(বাঁ দিকে) তিন পাখির যাত্রাপথ। খুদে সেই আমুর বাজ (ডান দিকে) ছবি: এক্স।
ডানায় ভর করে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর থেকে সুদূর আফ্রিকা মহাদেশের এক দেশে পাড়ি— তাও আবার মাত্র পাঁচ দিনে! এমনই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাল তিন খুদে আমুর বাজ। মণিপুরের তিন খুদে আপাপাং, আলাং ও আহু-র এ হেন কীর্তি দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে পক্ষীবিশারদদের। শুধু ভারতে নয়, সাড়া পড়ে গিয়েছে সারা বিশ্বের ওয়াকিবহাল মহলেও।
পরিযায়ী তিন আমুর বাজপাখির এই নজির গড়ার কথা সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন আইএএস আধিকারিক সুপ্রিয়া সাহু। তিনি লিখেছেন, ‘‘বড়দিনের আলো যখন আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে, তখন আমুর বাজ আপাপাং উড়ে বেড়াচ্ছে জিম্বাবোয়ের হারারেতে! ও যেন আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, শহরজীবন এবং প্রকৃতি কত ওতপ্রোত ভাবে জড়়িয়ে।’’
মণিপুরের আপাপাং, আলাং আর আহু স্যাটেলাইট-ট্যাগ পরানো তিন আমুর বাজ। এদের মধ্যে আপাপাং গত নভেম্বরে এক উড়ানে ছ’দিনে ৬,১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ভারত থেকে যাত্রা শুরু করে আরব সাগর পেরিয়ে একেবারে সুদূর আফ্রিকার কেনিয়ায় পৌঁছে গিয়েছিল সে, মাঝে একবারও না থেমে! এখনও পর্যন্ত এক উড়ানে দীর্ঘতম যাত্রার রেকর্ড রয়েছে তারই ঝুলিতে। এখন সে রয়েছে জিম্বাবোয়ের আকাশে।
তিন আমুর বাজের যাত্রাপথ। আপাপাং যে পথ ধরে গিয়েছে, ছবিতে তা কমলা রঙের সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। হলুদ আর লাল রঙে দেখানো হয়েছে যথাক্রমে আলাং ও আহুর যাত্রাপথ। ছবি: এক্স।
আলাং আর আহুও কম যায় না! বয়সে সব চেয়ে ছোট আলাংও গত মাসে ৫,৬০০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল কেনিয়া। মাঝে অবশ্য জিরিয়ে নেওয়ার জন্য দু’বার থেমেছিল তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রে। আর আহু? মণিপুর থেকে শুরু করে বাংলাদেশে খানিক বিরতি নেওয়ার পর ফের উড়তে শুরু করেছিল সে। তার পর অবশ্য আর থামেনি আহু। আরব সাগর পেরিয়ে প্রায় ৫,১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সে পৌঁছে গিয়েছিল সোমালিয়ায়।
আমুর বাজপাখি। বাজের দুনিয়ায় সব চেয়ে খুদে প্রজাতি এরাই। প্রতি বছর প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাইবেরিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা যায় পরিযায়ী এই পাখির দল। ফেরেও একই পথে। মাঝে নাগাল্যান্ডের ওখা, মণিপুরের তামেংলং এবং অসমের ডিমা হাসাও জেলায় বিশ্রাম নেয় তারা। কিন্তু সংরক্ষণের সব চেষ্টার পরেও পরিযায়ী আমুর বাজের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমছে। তাই চলতি দশকে আমুর বাজের স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং করা শুরু করেছে নাগাল্যান্ড ও মণিপুর বন দফতর। সরকারি উদ্যোগে নিষিদ্ধ হয়েছে আমুর শিকারও।