SIR in West Bengal

খসড়া তালিকা ঘিরে বিভ্রান্তি! অভিযোগ: ফর্ম পূরণের পরেও কমিশনের কাছে কেউ ‘নিখোঁজ’, কেউ ‘মৃত’! ধন্দে বিএলও-রাও

যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই নাম থাকার কথা খসড়া তালিকায়। কিন্তু অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে ফর্ম জমা দেওয়ার পরেও খসড়া তালিকায় নাম ওঠেনি। বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:০০
নির্বাচনের সময়ে বুথের বাইরে ভোটারদের লাইন।

নির্বাচনের সময়ে বুথের বাইরে ভোটারদের লাইন। — ফাইল চিত্র।

খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে ভোটারদের মধ্যে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করেছে। কোথাও অভিযোগ, জীবিত ভোটারকে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছে। কোথাও আবার ভোটারের নাম চলে গিয়েছে ‘নিখোঁজ’ তালিকায়। কোথাও আবার অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারকে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ পেয়ে পদক্ষেপও করেছে কমিশন। শোকজ় করা হয়েছে কয়েক জন বিএলও-কে।

Advertisement

মঙ্গলবার খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়েছে। মৃত, স্থানান্তরিত, নিখোঁজদেরও বুথভিত্তিক তালিকাও আগেই প্রকাশ হয়েছে। খসড়া তালিকা প্রকাশের দিন বিতর্কের প্রথম সূত্রপাত হয় হুগলির ডানকুনির এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম ঘিরে। ওই কাউন্সিলর দিব্য জীবিত। কিন্তু কমিশনের খাতায় তিনি হয়ে গিয়েছেন ‘মৃত’। শুধু ওই একটিই ঘটনা নয়। বিভিন্ন জেলা থেকে খসড়া তালিকায় ত্রুটির অভিযোগ উঠে এসেছে।

হুগলিরই চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের নলডাঙায় ১২০ নম্বর বুথের বাসিন্দা বৃদ্ধ দম্পতি স্নেহময় ও শিখা ভট্টাচার্যের বড় ছেলে দেবময় ভট্টাচার্যকে ‘মৃত’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দেবময় বর্তমানে এ রাজ্যের ভোটারই নন। কর্মসূত্রে সস্ত্রীক ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে থাকেন। দাবি, সেখানে ভোটার তালিকাতেও নাম তুলেছেন তিনি। এসআইআর শুরু হওয়ার পরে বিএলও-কে সব তথ্য দিয়েছিলেন বৃদ্ধ স্নেহময়। সে ক্ষেত্রে তাঁর নাম ‘স্থানান্তরিত’ হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার কথা। অথচ কমিশনের খাতায় নামের পাশে লেখা ‘মৃত’। বিষয়টি নজরে আসার পরে এলাকার বিএলও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁদের দাবি, বিএলও তাঁদের ফোনে জানিয়েছেন, কী ভাবে এটি হল তা তিনিও বুঝে উঠতে পারছেন না।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাদুড়িয়ায় আবার একই বুথের সাত জন ভোটারকে ‘নিখোঁজ’ বলে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে নাম নেই বাদুড়িয়ার চাতরা পঞ্চায়েতের ১৫ নম্বর বুথের সাত জন বাসিন্দার। অভিযোগ, কমিশন পৃথক ভাবে নাম বাদ যাওয়াদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই তালিকায় ‘নিখোঁজ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁদের। কেন নিজেদের নাম খসড়া তালিকায় উঠল না, তা বুঝে উঠতে পারছেন না দুলাল মৃধা, ইয়ারুন বিবি, শিখা মণ্ডল বা মীরা চক্রবর্তীরা। তাঁদের দাবি, তাঁদের কাছে এনুমারেশন ফর্মের ‘রিসিভ কপি’ রয়েছে। ফলে বাড়ি এসে খুঁজে না পেয়ে বিএলও ঘুরে গিয়েছেন, এমন প্রশ্নই ওঠে না।

কী কারণে সাত জনের নাম বাদ গেল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না এলাকার বিএলও অভিনব দত্তও। তিনি বলেন, “সার্ভার ডাউন থাকার জন্য হয়েছে। এ রকম সমস্যা ৩৪ জনের হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সবগুলি সমাধান করা গেলেও এই সাত জন কী ভাবে মিসিং হল আমি জানি না। আমি জানতে পারা মাত্রই ব্লক আধিকারিককে জানিয়েছি। আশা করি, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

জীবিত হয়েও মৃতের তালিকায় নাম উঠে গিয়েছে উত্তর হাওড়া বিধানসভা এলাকার ২১৪ নম্বর বুথের বাসিন্দা গায়ত্রী তিওয়ারির। ৭২ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধার দাবি, তিনি এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেছেন। সব তথ্যও জমা দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের অন্যদের নাম থাকলেও খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বৃদ্ধার নাম। কমিশনের হিসাবে তাঁকে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এলাকার বিএলও-র সঞ্জয় সিংহের বক্তব্য, কী ভাবে এই সমস্যা হল, তা তিনিও বুঝতে পারছেন না। তবে ত্রুটি সংশোধন করে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে আবার অভিযোগ উঠছে, এমন ব্যক্তির নাম খসড়া তালিকায় রয়েছে, যিনি ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেরই ভোটার। দাবি করা হচ্ছে, ননীগোপাল মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তি বিজেপি কর্মী। তিনি বাংলাদেশেরও ভোটার বলে অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে মেমারি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও-র দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন জনৈক বিমল মণ্ডল। এ বিষয়ে ব্লকের বিডিও শতরূপা দাস বলেন, “অভিযোগের তদন্ত হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।”

আবার পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত প্রধানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি শিবির। কালনা মহকুমার হাটকালনা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবন্তী মণ্ডল এবং পূর্বস্থলীর মেড়তাল পঞ্চায়েতের প্রধান সন্তোষী দাসের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। এ বিষয়ে কালনার মহকুমাশাসক অহিংসা জৈন এই প্রসঙ্গে বলেন, “যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

খসড়া তালিকায় ভুলত্রুটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করেছে কমিশন। ডানকুনির তৃণমূল কাউন্সিলরের ঘটনায় মঙ্গলবারই জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর। সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন ওই বুথের বিএলও কুশ হাজরা। খসড়া তালিকায় ভুলত্রুটির জন্য বুধবার কমিশন তিন জন বিএলও-কে শোকজ় করেছে। হুগলির চণ্ডীতলা, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং কোচবিহার দক্ষিণের তিনটি ঘটনায় এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, “এই ভুলগুলি না করাই উচিত ছিল। এতে কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। লোকে কমিশনের দিকে আঙুল তুলছে, প্রশ্ন তুলছে।”

Advertisement
আরও পড়ুন