মার্কাস গান সিনড্রোম রোগটি কী? ফাইল চিত্র।
শিশুকে খাওয়াতে গিয়ে দেখলেন, তার চোয়াল ঝুলে যাচ্ছে আপনা থেকেই। সেই সঙ্গেই যে কোনও একটি চোখের পাতা ক্রমাগত খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে।সেই সঙ্গে চোখের পাতা থরথর করে কাঁপছেও। জন্মগত ভাবেই দেখা দেয়। বিশ্বে মাত্র পাঁচ শতাংশ শিশুর হতে পারে এই রোগ। এ দেশেও কিছু শিশুর মধ্যে রোগটি দেখা দিয়েছে। তাই সতর্কতাও বেড়েছে। বিরল এই রোগের নাম ‘মার্কাস গান সিনড্রোম’। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘জ’ উইঙ্কিং ডিজ়িজ়’ বলা হয়।
কী এই মার্কাস গান সিনড্রোম?
চোখ ও চোয়ালের পেশি এবং স্নায়ুর অস্বাভাবিকতাই এই রোগের কারণ। জন্মের সময়ে চোখ ও চোয়ালের পেশি এবং স্নায়ুর মধ্যে সংযোগ ঠিকমতো হয় না। ফলে দেখা যায়, যত বার চোয়াল নড়ে, তত বারই চোখের পাতা ওঠানামা করে। খাওয়ার সময়ে, কথা বলার সময়ে যে কোনও এক দিকের চোখ ক্রমাগত বন্ধ হবে আর খুলবে। কাঁপুনি ধরবে চোখের পাতাতেও। জন্মের কিছু দিনের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। উপসর্গ দেখে অনেক সময়েই বোঝা যায় না, সেটি অসুখ। মনে হয়, শিশু খাওয়ার সময়ে বা কাঁদার সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এই রোগের চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয়। শিশু যত বড় হতে থাকে, ততই চোখ ও চোয়ালের পেশি দুর্বল হতে শুরু করে। এক সময়ে গিয়ে দেখা যায়, চোখের পাতা খোলা ও বন্ধ করার মধ্যে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। চোয়ালের পেশিও দুর্বল হয়ে শিথিল হয়ে পড়ে। ঝাপসা হতে থাকে দৃষ্টি।
১৮৮৩ সালে ব্রিটিশ চক্ষু চিকিৎসক রবার্ট মার্কাস গান প্রথম রোগটিকে শনাক্ত করেন। তাঁর নাম থেকেই অসুখটির নাম হয়েছে মার্কাস গান সিনড্রোম।
কেন হয়?
মস্তিষ্কের দু’টি স্নায়ুর মধ্যে ভুল যোগাযোগের কারণে এই রোগ হয়। চোয়ালের পেশিকে নিয়ন্ত্রণ করে যে বৃহত্তম স্নায়ু, তার তাম ট্রইজেমিনাল নার্ভ। এটি মুখমণ্ডলে স্পর্শ, ব্যথা, তাপমাত্রার বদল, চিবোনোর সময়ে পেশির সঙ্কোচন ও প্রসারণকে নিয়ন্ত্রণ করে ও সেই বার্তা মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়। এই স্নায়ুটির সঙ্গে চোখের পাতার স্নায়ু অক্যুলোমোটর নার্ভের সংযুক্তি থাকে। অক্যুলোমোটর স্নায়ুর কাজ হল চোখের পাতার পেশিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই দুই স্নায়ুর সংযুক্তিতে যদি ভুলভ্রান্তি হয় বা স্নায়ুর গঠনগত সমস্যা হয়, তা হলে চোয়াল ও চোখের পাতার মধ্যে সঙ্কেত আদানপ্রদানে সমস্যা হয়। ফলে কোনওটির উপরেই আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
মায়ের গর্ভে থাকাকালীনই শিশুর চোখের গঠন সম্পূর্ণ না হলে এই জটিলতা দেখা দিতে পারে। সময়ের আগে শিশু জন্ম নিলে তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে এই সমস্যা দেখা যায়। বাইল্যাটেরাল বা ইউনিল্যাটেরাল, অর্থাৎ শিশুর দু’টি বা একটি চোখে এই সমস্যা হতে পারে। জিনগত কারণ, মায়ের অতিরিক্ত অপুষ্টি-সহ একাধিক কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। গবেষকেরা দেখেছেন, সিএইচডি৭ জিনে মিউটেশন বা রাসায়নিক বদল হলে বা ক্রোমোজ়োমের গঠনগত সমস্যা হলে এই বিরল রোগটি হতে পারে। অস্ত্রোপচার ছাড়া এর আলাদা কোনও চিকিৎসা নেই। অনেক সময়েই শিশুর বেড়ে ওঠা অবধি অপেক্ষা করা হয়। তার পর অস্ত্রোপচারের চেষ্টা চলে। চোয়াল বা চোখের পাতা যদি বেশি ঝুলে থাকে, তা হলে ক্ষেত্রবিশেষে কসমেটিক সার্জারি করেও সেই অস্বাভাবিকতা দূর করার চেষ্টা করা হয়।