঁর উত্তরসূরিদের উপরে পড়ে! তা হলে কাকিমা, বোন অনাথ হয়ে যাবেন! তাঁর কথায়, “ও পার বাংলার সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’র সঙ্গেও আমার বিশেষ সম্পর্ক। ওদের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর জেনে চোখ ভিজেছে আমার।”
সনজানাও এই উদাহরণ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “ছাত্রনেতার হত্যাকে একটুও সমর্থন করছি না। তার সঙ্গে সংবাদপত্রের অফিস বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়ার কী সম্পর্ক, সেটাও বুঝতে পারলাম না!” তিনি আওয়ামী লিগের সমর্থক, এমনটাই ধারণা তাঁর দেশের। ফলে, তাঁর শিল্পী-সাহিত্যিক স্বামী শতাব্দী ভব দেশছাড়া। তিনিও প্রাণ হাতে করে বাঁচছেন। এই জায়গা থেকে আক্ষেপ অভিনেত্রী এবং বাচিকশিল্পীর, “আমাদের বিনোদনদুনিয়ায় কাজ নেই। শুটিং প্রায় বন্ধ। হলেও প্রচণ্ড গোপনীয়তা রক্ষা করে। আউটডোর শুটিংয়ে ভরসা করে কেউ যেতেই পারছেন না! শুধুই শিল্প-সংস্কৃতি নয়, একের পর এক ভেঙে পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোও।”
দুই শিল্পীকেই ব্যথা দিয়েছে আরও একটি ঘটনা, সেটা ভারত-বিদ্বেষ। ঋষভ কষ্ট পাচ্ছেন, দুই বাংলা এক হয়ে আগের মতো কাজ করতে পারছে না। সনজানার প্রশ্ন, কাঁটাতারের ফারাক ছাড়া আর তো কোনও ব্যবধান নেই। তা হলে কেন দুই দেশের মধ্যে এত বিদ্বেষ জন্মাবে?