Vaccine through Dental Floss

সুচ ছাড়াই দেওয়া যাবে টিকা, কী ভাবে? টিকাকরণের ‘অভিনব’ পদ্ধতি আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা

টিকা দেওয়ার কী কী প্রক্রিয়া হতে পারে, তা নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একটি সহজ উপায় হল দাঁত খোঁচানো। তাতেই নাকি মাড়ির মধ্যে চট করে ওষুধ ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। কোনও জ্বালাও নেই, যন্ত্রণাও নেই।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৪১
New study says, needle-free Vaccine method could deliver antibody throughout the body

দাঁত খুঁচিয়ে টিকা দেওয়া যাবে, দূরে থাকবে সব রোগবালাই। ফাইল চিত্র।

সুচ ছাড়া কী ভাবে টিকা দেওয়া যায়, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কোভিডের সময়েও এমন নানা ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে চর্চা হচ্ছিল। হাতে, পায়ে বা কোমরে বড়সড় একটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ না ফুটিয়ে যদি সহজ উপায়ে চট করে প্রতিষেধক শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে লোকজনের ভয় কমে এবং টিকাকরণের কাজও সহজে হয়। টিকা দেওয়ার কী কী প্রক্রিয়া হতে পারে, তা নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একটি সহজ উপায় হল দাঁত খোঁচানো। তাতেই নাকি মাড়ির মধ্যে চট করে ওষুধটা ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। কোনও জ্বালাও নেই, যন্ত্রণাও নেই। আমেরিকার টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার গবেষকেরা এই নতুন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছেন।

Advertisement

আসলে বিষয়টা ঠিক দাঁত খোঁচানো নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে ‘ডেন্টাল ফ্লস’। দাঁতের ফাঁকে, মাড়ির কোনায় জমে থাকা খাবারের টুকরো, ময়লা যা কিছু আছে, সব টেনে বার করা হয় যে পদ্ধতিতে তারই নাম ফ্লসিং। টুথপিক দিয়ে দাঁত খোঁচানোরই আরও একটি উন্নত সংস্করণ, যা সুতো দিয়ে করা হয়। এখন অবশ্য ফ্লসের জন্য নানা রকম ছোটখাটো টুল বেরিয়ে গিয়েছে। দন্তচিকিৎসকেরা বলেন, ফ্লসিং করলে দাঁত ও মাড়ি ভাল থাকে। এতে দাঁত-মাড়িতে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে যায় এবং ক্যাভিটি হওয়ার ভয় থাকে না। মুখের ভিতরের স্বাস্থ্য যদি ভাল থাকে, তা হলে নানা রোগের ঝুঁকিও কমে। ফ্লসিংয়ের তাই যথেষ্টই গুরুত্ব রয়েছে। তাই এই পদ্ধতিকেই টিকা দেওয়ার উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন গবেষকেরা।

ডেল্টাল ফ্লস দিয়ে টিকা দেওয়া যাবে কী ভাবে?

লক্ষ্য হল শরীরে প্রতিষেধক ঢোকানো। ‘নেচার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ জার্নালে যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, ফ্লসিং টুলে ওষুধ রেখে তা মাড়িতে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। এতে মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে, আর ওষুধও লালার মাধ্যমে পেটের ভিতর সেঁধিয়ে যাবে। পরে রক্তপ্রবাহে মিশে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে শরীরে।

তবে শুনতে যত সহজ লাগছে, প্রক্রিয়া তত সহজ নয়। ফ্লসিং করতে হবে বিশেষ পদ্ধতিতে। দাঁত এবং মাড়ির সংযোগস্থলে এক প্রকার বিশেষ কোষ থাকে, যাকে 'জংশনাল এপিথেলিয়াম' বলা হয়। এই কোষের বৈশিষ্ট্য হল সেটি শক্ত নয়, বরং নরম। সেখান দিয়ে ওষুধ ঢোকানো অনেক সহজ। বিজ্ঞানীরা ফ্লসিং টুলে একটি বিশেষ রকম আস্তরণ দেবেন, যাতে ওষুধ ঢোকানো থাকবে। সেই টুল দিয়ে ফ্লস করার সময়ে আস্তরণের ভিতরে থাকা ওষুধ মাড়ির ভিতর ঢুকে যাবে। এর সুবিধা হল, প্রতিষেধক লালায় মিশে গলা দিয়ে নামার সময়ে নাক ও ফুসফুসেও অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। ফলে কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ার মতো রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসকেও দূরে রাখা সম্ভব হবে।

গবেষণাটি আপাতত পশুদের উপর করা হচ্ছে। মানুষের উপর পরীক্ষা এখনও শুরু হয়নি। সেই কাজও শুরু হওয়ার মুখে। তবে সমস্যা হল, ফ্লস-টিকা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। দাঁতের সমস্যা থাকলে বা শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ফ্লসিং পদ্ধতি উপযোগী হবে কি না, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তাও করছেন গবেষকেরা।

Advertisement
আরও পড়ুন