New Research on Malaria

ওষুধ খেয়ে রোগমুক্ত হবে মশারা! ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ঠেকাতে নয়া কৌশল বিজ্ঞানীদের

মশা মারতে আর কামান দাগার প্রয়োজন নেই। মানুষের শরীরে কখন ম্যালেরিয়ার জীবাণু ঢুকে রোগ ছড়াবে, সেই অবধিও অপেক্ষা করতে হবে না। বরং মশাকেই রোগমুক্ত করার নতুন ফন্দি আঁটা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ১৩:০৬
Mosquitoes should be given malaria drugs to clear their infection

ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু রুখতে বড় গবেষণা বিজ্ঞানীদের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ভয়কে কি এ বার তা হলে সত্যিই জয় করা যাবে? আর আক্রান্তও হতে হবে না ম্যালেরিয়ায়? নতুন ওষুধ তৈরি করছেন আমেরিকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। তবে এ ওষুধ মানুষের জন্য নয়, তা খাওয়ানো হবে মশাকে। আর ওষুধ খেয়েই তাদের শরীরে বাসা বেঁধে থাকা ম্যালেরিয়ার জীবাণু সমূলে বিনাশ হবে বলেই দাবি।

Advertisement

বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ নতুন গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মশা মারতে আর কামান দাগার প্রয়োজন নেই। মানুষের শরীরে কখন ম্যালেরিয়ার জীবাণু ঢুকে রোগ ছড়াবে, সেই অবধিও অপেক্ষা করতে হবে না। বরং মশাকেই রোগমুক্ত করার নতুন ফন্দি আঁটা হয়েছে। এ বার থেকে ওষুধ খাবে মশারা। আর সেই ওষুধ তাদের শরীরে ঢুকে ম্যালেরিয়ার জীবাণুকে ধ্বংস করবে। তাতে মশাও জীবাণুমুক্ত হবে আর রোগও ছড়াবে না।

মশাকে ওষুধ খাওয়ানোর নতুন কৌশল

স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার শরীরেই বাসা বাঁধতে পছন্দ করে এককোষী জীব বা প্রোটোজোয়া প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ও প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম। এর মধ্যে ফ্যালসিপেরামই হল বেশি বিপজ্জনক। এই পরজীবীর কারণেই ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। কাজেই ফ্যালসিপেরামই হল আসল খলনায়ক। তাকে জব্দ করতেই দু’রকমের ওষুধ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ডের গবেষক আলেকজান্দ্রা প্রোব্‌স্ট।

ম্যালেরিয়ার যে পরজীবী তারা কিন্তু খুবই কৌশলী। মশার লালা থেকে মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ার পরই তারা সবচেয়ে আগে লোহিত রক্তকণিকার দেওয়ালে গিয়ে সেঁটে যায়। এর পর তাদের দেহের বাইরের দেওয়ালে থাকা তিনটি প্রোটিন ‘আরএইচ-৫’, ‘সিওয়াই-আরপিএ’ ও ‘আরআইপিআর’ দিয়ে লোহিত রক্তকণিকার দেওয়াল ফুটো করে ভিতরে সেঁধিয়ে যায়। আর এক বার রক্তকণিকার দেওয়াল ফেটে গেলে পরজীবীরা সেখানে ঢুকিয়ে দেয় নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ। তখনই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।

হার্ভার্ডের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মানুষের শরীরে পরজীবী ঢুকে গেলে তখন তাকে রোখা প্রায় অসম্ভব। কাজেই তার আগে মশার শরীরেই বিনাশ করতে হবে পরজীবীদের। সে জন্যই দু'টি ওষুধ বানানো হয়েছে। তবে ওষুধ তৈরি করলেই তো হবে না, সেগুলি মশাকে খাওয়াতেও হবে। তারও উপায় বার হয়েছে। এমন এক ধরনের মশারি তৈরি হচ্ছে যেগুলির নাইলনের তারেই ঢোকানো থাকবে ওষুধ। অর্থাৎ আস্ত মশারিটিই ওষুধ মাখানো থাকবে। তার যেখানেই মশা বসুক না কেন, তার লালা দিয়ে ওষুধ ঢুকবেই। এই ওষুধই মশার শরীরে বিষের মতো কাজ করবে। মশাটি না মরলেও তার শরীরে বাসা বেঁধে থাকা পরজীবীরা ধ্বংস হতে থাকবে।

গবেষকেরা সমীক্ষা করে দেখেছেন, এই প্রক্রিয়ায় ফ্যালসিপেরাম জীবাণুদের প্রায় ১০০ শতাংশ নষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে। তবে মশারি বা নেটে ওষুধ ভরে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল, তাই সেটি বাস্তবে প্রয়োগ করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের আশা, নতুন কৌশলটি সাফল্য পেলে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে বহু মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি, রোগ সারাতে আর কড়া অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হবে না।

Advertisement
আরও পড়ুন