Fake Embassy in Gaziabad

বিতর্কিত ধর্মগুরু ও সৌদির অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে ছবি! ভুয়ো কূটনীতিক ৩০০ কোটির কেলেঙ্কারিতে যুক্ত বলে ধারণা

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে তুরস্কের নাগরিক সৈয়দ এহসান আলির সঙ্গে ২০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়াও, অন্য আরও দেশে স্বনামে ও বেনামে আর্থিক লেনদেন করেছেন হর্ষ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৬:১৭
Uttar Pradesh police said that Fake embassy in Gaziabad could be linked to 300-crore financial transactions

(বাঁ দিকে) ধৃত হর্ষবর্ধন জৈন এবং বাজেয়াপ্ত হওয়া বিদেশি ঘড়ি, পাসপোর্ট (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আট বছর ধরে ভুয়ো দূতাবাস চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া গাজ়িয়াবাদের হর্ষবর্ধন জৈনের মামলার তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। জেরা করে এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, হর্ষ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। শুধু তা-ই নয়, গত ১০ বছরে ১৬২ বার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন ভুয়ো কূটনীতিক।

Advertisement

গাজ়িয়াবাদের কবিনগর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া করে সেখানে বেশ কয়েকটি দেশের ভুয়ো দূতাবাস তৈরি করে প্রতারণার অভিযোগে গত বুধবার গ্রেফতার হন হর্ষ। সেই ঘটনার তদন্ত করছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তদন্তকারী সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুয়ো দূতাবাসের আড়ালে চাকরিচক্র চালাতেন হর্ষ। হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাচার করতেন বিদেশে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন হর্ষ।

বুধবার গাজ়িয়াবাদের কবিনগর এলাকার একটি বিলাসবহুল বাড়িতে হানা দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) নয়ডা ইউনিট। দোতলা ওই বাড়ির বাইরে ছিল ভারত এবং ‘ওয়েস্টার্কটিকা’র পতাকা। উল্লেখ্য, ‘ওয়েস্টার্কটিকা’ আন্টার্কটিকা মহাদেশের এক ক্ষুদ্র দেশ। যদিও কোনও বড় দেশের স্বীকৃতি পায়নি দেশটি। তবে ওই দেশ দাবি করে, তাদের জনসংখ্যা দু’হাজারের বেশি। যদিও তাঁরা কেউই ওই দেশে থাকেন না!

পুলিশ হর্ষের বাড়ির সামনে থেকে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই সব গাড়ির নম্বরপ্লেটও কূটনীতিকদের গাড়ির মতোই। এ ছাড়াও, ১২টি কূটনৈতিক পাসপোর্টও ওই বাড়ি থেকে খুঁজে পেয়েছেন এসটিএফের সদস্যেরা। পাশাপাশি, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের স্ট্যাম্প-সহ জাল নথি পাওয়া গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দু’টি জাল প্যান কার্ড, বিভিন্ন দেশ এবং কোম্পানির ৩৪টি রবার স্ট্যাম্পও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, হর্ষ সর্বদা নিজেকে এক জন কূটনীতিক হিসাবে পরিচয় দিতেন। ওয়েস্টার্কটিকা তো বটেই, সাবোরগা, পুলভিয়া, লোডোনিয়ার মতো ছোট ছোট দেশের ‘রাষ্ট্রদূত’ বলেও নিজেকে জাহির করতেন হর্ষ।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে তুরস্কের নাগরিক সৈয়দ এহসান আলির সঙ্গে ২০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়াও, অন্য আরও দেশে স্বনামে ও বেনামে আর্থিক লেনদেন করেছেন হর্ষ। তাঁর নামে ভারতে মোট ১২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও, দুবাইতে পাঁচটি, লন্ডনে দু’টি এবং মরিশাসে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে হর্ষের নামে! তদন্তকারীদের মতে, বিদেশি কোম্পানিতে চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়েছেন তিনি!

হর্ষের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানের সময় পুলিশ বিতর্কিত ‘ধর্মগুরু’ চন্দ্রস্বামী এবং সৌদির অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগিরের সঙ্গে তাঁর ছবি খুঁজে পায়। স্বঘোষিত ধর্মগুরু চন্দ্রস্বামী ৮০-৯০ দশকে খুবই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তো বটেই, বহু ব্যবসায়ী থেকে নামকরা মানুষজনের আনোগোনা ছিল চন্দ্রস্বামীর আশ্রমে। পরে আর্থিক অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন চন্দ্রস্বামী। তাঁর আশ্রমে অভিযান চালিয়ে আদনানের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যার জন্য অর্থা জোগান দেওয়ার অভিযোগও ওঠে।

তদন্তে এসটিএফ জানতে পেরেছে, চন্দ্রস্বামীই হর্ষের সঙ্গে আদনান এবং এহসানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। অভিযোগ, এহসানের সঙ্গে মিলে হর্ষ ২৫টি ভুয়ো কোম্পানি খুলেছিলেন। এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমেই আর্থিক লেনদেন চলত। এই এহসান সুইৎজ়ারল্যান্ডের ‘ওয়েস্টার্ন অ্যাডভাইজ়ারি গ্রুপ’ নামে একটি কোম্পানি খুলেছিলেন। এই কোম্পানির কাজ ছিল অর্থের বিনিময়ে ঋণ জোগাড় করে দেওয়া। অভিযোগ, ওই কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা তোলা হয়েছিল। আর এই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এহসানের।

Advertisement
আরও পড়ুন