মিড-ডে মিল দেওয়া হয়, দেশে এমন স্কুলের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে কমেছে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেয়, এমন স্কুলের সংখ্যা কমেছে দেশে। রাজ্যসভায় সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। ২০২০-২১ সালে মিড-ডে মিল দেয়, দেশে এমন স্কুলের সংখ্যা ছিল ১১.১৯ লক্ষ। ২০২৪-২৫ সালে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ১০.৩৫ লক্ষ। অর্থাৎ, পাঁচ বছরে স্কুলের সংখ্যা কমেছে ৮৪ হাজার ৪৫৩। শতকরা হিসাবে ৭.৫ শতাংশ। সরকারের পেশ করা হিসাবে দেখা গিয়েছে, ওই পাঁচ বছরে মিড-ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কমেছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে। পশ্চিমবঙ্গে ২০২০-২১ সালে এই স্কুলের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৯৪৫। ২০২৪-২৫ সালে তা কমে হয়েছে ৮১ হাজার ৭৮৯। এই পাঁচ বছরে কমেছে ২ হাজার ১৫৬। সেখানে উত্তরপ্রদেশে ওই পাঁচ বছরে মিড-ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা কমেছে প্রায় ২৬ হাজার।
প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ (পিএম পোষণ) প্রকল্পে টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারের সঙ্গে মিলে সেই প্রকল্প কার্যকর করা হয়। প্রকল্পের অধীনে দেশের সব সরকার এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে বাল বাটিকা (প্রথম শ্রেণির পূর্বে) এবং প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের দিনে এক বার রান্না করে গরম খাবার দেওয়া হয়। রাজ্যসভায় আপের সাংসদ সঞ্জয় সিংহ এই মিড-ডে মিল নিয়ে প্রশ্ন করেন। তার জবাবে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী জয়ন্ত চৌধরি তথ্য প্রকাশ করেন। তাতে দেখা গিয়েছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২১-২২ সালে স্কুলের সংখ্যা কমেছে ৩৫ হাজার ৫৭৪। ২০২০-২১ সালে মিড-ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা ছিল ১১.১৯ লক্ষ। ২০২১-২২ সালে তা কমে হয়েছে ১০.৮৪ লক্ষ। এক বছরে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের সংখ্যা ৩.১৮ শতাংশ কমেছে। প্রসঙ্গত, ওই বছর চলেছিল অতিমারি। অতিমারির সময়ে শুধু উত্তরপ্রদেশেই বন্ধ হয়েছিল ২৫,১৯৭টি স্কুল। ওই বছরে বাংলায় একটি স্কুলও বন্ধ হয়নি।
তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে গোটা দেশে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের সংখ্যা কমেছে ৭ হাজার ৬০৪ (০.৭ শতাংশ)। ২০২৩-২৪ সালে এই স্কুলের সংখ্যা দেশে কমেছে ৯ হাজার ৫০৯ (০.৮৮ শতাংশ)। ২০২০-২৫ সালে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের সংখ্যা কমেছে ৩১ হাজার ৭৬৬ (২.৯৮ শতাংশ)।
২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ সালে, পাঁচ বছরে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের সংখ্যা সবচেয়ে কমেছে উত্তরপ্রদেশে। ২০২০-২১ সালে উত্তরপ্রদেশে ওই স্কুলের সংখ্যা ছিল ১.৬৭ লক্ষ। ২০২৪-২৫ সালে তা কমে হয়েছে ১.৪১ লক্ষ। ২৫ হাজার ৩৬১টি সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুল বন্ধ হয়েছে রাজ্যে। আর এক বিজেপিশাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশে ওই পাঁচ বছরে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের সংখ্যা কমেছে ২৪ হাজার ৭০৪। ছিল ১.১২ লক্ষ। পাঁচ বছর পরে হয়েছে ৮৮ হাজার ২০৪। অসমে ওই পাঁচ বছরে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের সংখ্যা কমেছে ৯ হাজার ৩২১। পাঁচ বছরে গোটা দেশে ওই স্কুল বন্ধ হয়েছে ৮৪ হাজার ৪৫৩। তার মধ্যে বিজেপিশাসিত তিন রাজ্যে বন্ধ হয়েছে ৫৯ হাজার ৪০০ সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুল।
কেন সেই স্কুলগুলি বন্ধ হয়েছে, তা স্পষ্ট করে জানাননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবে তিনি জানিয়েছেন, শিশুদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনগুলির। বছরে প্রায় ২২০ দিন এই খাবার দেওয়া হয় সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে। দেশে ১০.৩৫ লক্ষ স্কুলে ১১ কোটি পড়ুয়ার নাম নথিভুক্ত রয়েছে। প্রতিদিন এই খাবার খায় প্রায় সাড়ে আট কোটি শিশু। গত এপ্রিলে মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে মাথাপিছু বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য প্রতি দিন মাথাপিছু বরাদ্দ ৬.১৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.৭৮ টাকা করা হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য প্রতিদিন মাথাপিছু বরাদ্দ ৯.২৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০.১৭ টাকা করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পিএম পোষণ প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয় ১২ হাজার ৪৬৭.৩৯ কোটি। পরে তা ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। ২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ হাজার ৪২১.৯৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।