Tollywood Controversy

খাবারের স্বাধীনতার সঙ্গে কেন মিশবে রাজনীতি, প্রশ্ন জুন-শ্রীলেখাদের, ভিন্ন ব্যাখ্যা রুদ্রনীলের

একদা অভিনেত্রী এবং উদ্যোগপতি স্বরলিপি ‘বিফ্‌ স্টেক’ খাওয়ার একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই শুরু যাবতীয় বিতর্কের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:১৪
Beef Steak photo on social media instigates new controversy in Tollywood

(বাঁ দিক থেকে) জুন মালিয়া, শ্রীলেখা মিত্র, রুদ্রনীল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

টলিপাড়ার অন্দরে মাঝে মাঝেই নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়। গোয়ায় বেড়াতে গিয়ে দিনকয়েক আগে সমুদ্রপারের এক রেস্তরাঁয় বসে নিজের সমাজমাধ্যমে ‘বিফ্‌ স্টেক’-এর ছবি দিয়েছিলেন একদা অভিনেত্রী তথা উদ্যোগপতি স্বরলিপি। সেখান থেকেই শুরু আলোচনা-সমালোচনার। এমনকি, কুমন্তব্যও শুনতে হচ্ছে স্বরলিপিকে। সেখান থেকেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কোন দিকে যাচ্ছে সমাজে ব্যক্তিস্বাধীনতার ভবিষ্যৎ?

Advertisement

এই ঘটনার সঙ্গে গত রবিবার ময়দানে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে ঘিরে বিতর্কও কথাও ঘুরে ফিরে উঠে আসছে। অভিযোগ, রবিবার ময়দানে গীতাপাঠের কর্মসূচি চলাকালীন সেখানে মারধর করা হয় দুই প্যাটিস বিক্রেতাকে। তাঁদের ‘অপরাধ’, আমিষমিশ্রিত প্যাটিস বিক্রি করছিলেন তাঁরা। এ ভাবে বার বার খাবারের সঙ্গে ধর্ম এবং রাজনীতিকে মিলিয়ে দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন জুন মালিয়া, শ্রীলেখা মিত্রেরা। যদিও এ ব্যাপারে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।

তবে গোমাংস নিয়ে এই প্রথম নয়, আগেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর আগে তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিল রান্না সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায়কে। বাংলাদেশের একটি রান্নার অনুষ্ঠানে গোমাংস রান্না করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন সুদীপা। শুধুমাত্র গোমাংস রান্নার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কারণে আক্রমণ করা হয় সুদীপাকে।

আবার সেই একই বিতর্ক উঠতে তৃণমূল সাংসদ জুন বললেন, “ধর্ম নিয়ে মেরুকরণ অনেক দিন ধরে চলছে। ইদানীং সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে। ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়। কিন্তু এখন ধর্ম নিয়ে যে বিভাজন করা হচ্ছে তা খুবই দুঃখের। গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে আমাদের এটুকু স্বাধীনতা থাকা উচিত যে আমরা কী খাব, কী পরব, কোথায় যাব, কোন ভাষায় কথা বলব।” একই সুর শ্রীলেখারও।

কিন্তু এই বিতর্কে রুদ্রনীল ঘোষ ভিন্ন মতে বিশ্বাসী। তাঁর বক্তব্য, মানুষ ভুলে গিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ। তিনি বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার মানে হল স্বধর্মে প্রীতি এবং অন্য ধর্মে সম্প্রীতি। হিন্দু মানে ধর্মনিরপেক্ষ হতেই হবে। কিন্তু অন্য ধর্মে এ ধরনের কথা বলা হয় না। এটা আসলে হিন্দুদের কথা নয়। যে হিন্দুরা বামপন্থী রাজনীতি করত, তাদের নেতারা এই কথা শিখিয়েছে।” স্বরলিপির সেই ঘটনা টেনে এনে রুদ্রনীল বলেন, “একজন হিন্দু মানুষ হিসাবে গরুর মাংস খাওয়া ঠিক নয় ধর্মীয় কারণে। হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত লাগে। যেমন মুসলমানেরা শুয়োরের মাংস থেকে দূরে থাকেন। তবে এই বিষয়ে কটাক্ষ বা কটু মন্তব্যের যৌক্তিকতা আমি মানি না। কিন্তু হিন্দু ধর্মের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লাগা থেকেই এই প্রতিক্রিয়া বলে আমার মনে হয়।”

যে কোনও কিছুর সঙ্গে ধর্ম এবং রাজনীতিকে মিলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অশনি সঙ্কেত দেখছেন শ্রীলেখা। তিনি বলেন, “পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় যেখানই ধর্ম এবং রাজনীতি একসঙ্গে হয়েছে সেখানে ক্ষতি অনিবার্য। কোনও ধর্মগুরু কখনও হিংসার প্রচার করে না। তবে মানুষ যাতে বেআইনি কাজ না করে, সে জন্য যেমন আইনের দরকার, তেমনই ধর্মের দরকার, যাতে মানুষ বিপথে চালিত না হয়। সেখানেই ধর্মকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ রাজনীতি করছেন। অবাঙালি সংস্কৃতি কলকাতাকেও গ্রাস করছে। মানুষের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। শক্ত ভাবে এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে সাংঘাতিক বিপর্যয়ের মুখে আমাদের পড়তে হবে। ধর্ম, রাজনীতি-দেশ চালানো এক হতে পারে না।”

গোমাংস, রাজনীতি, ধর্ম— এই বিতর্কের মাঝে খুবই হতবাক স্বরলিপি। তিনি এখনও বুঝতে পারছেন না, একটি ছবি সমাজমাধ্যমে দেওয়ার কারণে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই পরিবেশ আগামী প্রজন্মের জন্য অশনি সঙ্কেত বলেই মনে করছেন তিনি।

Advertisement
আরও পড়ুন