— নিজস্ব চিত্র।
মোগলাই না চিনা? ডাল-ভাত-ঝোল-চচ্চড়ির বাইরে কোনও এক দিন রেস্তরাঁয় গিয়ে ভাল খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছে হলে ‘কেবিসি’র ঢঙে প্রথমেই যে প্রশ্নখানা উড়ে আসে, তা এটিই। কলকাতার মানুষের সেই আবেগ বুঝেছে শহরের বিরিয়ানি রেস্তরাঁ ‘আর্সালান’ও। এ বার তারাও অতিথিদের একই প্রশ্ন করতে চলেছে। মোগলাই না চিনা?
পার্ক সার্কাসের সাত মাথার মোড়ে দাঁড়ালে যে বিরিয়ানির গন্ধে পথ ভোলার উপক্রম হয়, সেই ‘আর্সালান’ নতুন করে আঁকতে চলেছে তাদের খাদ্য মানচিত্র। সেখানে যতটা লখনউয়ের নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ অনুপ্রাণিত কলকাতার বিরিয়ানি থাকছে, ঠিক ততটাই থাকছে কলকাতার ট্যাংরার ধাঁচের চিনা খাবারদাবার!
আর্সালানের চিনা খাবার। — নিজস্ব চিত্র।
২৩ বছর ধরে শহরের মানুষকে বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছে ‘আর্সালান’। সে খাবারে সুনামও যে কিনেছে সে কথা জানালেন তাদের নতুন রেস্তরাঁর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের নেতা মন্ত্রীরা। মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, জাভেদ আহমেদ খান থেকে শুরু করে সাংসদ মালা রায়, প্রাক্তন বিধায়ক আব্দুল মান্নানেরা জানালেন, আর্সালানের বিরিয়ানি শুধু নিজেরা খান না, আত্মীয় স্বজনদেরও খাওয়ান। আর্সালানের বিরিয়ানির গন্ধের তুলনা টানতে বাবুল আবার গাইলেন, ‘‘ম্যায় শাঁস লেতা হুঁ, তেরি খুশবু আতি হ্যায়...’’ সেই আর্সালান এ বার আনছে চিনা খাবার। কিন্তু বিরিয়ানিতে যারা ভাল, তারা কি চিনা খাবারেও ভাল? নিজেদের জোরের জায়গাটি ছেড়ে বেরোনোর খুব কি দরকার ছিল?
চেনা মোগলাই খানাও থাকছে। — নিজস্ব চিত্র।
২৩ বছর আগে আখতারের হাত ধরে ‘আর্সালান’-এর পথ চলা শুরু হলেও এখন পরবর্তী প্রজন্ম এসেছে ব্যবসায়। আখতারের পুত্র আর্সালান পারভেজ় এডিনবরায় পড়াশোনা করেছেন। ফিরে এসে মন দিয়েছেন পারিবারিক রেস্তরাঁর ব্যবসাতে । তিনি বলছেন, ‘‘চিনা খাবার তো আমরা প্রত্যেকেই ভালবাসি, তাই না?’’ কিন্তু যাঁর নামে বিরিয়ানি রেস্তরাঁর নাম, তিনি নিজেও কি চিনা খাবার বেশি ভালবাসেন? আর্সালান বলছেন, ‘‘শুনেছি ছোটবেলায় আমি বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করতাম না। কিন্তু এখন আমার প্রিয় খাবার বিরিয়ানিই।’’
বিরিয়ানির সঙ্গে আর্সালান পরিবেশন করবে চাউমিনও। — নিজস্ব চিত্র।
তবে আর্সালান জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক অতীতে তাঁদের রেস্তরাঁ চিনা খাবার পরিবেশন না করলেও এক কালে করেছে। বিষয়টা তাদের কাছে খুব নতুন, তা নয়। আর্সালান বলছেন, ‘‘ছেলেবেলায় দেখেছি, রেস্তরাঁয় গিয়ে বিরিয়ানির তুলনায় চিনা খাবার খাওয়ার চলই ছিল বেশি। সেই সময়ে আর্সালানেরই একটি শাখাতে চিনা খাবার পাওয়া যেত। ফলে চিনা খাবার আমাদের কাছে একেবারেই নতুন নয়। বরং এ বার আমরা সেই পুরনো স্বাদ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’
নতুন রেস্তরাঁর উদ্বোধনে আর্সালান পারভেজ়ের (ডান দিকে শেষে) সঙ্গে স-কন্যা মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং আব্দুল মান্নান (বাঁ দিকে প্রথমে)। — নিজস্ব চিত্র।
আর্সালানের যে রেস্তরাঁর চিনা খাবার পাওয়া যেত , সেটির ঠিকানা ২৮, সার্কাস অ্যাভিনিউ। বছর আষ্টেক আগে রেস্তরাঁটি বন্ধ করা হয়। ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করার জন্য। সেখানেই এ বার উদ্বোধন করা হল একটি চারতলা ফাইন ডাইনিং রেস্তরাঁর। যেখানে শুধু খাওয়া দাওয়া নয়, রেস্তরাঁটির প্রতিটি তলের সাজসজ্জাতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, ফাইন ডাইনিং শুধু খাওয়া নয়, একটা অভিজ্ঞতাও। সেই সার কথাকে মাথায় রেখেই সাজানো হয়েছে নতুন রেস্তরাঁ। যার প্রতিটি তলে সাজসজ্জা, ভাবনায় অন্য তলের থেকে আলাদা। আর সেখানেই বিরিয়ানি আর চাউমিনের বন্ধুত্বের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।