Kidney Disease

কেন হয় কিডনির রোগ? আসল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকেরা, হাতেনাতে ধরলেন খলনায়ককে

কিডনি কেন বিকল হয়? শুধু জল কম খাওয়াই কি কারণ? গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এমন এক ধরনের ফ্যাট মলিকিউল আছে, যা কিডনির উপর হামলা চালায়। সেই হল আসল খলনায়ক।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৪১
Researchers uncovered how fatty molecules called ceramides trigger acute kidney disease

কিডনির রোগ কেন হয়,আসল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকেরা? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কিডনির রোগ কেন হয়? নেপথ্যের কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকেরা। কিডনির উপর দাপট দেখায় এক বিশেষ ধরনের স্নেহপদার্থ। সেটি শরীরের শক্তি উৎপাদনকারী কোষ মাইটোকনড্রিয়াকে ফালা ফালা করে দেয়। ফলে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয়। কোষকে শক্তিহীন করে দিয়ে সেটি সরাসরি আঘাত হানে কিডনির উপরে। একে একে নষ্ট করতে থাকে কিডনির সুস্থ ও সবল কোষগুলিকে। ফলে যে রোগটি দেখা দেয়, তার নাম ‘অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি’। এটি হল সূত্রপাত। কিডনির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে শেষে কিডনি বিকল হওয়া শুরু হয়।

Advertisement

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের সঙ্গে এই গবেষণায় রয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ইউটা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, সেই স্নেহপদার্থটির নাম ‘সেরামাইড’। এটি সকলের শরীরেই থাকে। তবে বাইরের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে এর মাত্রা বেড়ে যায়। এই ‘সেরামাইড’ যদি অধিক পরিমাণে রক্তে মেশে, তা হলে সেটি মাইটোকনড্রিয়ার উপর হামলা করবে। মাইটোকনড্রিয়া হল শরীরের শক্তি তৈরির ঘর। সেখানে কোষের জন্য শক্তি (এটিপি) তৈরি হয়। কোষের জন্ম-মৃত্যু, ক্যালশিয়াম সঞ্চয় করে রাখা, সঙ্কেত আদানপ্রদানেও এর বড় ভূমিকা আছে এর। মাইটোকনড্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষের শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াটিই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোষগুলির সুরক্ষাকবচ নষ্ট হতে থাকবে। সেই সুযোগেই সেরামাইড আক্রমণ করে কিডনির কোষগুলিকে।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, সেরামাইডের আধিক্য ঘটলে কিডনির সমস্ত মাইটোকনড্রিয়া কোষগুলিকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে কিডনির সুস্থ কোষগুলি অকেজো হয়ে যেতে থাকে। গবেষকেরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেরামাইড বেশি হলে কিডনি ফেলিয়োরের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। আবার সেরামাইডের মাত্রা কমিয়ে ফেললেই, কিডনি সুস্থ হচ্ছে ধীরে ধীরে।

সেরামাইডের পরিমাণ যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা হলেই কিডনির অসুখ হওয়ার ঝুঁকি পুরোপুরি কমে যাবে বলেই দাবি করেছেন গবেষকেরা। সে ক্ষেত্রে সেরামাইডের মাত্রা কমাতে হলে বিশেষ কোনও ওষুধ খেতে হবে, না হলে ইঞ্জেকশন নিতে হবে। কী উপায়ে সেরামাইডকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, সে চেষ্টাই শুরু হয়েছে। মানুষের উপর পরীক্ষা করেও দেখা হচ্ছে। গবেষকেরা ‘সেরামাইড কন্ট্রোল থেরাপি’ করে দেখছেন সেটি কতটা কার্যকরী হয়। যত জনের উপর এই থেরাপি করা হয়েছে, তাঁদের কিডনির রোগ নির্মূল হওয়ার পথে বলেও দাবি করা হয়েছে। থেরাপিটি করার পরে কিছু বদল দেখা গিয়েছে রোগীর শরীরে— ১) কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি মেরামত হয়েছে ২) কিডনির ক্রনিক রোগে যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের ডায়ালিসিসের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমেছে ৩) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।

তবে গবেষণাটি আরও বৃহত্তর পর্যায়ে করা উচিত বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিচার করেই থেরাপি করা হবে। সকলের ক্ষেত্রে যদি একই রকম কার্যকরী ফল দেয়, তা হলেই থেরাপিটি কিডনির অসুখ সারাতে প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

Advertisement
আরও পড়ুন