SIR Debate in Parliament

নির্বাচনী প্রধান বাছাইয়ে কেন প্রধান বিচারপতি বাদ? সংসদে তিন প্রশ্ন রাহুলের, ভোটচুরির অভিযোগ তুললেন আবারও

নয়া আইন অনুযায়ী, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত এক জন মন্ত্রী। ওই প্যানেল নিয়েই প্রশ্ন তুললেন রাহুল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:২৯
Rahul Gandhi arise three questions for government in Lok Sabha debate

লোকসভায় এসআইআর আলোচনায় কংগ্রেস সাংসদ তথা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

নির্বাচনী সংশোধন প্রক্রিয়া (এসআইআর) নিয়ে লোকসভার আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। কেন্দ্রের সামনে তিনটি প্রশ্ন তুলে নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলেন রাহুল। তাঁর প্রশ্ন, কেন মোদী সরকার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারের নিয়োগের কমিটি থেকে দেশের প্রধান বিচারপতিকে (সিজেআই) বাদ দিল?

Advertisement

এসআইআর এবং নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে রাহুলের ভাষণে উঠে এসেছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। সেই সঙ্গে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কেন্দ্রের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন সিজেআই-কে নির্বাচন প্যানেল থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? আমরা কি তাঁকে বিশ্বাস করি না?’’

নয়া আইন অনুযায়ী, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত এক জন মন্ত্রী। কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটির বৈঠকে গৃহীত নাম যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনিই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। সেই আইন নিয়ে প্রথম থেকেই সরব কংগ্রেস। রাহুলের দাবি, কমিটিতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসাবে রয়েছেন তিনি। বাকি দুই সদস্য প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই কমিটিতে তিনি একা বিরোধী পক্ষের। ফলে তাঁর মতের গুরুত্ব থাকে না।

রাহুলের দ্বিতীয় প্রশ্নও মোদী জমানায় আনা এক আইনকে কেন্দ্র করে। কংগ্রেস নেতা সেই আইনের কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনও নির্বাচন কমিশনারকে তাঁদের সরকারি ক্ষমতাবলে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য কেন শাস্তি দেওয়া যাবে না? ২০২৩ সালের ওই আইনের ১৬ নম্বর ধারায় নির্বাচন কমিশনারদের নেওয়া সিদ্ধান্তকে ‘সুরক্ষা’ দেওয়া হয়েছে।

রাহুলের দাবি, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বিভিন্ন নির্বাচনের দিন ক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর সূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক করছেন। কেন এমন করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস সাংসদ। তিনি এ-ও জানান, ভোটার জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে তাঁর উদ্বেগে কমিশন কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশন আমার প্রশ্নের কোথাও কোনও উত্তর দেয়নি।’’ এ ছাড়াও, ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ নিয়ে আইনের কথাও উল্লেখ করেন রাহুল। তাঁর প্রশ্ন, কেন আইনে কমিশনকে ৪৫ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করার অনুমতি দেয়? এর প্রয়োজনীয়তা কী?

শুধু প্রশ্নই তোলেননি রাহুল একই সঙ্গে নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে চারটি দাবিও জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ভোটের অন্তত এক মাস আগে সব দলকে মেশিন পড়তে পারবে এমন ভোটার তালিকা দেওয়া হোক। সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করার অনুমতি দেওয়া আইন প্রত্যাহারের দাবিও জানান রাহুল। পাশাপাশি, কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়ার আইন তুলে নেওয়ার কথা বলেন তিনি। এ ছাড়াও, রাহুলের দাবি, ‘‘ইভিএমের মধ্যে কী কী রয়েছে, তা আমাদের বিশেষজ্ঞদের দেখতে দিন। সকলে জানান।’’ রাহুল মনে করেন, ইভিএমের মাধ্যমে ভোটচুরি করছে বিজেপি।

সংসদেও ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ তোলেন রাহুল। তাঁর অভিযোগ, বিহারে এসআইআরের পরেও ভোটার তালিকায় ১.২ লক্ষ ‘ডুপ্লিকেট’ ছবি-নাম থেকে গিয়েছে। এ ভাবেই মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের ভোটে জিতেছে বিজেপি। রাহুলের দাবি, ‘‘ভোটচুরির থেকে বড় কোনও দেশবিরোধী কাজ হয় না।’’ সংসদেও তিনি সেই ব্রাজিলের মডেলের কথা তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘হরিয়ানার ভোটার তালিকায় ব্রাজিলের এক জন মডেলের ছবি ২২ বার ব্যবহার করা হয়েছে। হরিয়ানার ভোটে চুরি করা হয়েছে। আমি বার বার এই কথা বলেছি। কিন্তু কমিশন আমার কথার কোনও উত্তর দেয়নি।’’

এসআইআর সংস্কারের কাজে কমিশনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। লোকসভায় আলোচনায় মঙ্গলবার কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি দাবি করেন, এসআইআর করার জন্য কমিশনের কোনও আইনি অধিকার নেই। লোকসভায় এমনটাই দাবি করলেন মণীশ তিওয়ারি। তিনি আরও বলেন, “ভোটদানের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছরে করে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী সংস্কার করেছিলেন রাজীব গান্ধী।” এ ছাড়াও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের বাছাইয়ের জন্য বর্তমানে তিন সদস্যের যে প্যানেল রয়েছে, তাতে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা এবং দেশের প্রধান বিচারপতিকেও যুক্ত করার প্রস্তাব দেন মণীশ।

Advertisement
আরও পড়ুন