ঘরে ঘরে জ্বর, কী কী খাবেন ও কী নয়? ছবি: ফ্রিপিক।
ভাইরাল জ্বর সারলেও দুর্বলতা থেকে যায় বেশ কিছু দিন। ঋতু বদলের এই সময়ে শুধু ভাইরাল জ্বর নয়, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণও ঘটছে। সর্দি-কাশি, পেটের গোলমাল সারতে চাইছে না। জ্বর কমার পরেও ক্লান্তি থাকছে, গা, হাত-পায়ে ব্যথা ভোগাচ্ছে। গলা ব্যথা এতটাই যে খাবার গিলতেও কষ্ট হচ্ছে। তাই এই সময়ে রোজের খাদ্যাভ্যাসে খানিক নজর দিলেই অসুখের হঠাৎ আক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়। জ্বরের সময়ে ও সেরে ওঠার পরে কী কী খাবেন ও কোন কোনটি বাদ দেবেন, তা জেনে রাখা জরুরি।
জ্বরের সময়ে কী কী খাবেন?
জ্বর বা যে কোনও অসুস্থতার সময়ে পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হল স্যুপ। সব্জি দিয়ে হালকা স্যুপ বা চিকেন দিয়ে স্যুপে ভরপুর পুষ্টি থাকে। এতে যেমন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলি ভরপুর মাত্রায় থাকে, তেমনই ফাইবারও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। এই সময়ে মুসুর ডালের স্যুপ খেতে পারেন। প্রথমে মুসুর ডাল ভাল করে ধুয়ে নিয়ে একটি পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন। পছন্দ মতো সব্জি ছোট ছোট করে কেটে নিন। এ বার প্রেশার কুকারে সামান্য ঘি দিয়ে তার মধ্যে পেঁয়াজ, আদা, টম্যাটো, কেটে রাখা সব্জি এবং ভেজানো ডাল একসঙ্গে সেদ্ধ করতে দিন। সঙ্গে নুন এবং গোলমরিচ দিতে ভুলবেন না। প্রেশার কুকারে দুটো সিটি উঠলেই নামিয়ে ফেলুন।
হালকা ও তরল খাবারই বেশি খেতে হবে এই সময়ে। টাটকা ফলের রস বা স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। ২ থেকে ৩ কাপ জল নিতে হবে। এ বার কাচের জারে জল নিয়ে তাতে এক কাপ আনারসের টুকরো, ৫-৬টি পুদিনা পাতা ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা দুয়েক। তার পর সেই জল খেতে হবে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়বে।
জ্বরের সময়ে দুধ-চিনি দেওয়া চা বা কফি খেলে শরীরে ক্যাফিনের মাত্রা বাড়বে। এতে প্রদাহ তৈরি হবে। এই সময়ে গ্রিন টি বা ভেষজ চা দু’বেলা খেলে আরাম পাবেন। এর জন্য দারচিনি বা তুলসীর চা খেতে পারেন। একটি পাত্রে জল গরম করে তাতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিন। তার পর মধু ও লেবু মিশিয়ে নিলেই তৈরি তুলসী চা। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। দারচিনির চা বানাতে একটি পাত্রে জল গরম করে দারচিনি গুঁড়ো, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন। তার পর এই চা ছেঁকে খান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে বাঁচাতে সহায়তা করে।
জ্বর কমে যাওয়ার পরে
জ্বর সেরে যাওয়ার পরে দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছে। মুখে অরুচিও হচ্ছে। এই সময়ে কিছু খাবার খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ ডাব, যা দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে। ডাবের জল দিন কয়েক খেলে শরীরে জল ও খনিজের ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিমের সাদা অংশ, মাছ, মুরগির মাংস চর্বি বাদ দিয়ে, দুধ–দই ও নিরামিষের মধ্যে ছোলা, মুসুর ডাল, সয়াবিন ও নানা রকম বাদাম খেতে পারেন।
ডালিয়ার খিচুড়ি, ওট্স, রাগি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি খেলে হজম দ্রুত হবে। ভাতের সঙ্গে চিকেন স্ট্যু, পাতলা করে রান্না করা মাছের ঝোল খেতে পারেন।
মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। গলা ব্যথা বা কাশি কমাতেও সাহায্য করে। ঈষদুষ্ণ জলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাবেন।
কী কী খাবেন না?
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন, নরম পানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম খাবেন না।
কেটে রাখা ফল বা কাঁচা আনাজ দিয়ে বানানো স্যালাড না খাওয়াই ভাল।
ফ্রিজে রেখে দেওয়া পাউরুটি, বাসি খাবার ভুলেও খাবেন না।
চিপ্স, সসেজ, সালামি, জাঙ্ক ফুড, যে কোনও প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া চলবে না।
রাস্তায় বিক্রি হওয়া লস্যি, শরবত খাবেন না।