বিমানে চাপার আগে জেনে নিন হার্টের রোগীরা। ছবি: সংগৃহীত।
আড়াই ঘণ্টার যাত্রা। বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা। বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ও তাঁর কন্যাও রয়েছেন। হঠাৎ মাঝআকাশে তাঁদের আসনের দিক থেকে গোঁ-গোঁ শব্দ কানে আসতে লাগল। ক্রমে সে শব্দ বেড়ে চলেছে। মিনিট কয়েকের মধ্যে শোরগোল পড়ে গেল। বৃদ্ধ শ্বাস নিতে পারছেন না। তড়িঘড়ি অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। ওষুধপত্র নিয়ে কন্যা এক পাশে দাঁড়িয়ে আতঙ্কে কেঁদে চলেছেন। কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। জানা গেল, কিছু দিন আগেই বেঙ্গালুরুতে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে তাঁর। তার পর সবই ঠিক ছিল। কিন্তু বিমানে ওঠার পরই হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছে। দাঁতে দাঁত ঠেকে গিয়েছিল, নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না, বুকেও যন্ত্রণা হচ্ছিল। তবে বাকি রাস্তা কোনও মতে অক্সিজেনের সাপোর্ট দিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হয় নিরাপদে। কলকাতায় নেমে চটজলদি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু মাঝআকাশ থেকে তাঁকে সুস্থ অবস্থায় মাটিতে নামানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।
বিমানে ওঠার পরই এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হতে পারে? আমেরিকাবাসী হার্টের চিকিৎসক ডিমিট্রি ইয়ারানভের সাম্প্রতিক এক পোস্টে তারই উত্তর মিলল। দেখা গেল, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে। তাই সতর্কতা খুবই জরুরি। তিনি লিখছেন, ‘‘অনেকেরই ধারণা, বিমানযাত্রা মানেই কয়েক ঘণ্টা চুপচাপ বসে থাকা। শান্ত হয়ে, চিন্তামুক্ত থেকে। কিন্তু যাঁদের হার্ট আগে থেকেই দুর্বল, তাঁদের জন্য আকাশপথে যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।’’
হার্টের রোগীরা সতর্ক হোন।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, তাঁর কাছে এমন অনেক রোগী আসেন, যাঁরা মাটিতে থাকা অবস্থায় সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করছিলেন। কিন্তু উড়ানের সময়ে বা নামার এক-দু’দিনের মধ্যেই শরীর ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বুকে অস্বস্তি বা হৃৎস্পন্দনের ছন্দ কেটে যাওয়ার মতো সমস্যা টের পেয়েছেন। ডিমিট্রি লিখছেন, ‘‘এর কারণ একাধিক। বিমানের কেবিনে চাপের ওঠানামা হয়, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে, দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরের নড়াচড়া সীমিত থাকে, শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি হয়, তার উপর মানসিক চাপ। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হৃদ্যন্ত্রকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। একটি সুস্থ হার্ট এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যে হার্ট ধীরে ধীরে সেরে উঠছে বা আগে থেকেই দুর্বল, তাকে সেই ভারসাম্যের জন্য লড়াই করতে হয়।’’
তাঁর বক্তব্য, যদি সম্প্রতি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, স্টেন্ট বা বাইপাস বসে থাকে, বা হৃৎস্পন্দনের ছন্দে সমস্যা থাকে, তা হলে বিমানে চেপে যাতায়াত করার বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। হার্ট ফেল হওয়ার সমস্যা বা অ্যানজিনা, ভাল্ভের অসুখ, ফুসফুসজনিত রক্তচাপ বা জন্মগত হার্টের অসুখ থাকলেও সতর্ক থাকা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ, আতঙ্কের প্রয়োজন নেই, তবে সমস্ত তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া দরকার।
যে রোগীদের হার্ট প্রতিস্থাপন হয়েছে, তাঁদের চিকিৎসা করার সময়ে ডিমিট্রি বলেন, উড়ানের আগে প্রস্তুতি নিতে হবে। জেনে নিতে হবে, কী কী সঙ্গে রাখবেন, কখন নিজের সমস্যার কথা জানাবেন, কোন লক্ষণকে গুরুত্ব দেবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ, নিরাপদে যাত্রা করা, জীবনকে উপভোগ করা, আর যে হার্টকে বাঁচিয়ে রাখা, সুরক্ষিত রাখাই আপনার মূল উদ্দেশ্য। আপনার হার্ট সকলের মতো নয়। তাই যাত্রার আগে পরিকল্পনার প্রয়োজন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া দরকার। তা হলেই সফর সুন্দর ও দুশ্চিন্তামুক্ত হবে।