Air Pollution Monitoring Device

বাতাসে কতটা মিশছে কার্বন-সালফার? ধরা পড়বে পকেট-সেন্সরে, বায়ুদূষণ রোধে নয়া আবিষ্কারের দাবি

প্রতি শ্বাসেই শরীরে ঢুকছে বিষাক্ত গ্যাস, ছারখার করে দিচ্ছে ফুসফুস। এই প্রথম বার বাতাসে দূষিত গ্যাসের মাত্রা মাপতে এমন যন্ত্র তৈরি হল, যা পকেটে নিয়েই ঘোরা যাবে। দূষণের মাত্রা কত, তা সঠিক ভাবে নির্ণয় করবে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ১৪:১৯
Indian Scientist invent new Pocket-sized sensor to monitor Air Quality and detect toxic gases

হাঁপানি, সিওপিডির রোগীদের কী ভাবে সাহায্য করবে পকেট-সেন্সর? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দিল্লির মতো দূষণের কবলে রয়েছে কলকাতাও। প্রতি মুহূর্তে বাতাসে মিশছে কার্বন-ডাই অক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস। রাস্তায় বেরোলেই নাক-মুখ জ্বালা করে বেশির ভাগ সময়েই। হাঁপানি বা সিওপিডির রোগীদের কষ্ট আরও বেশি। প্রতি শ্বাসেই শরীরে ঢুকছে বিষাক্ত গ্যাস, ছারখার করে দিচ্ছে ফুসফুস। দূষণের মাত্রা মাপতে নানা রকম যন্ত্র বসানোর কাজ হয়েছে আগেই। তবে সেই সব যন্ত্র অনেক উচ্চমানের, তাতে খরচও বেশি। এই প্রথম বার বাতাসে দূষিত গ্যাসের মাত্রা মাপতে এমন যন্ত্র তৈরি হল, যা পকেটে নিয়েই ঘোরা যাবে। দূষণের মাত্রা কত তা সঠিক ভাবে নির্ণয় করবে। কোন এলাকায় দূষিত গ্যাস বেশি মিশে রয়েছে বাতাসে, তা বুঝে সতর্কও হতে পারবেন।

Advertisement

বেঙ্গালুরুর ‘সেন্টার ফর ন্যানো অ্যান্ড সফ্‌ট ম্যাটার সায়েন্সেস’ পকেটের মাপের সেন্সর তৈরি করেছে, যা বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রা পরিমাপ করতে পারবে। এই সালফার ডাই অক্সাইড খুবই বিষাক্ত গ্যাস। যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া, জীবাশ্ম জ্বালানি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে এই গ্যাস বেরিয়ে বাতাসে মিশে যায়। দেশের অনেক শহরে, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে সালফার-ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য বায়ুদূষকের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্ধারিত মানদণ্ডকে অতিক্রম করেছে বহু দিন। উৎসবের সময়গুলিতে বাজি পোড়ানোর ধোঁয়ায় বাতাসে সালফারের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়, যা থেকে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ে। সিওপিডি থাকলে তা বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে যায়। এই সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দূষণকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাই চলছে। সেই কাজ করতেই ওই ছোট্ট ডিভাইসটি সাহায্য করতে পারবে বলেই মত বিজ্ঞানীদের।

বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যন্ত্রটিতে দু’রকম ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে— নিকেল অক্সাইড ও নিওডাইমিয়াম নিকেলেট। এই দুই ধাতু মিশিয়ে এমন সেন্সর তৈরি হয়েছে, যা বাতাসে ভাসমান দূষিত পদার্থ ও সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে। বর্তমান পরিকাঠামোয় ১০ মাইক্রন পর্যন্ত ঘনত্বের ধূলিকণা মাপা সম্ভব হয়। কিন্তু শহরের বাতাসে ভাসতে থাকা ২.৫ মাইক্রন বা তার থেকেও বেশি সূক্ষ্ম ধূলিকণা মাপা যায় না। নতুন যন্ত্রটি সেই কাজ করতে পারবে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রথমে দূষণের উৎসগুলি চিহ্নিত করবে, তার পরে কোন উৎস থেকে কী পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে, তা নির্দিষ্ট ভাবে পরিমাপ করবে, কোন এলাকার বাতাসে কী পরিমাণ দূষিত গ্যাস মিশছে, তা এলাকা ভিত্তিতে নির্ধারণও করতে পারবে।

বিশ্ব পরিবেশ সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর বায়ুদূষণের ফলে প্রচুর মানুষের অকালে মৃত্যু হচ্ছে। ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ববাসী বর্তমানে দূষণমুক্ত বায়ু থেকে বঞ্চিত। বায়ুদূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওজোন স্তরের ক্ষয়ের সমস্যাও। বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীতে কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেনের মতো বিভিন্ন গ্যাসের একটি নির্দিষ্ট চক্র রয়েছে। সেই চক্র অনুসারে পৃথিবীতে অক্সিজেন, নাইট্রোজেনের মতো মৌল স্বাভাবিক নিয়ম মেনে আবর্তিত হয়। ফলে পরিবেশে যে কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে, তা সব সময়ই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে সীমিত থাকে। কিন্তু মানুষের কাজকর্মের ফলে এই চক্র দিনের পর দিন ব্যাহত হচ্ছে। ২০১৯ সালের সমীক্ষা বলছে, কলকাতা শহরের বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড সহনমাত্রার মধ্যে ছিল, কিন্তু কিন্তু নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড ও ভাসমান ধূলিকণার মতো দূষকের মাত্রা ছিল অনেক বেশি। আর এখন সব কিছুই বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। দূষিত গ্যাসের মাত্রা যত বাড়ছে, ততই ফুসফুসের জটিল রোগ, শ্বাসজনিত অসুখবিসুখের প্রকোপ বাড়ছে। পকেট-সেন্সর মানুষকে কিছুটা হলেও সচেতন করতে পারবে বলেই আশা বিজ্ঞানীদের।

Advertisement
আরও পড়ুন