মুখের স্বাস্থ্যও পারকিনসন্সের কারণ হতে পারে? ছবি: ফ্রিপিক।
মখে জন্মানো ব্যাক্টেরিয়া থেকে জটিল স্নায়ুর রোগও হতে পারে? শুনতে অবিশ্বাস্য লাগছে ঠিকই, কিন্তু এমনটাও যে হতে পারে তা দাবি করা হয়েছে একাধিক গবেষণায়। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যের খেয়াল না রাখলে তার থেকে ভয়াবহ সব ব্যাধি হানা দিতে পারে। যার মধ্যে একটি হল পারকিনসন্স রোগ।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষণাতেও তেমনই দাবি করা হয়েছে। গবেষকেরা দেখেছেন, মুখের ভিতরে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়, যার নাম ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস মিউট্যান্স’। এই ব্যাক্টেরিয়া দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে, মাড়িতে ক্ষত তৈরি করে। এর কারণে ক্যাভিটি হয়। এই ব্যাক্টেরিয়া এমন এক ধরনের উৎসেচক তৈরি করে, যার নাম ‘ইউরোক্যানেট রিডাক্টেজ়’ (ইউআরডিএ)। এই উৎসেচক স্নায়ুর মাধ্যমে সটান গিয়ে পৌঁছোয় মস্তিষ্কে এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে শুরু করে। ফলে মস্তিষ্কের সুস্থ কোষগুলির ক্ষয় হতে থাকে এবং স্নায়বিক রোগের জন্ম হয়।
পারকিনসন্সকে বয়সজনিত রোগ বলেই মনে করা হত এক সময়ে। অথবা ব্রেন স্ট্রোকের রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকত। কিন্তু কোনও অসুখবিসুখ নেই, পরিবারে স্নায়ুর রোগের ইতিহাসও নেই, এমন একজনের পারকিনসন্স ধরা পড়ায় রীতিমতো হতচকিত গবেষকেরা। দেখা গিয়েছে, মুখের ব্যাক্টেরিয়া কেবল নয়, অন্ত্রের প্রোটিনও এই রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ‘আলফা-সিনুক্লিন’ নামে এক ধরনের প্রোটিন আছে, যা পার্কিনসন্সের কারণ। এই প্রোটিন অন্ত্রেই তৈরি হয় এবং শরীরের ভেগাস স্নায়ু দিয়ে বাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছোয়। এই প্রোটিনের কারণেও পার্কিনসন্সের মতো রোগ হতে দেখা গিয়েছে।
মস্তিষ্কের ‘সাবস্ট্যান্সিয়া নাইগ্রা’ নামক অংশ থেকে ডোপামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত হয়ে ভাবনাচিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মন ভাল থাকার পিছনেও এর ভূমিকা আছে। মস্তিষ্কের এই অংশ অকেজো হয়ে গেলে, ডোপামিন নিঃসরণ কমে যায়। তখনই পার্কিনসন্সের সূচনা হয়। তবে এই রোগের নেপথ্যে জিনগত কারণও রয়েছে। গবেষকেরা দেখেছেন, অন্ত্রের প্রোটিন হোক বা ব্যাক্টেরিয়া, এরা ডোপামিন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। যে কারণে স্নায়ুগুলির মধ্যে সঙ্কেতের আদানপ্রদানে জটিলতা তৈরি হয়। ফলে স্নায়ু অকেজো হতে থাকে এবং রোগ দেখা দিতে থাকে। কমবয়সিদের মধ্যে পারকিনসন্স কেন হচ্ছে তার কারণ খুঁজতে গিয়ে মুখ ও পেটের স্বাস্থ্য নিয়েও ভাবনাচিন্তা করছেন গবেষকেরা।