Rare Brain Disease

অনুভূতি কাজ করে না, কথা বলে না, হাসতেও ভুলে গিয়েছে, মস্তিষ্কের কোন বিরল রোগে আক্রান্ত চার কন্যা

ভার্জিনিয়ার দম্পতির চার মেয়ে ভুগছে মস্তিষ্কের বিরল রোগে। কথা বলতে ভুলে গিয়েছে তারা, হাসতেও পারে না। কী রোগ ধরা পড়ল?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৭
4 Sisters are suffering from same rare Brain disease called Chiari Malformation

ধীরে ধীরে সেই রোগ থেকে বেরিয়ে আসছে চার কন্যা, এখন হাসি ফুটছে তাদের মুখে। ছবি : সংগৃহীত।

১৮ মাসের শিশুকন্যার অস্বাভাবিকতা প্রথম ধরা পড়ে মায়ের চোখে। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা পল ও অ্যাশলে দেখেন ওইটুকু শিশুর চোখে-মুখে কোনও অভিব্যক্তিই নেই। দৃষ্টি এক দিকে স্থির, হাসতেও জানে না সে। কথা বলার চেষ্টাও করে না। ছয় সন্তান ওই দম্পতির। আরও তিন কন্যার মধ্যেও একই রকম উপসর্গ দেখা দিতে থাকে দিনের পর দিন। বছর চারেকের মেয়ে অস্টিন ধীরে ধীরে কথা বলা বন্ধ করে। হাসতেও যেন ভুলে যায় সে। কোনও রকম আবেগ বা অনুভূতিও কাজ করে না তার। প্রথমে বিষয়টিকে তেমন আমল না দিলেও পরে ওই দম্পতি বুঝতে পারেন, সমস্যা গুরুতর। কারণ, চার মেয়ের মধ্যেই দেখা দিয়েছে একই রকম লক্ষণ।

Advertisement

রোগটি মস্তিষ্কের এর বিরল অসুখ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘কিয়ারি ম্যালফরমেশন’। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা জানিয়েছেন, প্রতি ২০০০ জনের মধ্যে ১ জনের হতে পারে এই রোগ। কিয়ারি ম্যালফরমেশনের চার ধরন আছে, তার মধ্যে কিয়ারি ১ রোগে আক্রান্ত ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা ওই চার কন্যা। তারা কথা বলতে ভুলে গিয়েছে, হাসেও না, কোনও অনুভূতিও কাজ করে না তাদের। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রোগটি জিনবাহিত। একই পরিবারের একাধিক সদস্যের এই রোগ হতে পারে। আবার মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যেও ছড়াতে পারে।

কেন হয় কিয়ারি ম্যালফরমেশন’?

ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্‌থ সার্ভিস রোগটি নিয়ে গবেষণা করছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটির জন্য এই রোগ হতে পারে। গর্ভস্থ ভ্রুণের মস্তিষ্কের গঠন যদি অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তা হলে রোগটি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষ করে মস্তিষ্কের আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে যে অংশ, সেই হাইপোথ্যালামাসের গঠন যদি ঠিকমতো না হয়, তখন এমন রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তা ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ জিনের কারণেও এই রোগ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু জিনের রাসায়নিক বদল ঘটে, ফলে মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডের সংবেদী কোষগুলি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন আবেগ, অনুভূতি কোনও কিছু আর কাজ করে না।

ভার্জিনিয়ার ওই চার মেয়ের যে রোগ হয়েছে, তা হল ‘কিয়ারি ১’। সে ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হয়। ফলে মস্তিষ্কের সব ক’টি প্রকোষ্ঠ ও কোষ তাতে এঁটে ওঠে না। কিছু কোষ তখন সুষুম্নাকাণ্ডের মধ্যে গিয়ে সেঁধিয়ে যায়। বিশেষ করে মস্তিষ্কের নীচের অংশের সেরিবেলাম অংশটি যদি নীচের দিকে ঠেলে সুষুম্নাকাণ্ডের দিকে চলে যায়, তখন সেখানকার কোষগুলি নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে। সাধারণত, খুলি এবং মেরুদণ্ডের সংযোগস্থলে একটি ছোট ছিদ্র থাকে, যাকে ‘ফোরামেন ম্যাগনাম’ বলা হয়। এর মধ্য দিয়ে সুষুম্নাকাণ্ড মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়। কিয়ারি ম্যালফরমেশেনে খুলির অস্বাভাবিক গঠন বা ছোট আকারের কারণে এই ছিদ্রের মধ্য দিয়ে সেরিবেলামের অংশ নীচের দিকে ঠেলে নেমে আসে, ফলে মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’ (মস্তিষ্কের তরল)-এর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।

মস্তিষ্কের এই সেরিবেলাম অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কাজ হল শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা, আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, কথা বলা, অন্যের কথা বোঝা, ভাব বিনিময় করা, মেলামেশা, হাসি-কৌতুক, রাগ-দুঃখ ইত্যাদি অনুভূতিগুলির প্রকাশ ঘটানো। কাজেই ওই অংশটি যদি কার্যহীন হয়ে পড়ে, তখন রোগী আর ঠিকমতো কথাও বলতে পারবেন না, কোনও অনুভূতিও কাজ করবে না তাঁর।

কিয়ারি ম্যালফরমেশনে রোগী যে কেবল আবেগহীন হয়ে বেঁচে থাকবেন তা নয়, তাঁর মস্তিষ্কের বাকি কোষগুলিও ধীরে ধীরে অকেজো হতে থাকবে। ফলে স্মৃতিনাশ হবে, রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্তও হয়ে পড়তে পারেন। এমআরআই স্ক্যানে রোগটির প্রাথমিক উপসর্গগুলি ধরা পড়ে। এর চিকিৎসাপদ্ধতি খুব জটিল। প্রথম অবস্থায় রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসায় রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement
আরও পড়ুন