সংসদে তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য ‘হাতিয়ার’ হল বিজেপির। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংক্রান্ত আলোচনায় কাশ্মীর প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণের ভাষণের সেই অংশ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে আক্রমণ শুরু করল বিজেপি। পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ‘আজাদ’ (স্বাধীন) বলে লোকসভায় উল্লেখ করলেও পরে সে অবস্থানে অনড় থাকতে পারেননি শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। তাঁর দাবি, বিজেপি তাঁর তোলা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না বলে ‘ভুল’ ধরছে।
সোমবার লোকসভায় দ্বিতীয়ার্ধে বলতে ওঠেন কল্যাণ। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংক্রান্ত চর্চায় ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’কে (পিওকে) ‘পাকিস্তান শাসিত আজ়াদ কাশ্মীর’ বলে কল্যাণ উল্লেখ করেন। ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’কে ভারত কখনওই ‘পাকিস্তানের অংশ’ হিসেবে বা ‘স্বাধীন’ (আজ়াদ) হিসেবে গণ্য করে না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নয়াদিল্লির প্রতিনিধিরা বার বার জানিয়েছেন যে, কাশ্মীর প্রসঙ্গে অন্য কারও মধ্যস্থতা ভারত বরদাস্ত করবে না এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কথা হলে শুধু পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছেড়ে পাকিস্তানের বেরিয়ে যাওয়া নিয়েই আলোচনা হবে। এমনকি জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য বরাদ্দ আসনগুলি এখনও খালি রেখেছে ভারত। এ হেন ভূখণ্ডকে ‘পাকিস্তান অধিকৃত’ না বলে কল্যাণ প্রথমে বললেন ‘পাকিস্তান শাসিত’। তার পরে বললেন ‘আজ়াদ’।
কল্যাণের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে গোটা তৃণমূলকেই আক্রমণ করেছে বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আজ তৃণমূলের দয়ায় পাকিস্তান উৎসব করছে। ‘অপারেশন সিঁদুরে’ ধরাশায়ী হওয়ার পরও পাকিস্তান তৃণমূলের মতো এক অদ্ভুত মিত্র পেয়েছে। ভারতের সংসদে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন, তা অকল্পনীয়!’’
কল্যাণের ভাষণের আরও দু’টি অংশও তুলে ধরেছে বিজেপি। একটি অংশে পহেলগাঁওয়ের হামলাকারীদের রোখার ক্ষেত্রে বিএসএফ এবং সিআইএসএফের ‘অক্ষমতা’র কথা শ্লেষের সুরে বলতে শোনা যাচ্ছে কল্যাণকে। আর একটি অংশে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ‘সক্ষমতা’ সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করছেন তিনি। সেই সব ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে তুলে ধরে বিজেপি নেতা মালবীয়ের তোপ, ‘‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয়। এটা লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়! তৃণমূল কংগ্রেস ভারতের পক্ষে কথা বলছে, না কি পাকিস্তানের প্রচার চালাচ্ছে?’’
বিজেপির এই আক্রমণ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডট কমকে কল্যাণ বলেছেন, ‘‘আমি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের কথাই বলতে চেয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেকেই অনেক কিছু নিয়ে ভুল ধরতে পারেন। তবে আমাদের গোটা বক্তৃতার অভিমুখই ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কেন পিওকে দখল করা গেল না? কী ভাবে চার জন জঙ্গি ঢুকে পড়ল? গোয়েন্দা ব্যবস্থা কী করছিল? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করছিলেন? এই প্রশ্নগুলির জবাব বিজেপির কাছে নেই। তাই এই সব বলছে।’’