ছবি : সংগৃহীত।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তার প্রভাব শুধু পরের দিনে পড়ে না। ক্লান্তিবোধ ছাড়াও অনিয়মিত ঘুমের আরও অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে সার্বিক স্বাস্থ্যের সমস্যা তৈরি করতে পারে। নানা ধরনের ক্রনিক অসুখ বা জটিল অসুখও বাসা বাঁধতে পারে শরীরে, যা হয়তো ভাল ভাবে ঘুমোলে না-ও হতে পারত।
অনেকেরই রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়। ঘুম এলেও তা হয় অগভীর। কেন এমন হয়? এ ব্যাপারে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মাইকেল ব্রুস বলছেন, ‘‘ঘুমর আগে আমরা অজান্তেই এমন কিছু কাজ করি যা আমাদের মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যে, এখন জেগে থাকার সময়। ফলে স্নাযু সক্রিয় থাকে। বিশ্রাম করার জন্য যে শিথিল ভাব আসা দরকার, তা হয় না। ফলে ঘুমও আসতে চায় না সহজে।’’
দেরিতে ভারী খাবার খাওয়া
ঘুমের ঠিক আগে ভারী বা মশলাযুক্ত খাবার খেলে শরীরে হজম প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তাতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এমনকি, অ্যাসিডিটির সমস্যাও হতে পারে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে।
সমাধান: রাতের খাবার শোয়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত।
ঘুমের আগে চিন্তা
অনেকেই বিছানায় শুয়ে মনে মনে পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা সাজিয়ে নেন। আবার কেউ কেউ এই সময়েই ভাবতে শুরু করেন সারা দিন কী কী ঘটল। ফলে মাথায় নানা রকমের চিন্তার আনাগোনা শুরু হয়। নানা ধরনের দুশ্চিন্তাও হয়, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় করে তোলে। দিনের শেষে ক্লান্তিতে চোখ জুড়িয়ে এলেও মন শান্ত না হওয়ায় ঘুমোতে পারেন না।
সমাধান: এই সমস্যার সমাধান হল ঘুমের আগে চোখ বুজে শুয়ে ধ্যান করা। পাঁচ মিনিট যে কোনও একটি বিষয়ে একাগ্র ভাবে ভাবুন। এমন কিছু ভাবুন যা মনকে ভাল করে দেয়। কোনও পছন্দের দার্শনিকের কথা ভাবতে পারেন। ঈশ্বরচিন্তাও করতে পারেন। এটি যেমন মন শান্ত করবে তেমনই নিশ্চিন্ত এবং গভীর ঘুমেও সাহায্য করবে।
ক্যাফিন বা নিকোটিন বাদ
দিনের শেষে বা খাওয়াদাওয়ার পরে অনেকেই এক কাপ গ্রিন টি খান। রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এক কাপ চা বা কফিও খান কেউ কেউ। কম ঘুমের জন্য দায়ী হতে পারে ওই সন্ধ্যা বা রাতের চা-কফিও। কারণ, তাতে থাকে ক্যাফিন। আর ক্যাফিন শরীরে প্রবেশ করার পরে প্রায় ৬-৮ ঘণ্টা রক্তে মিশে থাকতে পারে। যা স্নায়ুকে শিথিল হতে দেবে না, ফলে শরীর পুরোপুরি বিশ্রামের পর্যায়ে পৌঁছবে না। তাই সন্ধ্যার পর চা-কফি এমনকি ধূমপান করতেও বারণ করছেন চিকিৎসক। তিনি বলছেন, ধূমপান করলে শরীরে যে নিকোটিন যায়, তা স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত রাখে, ফলে সহজে ঘুম আসে না।
সমাধান: সন্ধ্যার পরে তাই ক্লান্তি দূর করতে হলে গরম জলে আদা, গোলমরিচ, জিরে ইত্যাদি ভিজিয়ে খান। এটি যেমন হজমে সাহায্য করবে তেমনই মেজাজও ভাল রাখবে, যা ভাল ঘুমের জন্য জরুরি।
ঘুমের সময় বদলে যায়?
বিছানায় কখন শুতে যাচ্ছেন, সেই সময়ের কোনও ঠিক থাকে না? কোনও দিন ১২টা তো কোনও দিন ১টা বেজে যায়? প্রতি দিন ঘুমের সময় বদলাতে থাকলে শরীরের 'বায়োলজিক্যাল ক্লক' বা দেহঘড়ির ছন্দপতন ঘটে। ফলে কোনও এক দিন তাড়াতাড়ি ঘুমোতে গেলেও চোখে ঘুম আসে না।
সমাধান: ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। প্রতি দিন ওই সময়ে বিছানায় শুয়ে পড়ুন। এই অভ্যাস ছুটির দিন বা তার আগের দিনও বজায় রাখুন। তাতে শরীর ভাল থাকবে।
এক ঘণ্টা আগে মোবাইল সরিয়ে রাখুন
ঘুমের আগে অন্তত এক ঘণ্টা নিজেকে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি পর্দা থেকে দূরে রাখুন। কারণ, ডিজিটাল পর্দার নীল আলো শরীরে ‘মেলাটোনিন’ হরমোন তৈরি হতে দেয় না, যা শরীরকে বিশ্রামের পর্যায় নিয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি। ঘুমের আগে শরীরে এই হরমোনের ক্ষরণ হয় বলেই ঘুম পায়। ব্লু লাইট তা হতে দেয় না।
সমাধান: শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস না থাকলে মোবাইল খুলবেন না। হাতের কাছে একটি বই রেখে দিন। দরকার হলে সেটিই পড়ুন। এতে ঘুমের যেমন সুবিধা হবে, তেমনই মানসিক চাপও কমবে।