Mosquito Bite

এক কামড়ে কতটা রক্ত খায় মশা? কেনই বা রক্ত এত পছন্দ তাদের, চমকে ওঠার মতো তথ্য দিলেন বিজ্ঞানীরা

- একটি স্ত্রী মশা ঠিক কতটা রক্ত শুষে নিতে পারে, তারও হিসেব আছে। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা তা হিসেব কষে দেখেছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১২:০১
How much blood a mosquito actually takes in one bite, what happened to the skin

আপনার গায়ে বসে কতটা রক্ত শুষে নিচ্ছে মশা? ছবি: ফ্রিপিক।

গায়ে বসে কখন চোঁ চোঁ করে রক্ত টেনে নেবে, তা বুঝতেই সময় লেগে যায়। জ্বালা যখন শুরু হয়, তত ক্ষণে মশার উদরপূর্তি হয়ে গিয়েছে। রক্ত খেয়ে পেট ফুলে জয়ঢাক। রক্ত চুষে নড়াচড়ার ক্ষমতাও থাকে না অনেক সময়। এমন রক্তখেকো মশারা কিন্তু সবই স্ত্রী। পুরুষ মশাদের আবার রক্ত পছন্দ নয়। তারা অহিংস, এবং ফুল-পাতার নির্যাস খেয়েই খুশি। স্ত্রী মশাদের এই যে আক্রমণাত্মক মনোভাব, এটি শুধুমাত্রই বংশবিস্তারের জন্য। ডিম বাঁচিয়ে রাখতে রক্তই প্রয়োজন তাদের। আর এর জন্য এক কামড়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রক্তও টানে তারা।

Advertisement

একটি স্ত্রী মশা ঠিক কতটা রক্ত শুষে নিতে পারে, তারও হিসেব আছে। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা তা হিসেব কষে দেখেছেন। দেখা গিয়েছে, একটি স্ত্রী অ্যালোফিলিস বা এডিস মশা মানুষের শরীরে বসলে, এক বারে প্রায় ০.০০১ থেকে ০.০১ মিলিলিটার রক্ত টেনে নেয়। সোজা হিসেবে যা প্রায় ১ থেকে ১০ মাইক্রোলিটারের মতো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাওয়াদাওয়া শুরু করার সময়ে প্রথম বার তারা প্রায় ৫ মাইক্রোলিটারের মতো রক্ত টানে। এর থেকে বেশিও হয় মাঝেমধ্যে। সেটা মশার আকারের উপর নির্ভর করে। ডিম পাড়বে যে মশা, সে কখনও ১০ মাইক্রোলিটার অবধি রক্ত শুষে নিতে পারে।

চোঁ চোঁ করে ৫ থেকে ১০ মাইক্রোলিটার রক্ত টেনে নেয় মশা।

চোঁ চোঁ করে ৫ থেকে ১০ মাইক্রোলিটার রক্ত টেনে নেয় মশা। ছবি: ফ্রিপিক।

এ ব্যাপারে একটি মজার তথ্য আছে। ‘প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ জার্নালে গবেষকেরা জানিয়েছেন, মশা সাধারণত নিজের ৬ ফুট দূরবর্তী বস্তু পর্যন্ত দেখতে পায়। স্পষ্ট দেখে ১-২ মিটার দূরত্ব থেকে। ওইটুকু আকারের প্রাণীর ক্ষেত্রে এ ক্ষমতা বড় কম নয়। একমাত্র স্ত্রী প্রজাতির মশাই রোগের জীবাণু বহন করে এবং লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হয়ে ওঠার দেড় দিনের মাথায় তার খাদ্যের প্রয়োজন হয়। মজার বিষয়, মশা কিন্তু রক্ত খেতে খুব একটা পছন্দ করে না, রক্ত খেতে বাধ্য হয় ডিম বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে।

ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টনের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রক্তের প্রোটিন, আয়রন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড ডিমের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের অ্যামাইনো অ্যাসিড ডিমের পুষ্টি জোগায়। মশা যে কেবল মানুষেরই রক্ত খায় তা তো নয়, অন্যান্য প্রাণীর শরীর থেকেও রক্ত চুষে নেয়। তবে ডেঙ্গির এডিস ইজিপ্টাই মশার প্রথম পছন্দ কিন্তু মানুষ। কারণ মানুষের রক্তে আইসোলিউসিন নামে এমন এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা ডিমের উৎপাদনের জন্য জরুরি।

নিজেদের শিকার খুঁজে নিতেও মশাদের জুড়ি মেলা ভার। বেশ কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকলে তবেই তারা সেই প্রাণীর কাছে ঘেঁষে। যেমন, কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রাচুর্য রয়েছে, এমন জায়গা মশাদের পছন্দ। তাই সূর্যাস্তের পর বনজঙ্গলের ধারেকাছে মশার উপদ্রব বাড়ে। আবার অপরিচ্ছন্ন জায়গা, জল জমে আছে, এমন জায়গাও তাদের আকর্ষণ করে। মশাদের উত্তেজিত করে ডাইমিথাইল সালফাইড, ল্যাক্টিক অ্যাসিড, এ সবের গন্ধ। মশাও অ্যালকোহল পছন্দ করে। অ্যালকোহল ভেঙে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হওয়ায় এর গন্ধ মশার মস্তিষ্কে আলাদা সঙ্কেত পাঠায়। তাই মদ্যপায়ীদের বেশি আক্রমণ করে মশা। আবার যাঁদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’, তাঁদের রক্তও মশাদের বড় প্রিয়। অতিরিক্ত মেদযুক্ত মানুষের প্রতিও তারা আকৃষ্ট হয়। সাধারণত, কার্বন ডাই অক্সাইডের গন্ধ অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়। মশারা পারিপার্শ্বিক গ্যাসের উৎস ও তার আধিক্য টের পায়। তখন বাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বা রান্নাঘরের চিমনি বা ঘুলঘুলির চারপাশে তাদের বেশি ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। তবে সারা বিশ্বেরই পরিবর্তিত আবহাওয়া ও সময়ের সঙ্গে মশাদের রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা যেমন বেড়েছে, তেমনই কীটনাশকের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার জিনগত ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মশা মারতে তাই চেষ্টাচরিত্র একটু বেশিই করতে হবে এখন।

Advertisement
আরও পড়ুন