ছবি: সংগৃহীত।
জয়শঙ্করের ভাষণের মাঝে বিরোধীরা হইহট্টগোল শুরু করায় উঠে দাঁড়িয়ে তোপ দাগেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের বিদেশমন্ত্রীর উপর ভরসা নেই। ভরসা আছে অন্য দেশের উপর।’’ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন শাহ। দুপুর ১২টায় তাঁর ভাষণ শুরু হতে পারে।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ অপারেশন সিঁদুরেই থেমে থাকবে না। দেশবাসীর সুরক্ষার স্বার্থে যা যা করণীয়, তা করা হবে।’’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক বার দাবি করেছেন, তাঁর হস্তক্ষেপেই ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি সম্ভব হয়েছে। দাবি, বাণিজ্য করা হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাগাতার কেন্দ্রকে বিঁধেছে বিরোধীরা। তা নিয়ে সোমবার সংসদে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। তার পর ১৭ জুন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনও কথা হয়নি। তবে ১০ মে আমরা একটা ফোন পেয়েছিলাম। আমাদের জানানো হয়েছিল, পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে রাজি। আমরা বলেছিলাম, ডিজিএমও চ্যানেলে এ কথা বলুক পাকিস্তান। আমেরিকার সঙ্গে কোনও আলোচনাতেই বাণিজ্য নিয়ে কথা হয়নি।’’
অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র সাংসদ রামশঙ্কর রাজভর বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ের ঘটনার দেশবাসী এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে, তাঁরা অপারেশন তন্দুর চেয়েছিলেন। অপারেশন সিন্দুর (সিঁদুর) নয়। অপারেশন তন্দুর মানে হামলাকারী জঙ্গিদের তন্দুর বানিয়ে দেওয়া!’’ পহেলগাঁওয়ের ঘটনার ১৭ দিন পর কেন কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ করল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন এসপি সাংসদ। তাঁর সংযোজন, ‘‘অপারেশন সিঁদুরে যে ১০০ জনের বেশি জঙ্গিকে খতম করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কি কেউ পহেলগাঁওয়ের হামলাকারী? এটাই আসল প্রশ্ন।’’
একটি প্রশ্নেই সরকারকে বিঁধে চলেছে বিরোধীরা। গৌরব গগই, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়, ইমরান মাসুদের পর এ বার নির্দল সাংসদ পাপ্পু যাদবও প্রশ্ন তুললেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা ঢুকল কী ভাবে? কেন এখনও তাদের ধরা গেল না?’’
কংগ্রেস সাংসদ ইমরান মাসুদ বলেন, ‘‘এক ঘণ্টার ভাষণেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলতে পারলেন না, অপারেশন সিঁদুরের মধ্য দিয়ে আমরা কী পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচিত, বিষয়টি সংসদকে জানানো।’’
বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীবরঞ্জন সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় সেনার কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন গৌরব গগই। কিন্তু উনি ভারতীয় সেনার সাহসিকতা নিয়ে একটি কথাও বললেন না। পাকিস্তান নিয়ে একটি শব্দ খরচ করলেন না উনি। আপনারা ভোটের রাজনীতি করুন, প্রধানমন্ত্রীর দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবেন।’’
সংসদে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী ভাবে চার জঙ্গি ভারতে ঢুকে এত লোককে মেরে পাকিস্তানে চলে গেল? কোথায় ছিল বিএসএফ, সিআরপিএফ? কোথায় ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অমিত শাহ)? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন!’’ পাশাপাশিই কল্যাণ বলেন, ‘‘১২৫ কোটি ভারতবাসী ভারতীয় সেনার সঙ্গে রয়েছেন।’’
ট্রাম্প প্রশ্নেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধেছেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে ভুল বলছেন, সেটা কেন এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বললেন না প্রধানমন্ত্রী? মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে দাঁড়ালেই আপনার উচ্চতা পাঁচ ফুট হয়ে যায় আর ৫৬ ইঞ্চির ছাতি ৩৬ ইঞ্চি হয়ে যায়।’’
গগই বলেন, ‘‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৬ বার বলেছেন যে, তাঁর মধ্যস্থতাতেই ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি সম্ভব হয়েছে। এ-ও বলেছে যে, পাঁচ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে। রাজনাথ সিংহ জানান, কতগুলো যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে?’’
