Lalan Singh in Parliament

কল্যাণের পাল্টা ললন! এনডিএ সাংসদের বিতর্কিত মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আসরে তৃণমূল, ‘সত্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন বিজেপির

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বিতর্কের জবাবে এ বার এনডিএ-র শরিক জেডিইউয়ের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ললন সিংহের মন্তব্য নিয়ে আসরে নামল তৃণমূল। তবে বিজেপি শরিক দলের নেতার সমালোচনার পথে এখনও হাঁটেনি। বরং তৃণমূলের করা পোস্টের ‘সত্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ১৩:৪৯
TMC uses JDU MP Lalan Singh controversy remark in Parliament

(বাঁ দিকে) তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জেডিইউ সাংসদ ললন সিংহ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাক অধিকৃত কাশ্মীর সম্পর্কে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শোরগোল রাজ্য-রাজনীতিতে। সেই আবহে এ বার তৃণমূলও একটি ভিডিয়ো নিয়ে আসরে নামল। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংক্রান্ত আলোচনায় এনডিএ-র শরিক জেডিইউয়ের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ললন সিংহের দু’টি মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে নিশানা করতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল। শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেসও ললনের ভাষণের একটি অংশ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে আক্রমণ শানিয়েছে। তবে বিজেপি ওই ভিডিয়োর সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।

Advertisement

কী নিয়ে বিতর্ক? পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং তার জবাবে ভারতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে লোকসভায় আলোচনার সময়ে বিরোধীদের জবাব দিতে গিয়ে ললন সন্ত্রাবাদীদের ‘শহিদ’ এবং কুখ্যাত জঙ্গি নেতা মাসুদ আজ়হারকে ‘সাহেব’ বলে বিতর্কে জড়ান। তিনি তাঁর ভাষণে কংগ্রেস আমলে ভারতে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ টেনে আক্রমণ শুরু করেন। তিনি বোঝাতে চান তৎকালীন ইউপিএ সরকার কী ভাবে জঙ্গিদমনে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি, নরেন্দ্র মোদী জমানায় সন্ত্রাসদমনে কী ভাবে সাফল্য এসেছে, তার ব্যাখ্যাও দেন ললন। ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জেডিইউ সাংসদ বলে বসেন, ‘‘শত শত সন্ত্রাসবাদী শহিদ...’’! তার পরেই তিনি বোঝাতে চান, ভারতের প্রত্যাঘাতে কী ভাবে মাসুদ আজ়হার, ২৬/১১ হামলার মূল চক্রী হাফি‌জ় সইদেরা ‘কেঁদেছিলেন’। সেই কথা বলতে গিয়ে আজ়াদকে ‘সাহেব’ বলে উল্লেখ করেন।

ললনের ভাষণের ২০ সেকেন্ডের এই অংশ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তৃণমূল। তাদের দাবি, এ হেন মন্তব্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর গালে চড় মারার সমান। শুধু তা-ই নয়, পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি অপমানও! তৃণমূলের দাবি, ‘‘যদি কোনও বিরোধী সাংসদ এই ধরনের মন্তব্য করতেন, তবে বিজেপির আইটি সেল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনত। কিন্তু যেহেতু এটি তাদের মিত্র বলেছেন, তাই নীরব রয়েছে!’’ একই দাবি তুলেছে কংগ্রেসও। ললনের ভিডিয়ো পোস্ট করে বিজেপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাতশিবির।

তবে বিজেপি শরিক দলের নেতার সমালোচনার পথে এখনও হাঁটেনি। বরং তৃণমূলের করা পোস্টের ‘সত্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজ‍্য বিজেপির সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুয়ো পোস্টের যে জবাব গতকাল (সোমবার) দিল্লি পুলিশ দিয়েছে, তার পরে তৃণমূলের কোনও পোস্টকে আর গুরুত্ব দেওয়ার কোনও অর্থই হয় না। তৃণমূলের এই সব কথা নিয়ে আলোচনাকে আমরা অর্থহীন মনে করছি।’‍’ এখানেই থামেননি শমীক। সোমবার কল্যাণের ভাষণ প্রসঙ্গ ফের টেনে এনে বলেছেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঘটনা গত কাল ঘটিয়েছেন, তা ভারতের ইতিহাসে প্রথম বার ঘটল। এই প্রথম কোনও ভারতীয় রাজনীতিক সংসদে দাঁড়িয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ‘আজাদ কাশ্মীর’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর চেয়ে লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয় আর কী হতে পারে! সে সব চাপা দিতে তৃণমূল আবার নানা ভুয়ো তত্ত্ব সমাজমাধ‍্যমে খাড়া করার চেষ্টা করছে।’’

বঙ্গ বিজেপির আর এক সাংসদ বলছেন, ‘‘ললন সিংহের বক্তৃতার একটা অংশকে অদ্ভুত ভাবে কেটে তৃণমূল পোস্ট করেছে, যাতে শেষ শব্দটি পুরোপুরি উচ্চারিত হওয়ার আগেই ভিডিয়ো ক্লিপটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটাতেও কোনও কারসাজি থাকতে পারে। তাই পুরোটা আবার না শুনে তৃণমূলের বক্তব্যের উপরে ভরসা করার কোনও প্রশ্নই নেই।’’

উল্লেখ্য, সোমবার লোকসভায় দ্বিতীয়ার্ধে বলতে ওঠেন কল্যাণ। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংক্রান্ত চর্চায় ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’কে (পিওকে) ‘পাকিস্তান শাসিত আজ়াদ কাশ্মীর’ বলে কল্যাণ উল্লেখ করেন। কল্যাণ প্রথমে বললেন ‘পাকিস্তান শাসিত’। তার পরে বললেন ‘আজ়াদ’। কল্যাণের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সোমবার বিকেল থেকেই তৃণমূলকে আক্রমণ করতে শুরু করে বিজেপি। তাদের দাবি, ‘‘তৃণমূলের দয়ায় আজ পাকিস্তান উৎসব করছে।’’ কল্যাণ-বিতর্কের জবাবে এ বার পাল্টা ললনের মন্তব্য নিয়ে আসরে নামল তৃণমূল।

Advertisement
আরও পড়ুন