Eye Care Guide

কনজাঙ্কটিভাইটিসের সংক্রমণ বাড়ছে, ভাইরাসজনিত চোখের আর কী কী রোগ নিয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা?

ভাইরাল জ্বরের দাপট কমতেই ঘরে ঘরে কনজাঙ্কটিভাইটিসের সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। আক্রান্তের তালিকায় শিশু থেকে বয়স্কেরাও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
Prevent conjunctivitis and other eye infections with proper hygiene

চোখ ভাল রাখার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা। ছবি: ফ্রিপিক।

পুজোর সময়টাতে প্রতি বছরই যেন নিয়ম করে ফিরে আসে কনজাঙ্কটিভাইটিস। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্ষার শুরুতে ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বেড়েছিল। সে দাপট কমতেই ঘরে ঘরে কনজাঙ্কটিভাইটিসের সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। আক্রান্তের তালিকায় শিশু থেকে বয়স্কেরাও। কনজাঙ্কটিভাইটিস কেবল নয়, ভাইরাসজনিত চোখের আরও সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।

Advertisement

বড় বালাই কনজাঙ্কটিভাইটিস

যত বেশি ভিড়, গা ঘেঁষাঘেঁষি, ততই কনজাঙ্কটিভাইটিসের জীবাণুর বাড়বাড়ন্ত। আর পুজোর সময় তো ভিড় হবেই। শিশু, বয়স্কদের নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোবেন অনেকেই। সেই সময়ে যদি কনজাঙ্কটিভাইটিস ছড়াতে শুরু করে, তা হলে উদ্বেগ বাড়বে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। গ্লকোমা কনসালট্যান্ট নিলয়কুমার মজুমদার সতর্ক করে জানিয়েছেন, কনজাঙ্কটিভাইটিসের মূল কারণ হল ভাইরাস। ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণও হয়, তবে সংখ্যায় কম। চোখের কনজাঙ্কটিভা আক্রান্ত হলেই এই অসুখ হয়। বর্ষার সময়ে বাতাসের জলীয় কণায় ভর করে ভেসে বেড়ায় অনেক ভাইরাস, যার মধ্যে শক্তিশালী অ্যাডিনোভাইরাস চোখে সংক্রমণ ঘটায়। কর্নিয়ায় ছোট ছোট দানা তৈরি হয়। যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে, আঠালো তরল বার হয়, পিচুটি জমে যায় চোখে। একেই বলে কনজাঙ্কটিভাইটিস।

কনজাঙ্কটিভাইটিসের নানা ধরন

ব্যাক্টেরিয়াঘটিত কনজাঙ্কটিভাইটিস: চোখে হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া বা স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াসের মতো জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে এই ধরনের কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়। চোখে লাল ভাব, চুলকানি এবং চোখে হালকা হলুদ কিংবা সবুজ রঙের পিচুটি জমাট বাঁধলে সতর্ক হোন।

ভাইরাসঘটিত কনজাঙ্কটিভাইটিস: অ্যাডিনোভাইরাস, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (এইচএসভি) কিংবা ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (ভিজেডভি)-এর সংক্রমণের কারণে এই কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়। লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, চোখে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে অনবরত জল বেরোনো।

রাসায়নিক থেকে কনজাঙ্কটিভাইটিস: ক্লোরিন বা ডিটারজেন্টের মতো রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে এই সংক্রমণ হয়। চোখ দিয়ে জল পড়া, লালচে ভাব, চোখে চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কনজাঙ্কটিভাইটিসের ভয়ে বাড়িতে বসে থাকা যায় না, কাজের প্রয়োজনে বাইরে বেরোতেই হবে। ভিড় যানবাহনেও উঠতে হবে। আর পুজোর সময় বাইরে যেতেও হবে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি।

হারপিস সিমপ্লেক্স কেরাটাইটিস

হা্সরপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের কারণে কর্নিয়ায় সংক্রমণ ঘটে। চোখে ব্যথা, লাল হয়ে ফুলে ওঠা, আলো পড়লেই চোখে যন্ত্রণা হতে থাকে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসাও হয়ে যায়। কারও যদি হারপিস হয়ে থাকে, তা হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ভাইরাসের কারণেই ফের চোখে সংক্রমণ ঘটতে পারে।

ভেরিসেলা জ়স্টার অপথ্যালমিকাস

চিকেনপক্স বা হারপিস জ়স্টার ভাইরাস চোখের স্নায়ুর ক্ষতি করে। তখন চোখের চারপাশে র‌্যাশ বেরোতে দেখা যায়। চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠে। চোখের পাতা ফুলে যায়। বয়স্কেরা এই রোগে আক্রান্ত হন বেশি।

চোখ ভাল রাখার উপায়

১) এই বিষয়ে চক্ষু চিকিৎসক সাগরিকা চৌধুরী জানিয়েছেন, যদি মনে হয় চোখ কড়কড় করছে, বালি পড়েছে বা চোখ থেকে আঠালো তরল বার হচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চক্ষু চিকিৎসককে দেখাতে হবে।

২) ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্তের ব্যবহার করা জিনিস, যেমন রুমাল, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।

৩) বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাইরে বেরোলে স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে রাখতে হবে।

৪) নিজের তোয়ালে, বালিশ বা প্রসাধনী অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করবেন না। বিশেষ করে অন্যের ব্যবহার করা কাজল, মাস্কারা, আইলাইনার ইত্যাদি প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করবেন না।

৫) সংক্রমিত হলে টিভি, মোবাইল, ল্যাপটপ দেখা কমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাত ধুতে হবে বা স্যানিটাইজ়ার লাগাতে হবে। হাত না ধুয়ে নিজের চোখে বা মুখে হাত দেবেন না অথবা খাবার খাবেন না। রোগীকে ওষুধ দেওয়ার পরেও হাত ধুতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন