জাপানে চুল ধোয়ার নিয়ম। ছবি: সংগৃহীত।
গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে জাপানের যাপন। স্বাস্থ্যকর ও সচেতন জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী সে দেশের নাগরিকেরা। স্বাস্থ্যসচেতন, রূপসচেতন ব্যক্তিদের জন্য তাই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে জাপানি প্রথাগুলি। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নিয়ম-রীতি ছাড়াও সাজসজ্জা, রূপচর্চা, কেশচর্চার প্রতি মনোযোগী তাঁরা। চুল পরিষ্কার ও চুলের যত্নের বিষয়ে জাপানের বিশেষ প্রথা অনুসরণ করতে পারেন।
ব্যস্ত জীবনে শ্যাম্পুর পিছনে খুব বেশি সময় নষ্ট করতে চান না অনেকে। তাই কেউ পার্লার বা সালোঁর উপর ভরসা করেন, কেউ বা চটজলদি বাড়িতে চুল ধুয়ে নেন। কিন্তু জাপানে প্রত্যেকটি ধাপ অতি যত্ন সহকারে পালন করা হয়। তাঁরা চুলের থেকেও মাথার ত্বককে বেশি গুরুত্ব দেন। মাথার ত্বক সুস্থ থাকলে চুল নিজে থেকেই সুন্দর হয়ে উঠবে। ধীরে ধীরে, মন দিয়ে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করাই এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। কেবল মাথা বা চুল পরিষ্কার করাই এখানে আসল নয়, মাথার ত্বককে সুস্থ রাখা, চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দেওয়া আর চুলের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনাই এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য।
যত্ন নিয়ে ধাপে ধাপে চুল ধুতে হবে। ছবি: সংগৃহীত।
ধাপগুলি অচেনা নয়, কিন্তু যে ভাবে সময় নিয়ে, যত্ন নিয়ে মাথা পরিষ্কার করা হয়, তা শেখা উচিত। তাড়াহুড়োয় কোনও ধাপ বাদ দেওয়ার মতো ভুল করেন না কেউ। আপনিও শিখে নিন ধাপে ধাপে।
১. তেল মালিশ
চুল ধোয়ার আগে মাথার ত্বকে অল্প তেল লাগানো হয়। এতে জমে থাকা ময়লা দূর হয়, গোড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। প্রাকৃতিক তেল মাথায় মেখে হাতের আলতো চাপে মাসাজ করতে হয়। ১০ মিনিটের এই মাসাজের ফলে চুলের গোড়া থেকে আগা নরম হয়।
২. শ্যাম্পু মাখা
এর পর চুল ভাল করে ভিজিয়ে নেওয়া হয়। শ্যাম্পু সরাসরি চুলে না দিয়ে আগে হাতে ফেনা তৈরি করা হয়, তারপর সেই ফেনা খুব আলতো করে মাথার ত্বকে লাগানো হয়। শ্যাম্পু মাখার সময়ে মাথার ত্বকে আলতো করে মাসাজ করতে হবে। মাথায় জমে থাকা ময়লা ও অতিরিক্ত তেল বেরিয়ে যায় এই ধাপের ফলে। সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। তার পর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৩. ত্বক মাসাজ
জাপানে সালোঁয় শ্যাম্পু করানোর সময়ে অনেকখানি সময় দিয়ে মাথার ত্বক মাসাজ করানো হয়। কিন্তু আপনি ঘরে এই ধাপ মেনে চলতে পারেন সহজেই। মাসাজ করার জন্য দরকার কেবল একটি ব্রাশ। গোল নরম ব্রাশ দোকান থেকে কিনে ধীরে ধীরে মাথার ত্বক মাসাজ করুন এবং জট ছাড়িয়ে নিন। মাথার তালু, কানের পাশ, মাথার পিছনে মালিশ করে রক্তপ্রবাহ উন্নত করা যায়।
৪. কন্ডিশনার
এর পর চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কন্ডিশনার লাগাতে হবে। তবে মাথার ত্বকে না মেখে চুলে মাখতে হবে। কিছু ক্ষণ রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলের কিউটিকলগুলি নরম হয়, আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং পুষ্টিও জোগায়। ৫ মিনিট রেখে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
৫. লিভ-ইন সিরাম
মাথা ধোয়ার পর নরম তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে জল মুছে নিতে হবে। জোরে জোরে মাথা ঘষলে চুলে ভাঙন ধরতে পারে। তার পর হালকা সিক্ত চুলে সিরাম মেখে নিতে হবে। তাতে জট পড়ার সমস্যা কমে এবং ঔজ্জ্বল্য বাড়ে চুলে। তবে এক-দু’ফোঁটার বেশি সিরাম ব্যবহার করা উচিত নয়।
এ ভাবে চুল ধুলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ভাল হয়, চুলের গোড়া শক্ত থাকে, চুল ছেঁড়া কমে এবং স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে। জাপানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এমনই যত্ন সহকারে চুল ও মাথা পরিষ্কার করেন। নামীদামি পণ্যের তুলনায় পরিষ্কার করার পদ্ধতিতে গুরুত্ব বেশি দেন তাঁরা।