গগই বলেন, ‘‘১০০ দিন কেটে গেল, পহেলগাঁওয়ের পাঁচ জঙ্গিকে এখনও ধরতে পারেনি সরকার। এর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নৈতিক দায় নেওয়া উচিত। আপনারাই বলছেন, পাকিস্তান আবার হামলা চালাতে পারে। যদিও তা-ই হয়, তা হলে অপারেশন সিঁদুর কী ভাবে সফল বলা হচ্ছে? আমরা কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম না? কেন রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস হল, তার জবাব দেওয়া হোক।’’
ভারত ‘চাপে’ পড়ে অপারেশন সিঁদুর অভিযান বন্ধ করেছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন এবং ভুল বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘যে মুহূর্তে ভারতের লক্ষ্যপূরণ হয়ে গিয়েছে, সেই মুহূর্তে বন্ধ করা হয়েছে সিঁদুর অভিযান।’’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘ভারত পাকিস্তানের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আক্রমণ করার পরেই ওরা হার স্বীকার করেছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তান যদি আবার এ রকম কিছু করে, আবার অপারেশন শুরু হবে।’’
পরে বলতে উঠে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ পাল্টা প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র যা ইতিমধ্যেই বলে ফেলেছে, তা-ই আবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বললেন। কিন্তু দেশবাসীকে উনি এটা বললেন না যে, কী ভাবে পহেলগাঁওয়ে পাঁচ পাকিস্তানি জঙ্গি ঢুকেছিল। ’’
সংসদে সিঁদুর অভিযান নিয়ে আলোচনার ঠিক আগে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের একটি মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চিদাম্বরমের বক্তব্য, এখনও জঙ্গিদের পরিচয় জানতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এ দিকে তারা বারবার দাবি করেছে, জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে এসেই হামলা চালিয়েছিল! তার প্রমাণ কোথায়, সেই প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতা। তিনি আরও জানান, ওই জঙ্গিরা হয়তো ভারতেরই নাগরিক। এর পরেই চিদম্বরমকে আক্রমণে নামেন বিজেপির বেশ কিছু নেতা। সোমবার চিদাম্বরম অবশ্য বলেছেন, তাঁর বক্তব্য কাটছাঁট করে দেখিয়ে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি। সংসদে রাজনাথও বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান বছরের পর বছর ধরে জঙ্গিদের মদত দিয়ে এসেছে। অপারেশন সিঁদুরের লক্ষ্য ছিল, সেই জঙ্গিদের খতম করা।’’ পরে গৌরব তাঁর ভাষণে বুঝিয়ে দিলেন, চিদাম্বরমের মন্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, তা অনর্থক। দল হিসাবে কংগ্রেস মনে করে, জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকেই এসেছিল।
বিরোধীর হইহট্টগোলের মধ্যেই সোমবার দুপুর ২টোয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথের ভাষণ দিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বলতে উঠে রাজনাথ বললেন, ‘’২২ মিনিটেই কাজ অভিযান শেষ করেছিল সেনা।’’
সংসদে রাজনাথ জানান, ভারত যা পদক্ষেপ করেছে, তা সম্পূর্ণ আত্মরক্ষার্থে। প্ররোচনা দেওয়া ভারতের উদ্দেশ্য ছিল না। তার পরেও পাকিস্তান গত ১০ মে, রাত দেড়টা নাগাদ ভারতে ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ভারত তা প্রতিহত করেছে। ভারত এস ৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করতে।
বিরোধীদেরও একহাত নেন রাজনাথ। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের কয়েক জন জিজ্ঞাসা করছিলেন, দেশের কতগুলো যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে? কিন্তু ওঁরা কখনও এই প্রশ্ন করে না যে, শত্রুপক্ষের কটা যুদ্ধবিমান আমাদের সেনা ধ্বংস করেছে।’’
সোমবার, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার দিনে, সকালে দফায় দফায় উত্তাল হয় সংসদ। বিরোধীদের হইহট্টগোলে লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি রাখা হয়েছিল দুপুর ২টো পর্যন্ত। সেইমতো দুপুর ২টোর পরেই আলোচনা শুরু হয়।
সাংসদে বাদল অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহ গোটাটাই ভেস্তে গিয়েছিল বিরোধীদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জেরে। সোমবারও একই ছবি দেখা গেল। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার ঘটনার পর ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুর নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছিল বিরোধীরা। স্থির হয়, সোমবার লোকসভায় ১৬ ঘণ্টার আলোচনা হবে। পর দিন, মঙ্গলবার আলোচনা হবে রাজ্যসভায়।
কিন্তু সোমবার লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকেই হইহট্টগোল শুরু করেন বিরোধী সাংসদেরা। কথা ছিল দুপুর ১২টায় রাজনাথের ভাষণ দিয়ে আলোচনার সূচনা হতে পারে। কিন্তু বিরোধীদের হইহট্টগোল দেখে স্পিকার ওম বিড়লা প্রশ্ন করেন, বিরোধীরা সত্যিই আলোচনা চান কি না। তার পরেও হট্টগোল না থামায় অধিবেশন মুলতুবি রাখা হয় দুপুর ১টা পর্যন্ত। তার পরেও বিক্ষোভ না থামায় ২টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি রাখেন স্পিকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy