Hooliganism

নিরপেক্ষ হওয়াও এখন অন্যায়, আমাদের কাজ ‘মরা’টাকে খুঁচিয়ে দেখানো: হুলিগানইজ়ম নিয়ে দেবরাজ

‘হুলিগানইজ়ম’ তাঁদের গানে বিচারের কথা বলেছে। ভবিষ্যতে কোনও অনাচার বা অঘটনে মানুষ তাদের গানে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজবে। সেই ভাষা কখনও শাসক দলের বিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধীও হতে পারে?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩১
‘হুলিগানইজ়ম’ নিয়ে কী বললেন দেবরাজ ভট্টাচার্য?

‘হুলিগানইজ়ম’ নিয়ে কী বললেন দেবরাজ ভট্টাচার্য? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

তাঁদের গান কেবল গান নয়। তাঁদের গান নাকি সমাজের নানা বিষয় নিয়ে অভিঘাত আনতেও সক্ষম। ‘হুলিগানইজ়ম’ ব্যান্ডের সদস্য দেবরাজ ভট্টাচার্য জানান, মানুষ এমন মনে করছেন। তবে তাঁদের এমন কোনও অভিপ্রায় নেই।

Advertisement

কী ভাবে ‘হুলিগানইজ়ম’-এর এমন ভাবমূর্তি তৈরি হল? গানের মাধ্যমে রাজনীতি নিয়ে খোঁচা দেওয়া কি তাদের উদ্দেশ্য নয়? দেবরাজ আনন্দবাজার ডট কম-কে বললেন, “আমরা গানের মাঝে কিছু রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করি, সেটা ঠিক। আমার এটুকুই বলার। তার চেয়ে বেশি শিল্পের বলার কিছু নেই। শিল্প এর চেয়ে বেশি পরিবর্তন আনতে পারেও না। আমরা শুধু একটা জায়গা চেয়েছিলাম কিছু কথা বলার জন্য।”

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘হুলিগানইজ়ম’-এর গান ‘পূজার গান’। গ্রামগঞ্জের দুর্গাপুজোর ছবি রয়েছে সেই গানে। গানের কথাও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। “হেই মা দুর্গা ইদিক আয়। মোদের চারপাশেতে অনেক অসুর, ধরছে টিপে গলার নলি। তুই এক্ষুনি তার বিচার কর।”

আরজি কর কাণ্ডে নীরব ছিলেন এই ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য তথা অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তা নিয়ে কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ‘পূজার গান’-এর এই পংক্তি কি সেই আরজি কর কাণ্ডকেই সূক্ষ্ম ভাবেই ছুঁয়ে গেল? উত্তরে দেবরাজ জানান, অনির্বাণ সেইসময় চুপ থাকলেও, তিনি সক্রিয় ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

অনির্বাণের ভাবমূর্তিই এমন যে মানুষ প্রত্যাশা করে, যে কোনও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তিনি মতামত রাখবেন। ‘হুলিগানইজ়ম’ ব্যান্ডও সেই একই ভাবমূর্তির পথে এগোচ্ছে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে ভিন্ন রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে খোঁচা দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে নেটাগরিকের একাংশের মত, শাসক দলকে তাঁরা সবচেয়ে সূক্ষ্ম ভাবে খোঁচা দিয়েছেন।

দেবরাজ বলেন, “ব্যান্ডের একটা ভাবমূর্তি তৈরি হতেই পারে। যেমন চার্লি চ্যাপলিন মানেই মানুষ বোঝেন, উনি শুধু হাসাতেই পারেন। আসলে আমাদের খুব কম গান প্রকাশ পেয়েছে। বেশ কিছু প্রেমের গানও রয়েছে আমাদের তালিকায়। যেটুকু ছড়িয়েছে সেটুকু শুনে মানুষের হয়তো মনে হচ্ছে, আমরা কেবলই এই ধরনের গান করব।”

‘হুলিগানইজ়ম’ তাঁদের গানে বিচারের কথা বলেছে। ভবিষ্যতে কোনও অনাচার বা অঘটনে মানুষ তাদের গানে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজবে। সেই ভাষা কখনও শাসক দলের বিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধীও হতে পারে? প্রতিবাদ না করলে ফের কটাক্ষের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন? দেবরাজ জানান, তাঁরা এমন কিছু নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর কথায়, “আমরা যেটুকু পারি, সেটুকুই করতে চেয়েছি। আমরা ভাবিনি, আমাদের বার্তায় বিরাট কোনও পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রথমত শিল্প বা শিল্পী কোনও শাসক দলকে বিচলিত করতে পারে না। নকশাল আন্দোলনের পরে এত বড় একটা ভিড় রাস্তায় নামল। কিন্তু কিচ্ছু পরিবর্তন হয়নি। একই তিমিরে রয়েছে সব। ভিক্টর হুগো বলেছিলেন, ‘শিল্প মৃত।’ আমাদের কাজ শুধু সেই মরাটাকে খুঁচিয়ে দেখানো। এটুকুই আমরা পারি।”

দেবরাজ স্পষ্ট বলেন, “আমাদের বৈপ্লবিক কোনও ব্যাপার-স্যাপার আমাদের নেই। তাই লোকে কী বলল, তাতে সত্যিই কিছু যায় আসে না। আর শাসক বলতে আমরা ক্ষমতার একটা ‘ফর্ম’ বুঝি। শাসক মানে, যে মূলত শোষণ করে। আমরা যে গানগুলো করেছি, তাতে বর্তমান সরকারের কিছু হয়তো যায় আসছে না। কিন্তু যায় আসতেই পারত। আমাদেরই একটা আছে, ‘এই উন্নয়ন আমাদের বুকে দাঁড়িয়ে আছে। আমি উন্নয়ন থেকে ছুটে যাচ্ছি যত দূরে, উন্নয়ন ছুটে আসছে আমার কাছে।’ এতে আমাদের শাসক দলের খারাপ লাগতেই পারত। কিন্তু আমরা শুধু শাসক দলকে নয়, গোটা সিস্টেমকে বিঁধতে চেয়েছি।”

‘সিস্টেম’কে নিয়ে খোঁচা দেওয়ায়, মানুষ নিজের মতো সেই গানের ব্যাখ্যা করছেন। এর দায় তাঁদের নয় বলে মনে করেন দেবরাজ। তাঁরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। শিল্পীর কথায়, “আমরা নিরপেক্ষ। এখন যদিও নিরপেক্ষ কথাটাই খারাপ ভাবে ধরা হয়। নিরপেক্ষ হওয়াও এখন বড় অন্যায়!”

Advertisement
আরও পড়ুন