India-Pakistan tension

যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগে ভোগেন বহু মনোরোগী, ভারত-পাক অস্থিরতার আবহে জেনে নিন রোগের উপসর্গ

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার ফলে অনেকেই যুদ্ধের আতঙ্কে ভুগছেন। ‘ওয়ার অ্যাংজ়াইটি’ ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৫ ১৮:৫৮
Reports suggest after operation sindoor many people might suffer from war anxiety

যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগ মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভয় বা অজানা আতঙ্ক মনের উপর প্রভাব ফেলে। পরিস্থিতি গুরুতর হলে বদলে যেতে পারে জীবনযাত্রা। নানা ধরনের আতঙ্কে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন করে চর্চায় চলে এসেছে ‘যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগ’ বা ‘ওয়ার অ্যাংজ়াইটি’ শব্দবন্ধটি।

Advertisement

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ১৪ দিনের মাথায় ভারতীয় সেনার পদক্ষেপ ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি জঙ্গিশিবির ধ্বংস করে দিয়েছে ভারত। সম্ভাব্য যুদ্ধের আবহে ৭ মে দেশ জুড়ে জনগণের জন্য ‘মক্‌ ড্রিল’ হয়েছে। ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রতি মুহূর্তে নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটছে। এর ফলে কারও কারও মনে আতঙ্ক বাসা বাঁধতে পারে। যার ফলে ব্যক্তির পারিবারিক এবং পেশাগত জীবনে ক্ষতি হতে পারে।

মনোবিদদের একাংশের মতে, কোনও দেশে যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু হলে, তা থেকে মনের উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। যুদ্ধের সম্ভাব্য অভিঘাত থেকে সমাজে আতঙ্ক ছড়াতে পারে। ক্রমাগত সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবর থেকে কারও আতঙ্ক বাড়তে পারে। দেশে যুদ্ধের পরিস্থিতি দেখা দিলে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করতে শুরু করেন। ফলে জন্ম নেয় কালোবাজার। যে কোনও যুদ্ধ দেশের অর্থনীতির উপরে গভীর প্রভাব ফেলে। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অনিশ্চয়তা থেকে মানুষের মনে ক্রমাগত আতঙ্ক দানা বাঁধতে পারে। এমনকি, ঘটনার অভিঘাতে কারও স্বভাব বদলে যেতে পারে। অনেকে অবসাদের শিকার হতে পারেন। কখনও কখনও পরিবারের সঙ্গেও কেউ অনৈতিক আচরণ করে ফেলেন।

যুদ্ধের আতঙ্ক এলাকাভিত্তিক হতে পারে। যেখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেই অঞ্চলে মানুষের মধ্যে এই আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। আবার সংঘর্ষপ্রবণ এলাকার জনমানসেও তা গভীর প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, দেশের কোনও প্রান্তে দু’পক্ষের সম্মুখ লড়াই না হলেও, সেখানেও অনিশ্চয়তা থেকে মানুষের মনে যুদ্ধ নিয়ে কোনও ভীতি তৈরি হতে পারে।

এর আগে ভারতে ২০১৬ সালে নোটবন্দি বা ২০২০ সালে অতিমারির সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলেও সাধারণ মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার হয়েছে। যুদ্ধ নিয়ে ক্রমাগত সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ছে। পরে তা খণ্ডন করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সংস্থা তথ্য প্রকাশ করছে। এই জাঁতাকলে জড়িয়ে পড়ছেন সাধারণে। ফলে মনের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। জন্ম নিচ্ছে অস্থিরতা। এমতাবস্থায় সরকারের তরফে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো’ (পিআইবি)-র এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লেখা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানি সমাজমাধ্যমের মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য ভারতে অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং আতঙ্ক ছড়ানো। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ছড়ানো ভুয়ো খবরের শিকার হবেন না। সতর্ক থাকুন। সাবধান থাকুন।’’ কিন্তু এমন সব কথাও অনেকের মনে যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগের জন্ম দেয়।

যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগ হল একটি মানসিক অবস্থা। মনোরোগ চিকিৎসকেরা একে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন সারা বিশ্বেই। এ ক্ষেত্রেও তেমন হতে পারে। তার জন্য চিনতে হবে উপসর্গগুলি।

যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগের উপসর্গ কী কী?

১) ক্রমাগত যুদ্ধ এবং নিজের সুরক্ষা বিষয়ক দুশ্চিন্তা যদি কাউকে ভাবিয়ে তোলে, বুঝতে হবে তিনি যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগে ভুগছেন।

২) যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদে উৎসাহ বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খবরের চ্যানেল দেখতে থাকলে বুঝতে হবে আপনি আতঙ্কগ্রস্ত।

৩) সমাজমাধ্যমে যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন মতামত বা ভুয়ো খবর যদি কাউকে বিচলিত করে, তা হলেও তা মানসিক উদ্বেগের লক্ষণ।

৪) রাতে ঘুমোতে না পারা বা বার বার দুঃস্বপ্ন দেখলে সাবধান হতে হবে।

৫) এই রকম অস্থির সময়ে বার বার মুড সুইং হতে পারে। যদি অন্য কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ে, রাগ বা হতাশা দেখা দেয়, তা হলে সাবধান হতে হবে।

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কে মন ভরাক্রান্ত করলে কোনও মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

Advertisement
আরও পড়ুন